(ছুটিতে গ্রামের বাড়ি গিয়ে ২০/২২ বছর আগের একটুকরো স্মৃতি খুঁজে পাই। সেই স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখতে ক্ষুদ্র এই প্রয়াস। আসরে অনেক দিন আসতে পারিনি বলে সকল কবি বন্ধুদের কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থী।)
জুম্ম নারী পাহাড়ে বাড়ি
প্রকৃতির রাজকন্যা
প্রাণ চঞ্চল চকিত চপল
সর্বাঙ্গে রূপের বন্যা।
ঝর্ণার জল করে টলমল
ছাঁকিয়া ভরিছে ঘটি
দেখে চুপিসারে খানিক পরে
ফিরিয়া চলিল বাটি।
শুধাই হাসিয়া নিকটে আসিয়া
কোথায় তোমার ঘর,
একেলা বিজনে চলো নিরজনে
তোমার কি লাগে না ডর ?
হাসিয়া কুটিকুটি কাটিয়া ভ্রুকুটি
বলে ডর কেন পাব ভাই,
এই পাহাড়েই জন্ম আমার
এখানেই হয়েছে ঠাঁই।
সবুজের মাঝে পাহাড়ের ভাঁজে
আমি ওঠেছি বেড়ে
একেলা বেড়াই খেলা করি তাই
ভয়কে ফেলেছি ঝেড়ে।
তুমি বাপু বল করিয়া ছল
রুদ্ধ করিলে মোর পথ
বাহানা ছেড়ে, বল তাড়া করে
কি তোমার আসল মত ?
বলিলাম, রূপসী, সারাদিন উপসি
পেটে পড়েনিকো কোন দানা
অঞ্জলি ভরে দিবে কিগো মোরে
তোমার জলের ঘটিখানা?
মন আনচান বাঁচিবে পরাণ
তোমার ঘটি জলে
পিপাসা মিটায়ে পড়িব লুটায়ে
শ্যামল তরুছায়া তলে।
অবলা কিশোরী বলে আহা মরি
জলদি পাতো হাত
পান করে জল হওগো শীতল
কলসি করিয়া কাত।
কলসি কাঁখে রেখে আমাকে দেখে
জল ঢালে আর বলে
একেলা পাইয়া মোরে দেখেছ প্রাণ ভরে
মিথ্যা পিপাসার ছলে।
বলিলাম ছি ছি আমি যে হেঁটেছি
ওই সুদূরের পথ
এতোটা মন্দ নইকো আমি
নয়কো অসৎ মনোরথ।
তবে নিরজনে সবুজ কাননে
তোমায় দেখিলাম যবে
মনে হলো চেনা কত যে আপন
আগে দেখেছিনু কবে।
বাজে কথা ছাড়ো মোরে ক্ষমা করো
ফিরিয়া যাইতে দাও ঘরে
একেলা মাতা বকিতেছে যা তা
কি জানি পঁচানো জ্বরে।
শুনে মনপ্রাণ করে আনচান
আহারে বেচারী একা
ওষুধ কিনে খাইয়ো মাকে
যদি লাগে দিব টাকা।
খানিক তেজে আঁখিজলে ভিজে
কহে করুণা করো না মশাই
পাতি না হাত আমি সেই জাত
পথ ছাড়ো আমি যাই।
চক্ষু বুজিয়া দিলাম গুজিয়া
কয়টি টাকা হাতে
বন্ধু হয়ে না হয় ধার দিলাম
কিবা ক্ষতি হয়েছে তাতে ?
আহা কি যে করো মোর হাত ছাড়ো
দেখলে গাঁয়ের লোকে
কুলটা বলিবে এক ঘরে করে দিবে
বদনাম ছড়াবে মুখে মুখে।
ঝামটা মারিয়া হাতটা ছাড়িয়া
চলিল সে বাড়ির পথে
পিছনে তাহার আমিও চলেছি
হেঁটে তার সাথে সাথে।
ঘরেতে ঢুকিয়া একটু ঝুঁকিয়া
দেখিলাম তার মাকে
অতিথি এসেছে বসিবারে দে
মা মেয়েকে ডাকে।
মেয়ে তাড়াতাড়ি গ্লাসে জল ভরি
মাকে করাইল পান
দেখে আড়চোখে মনে মনে বকে
বেটা ধরেছে ভান।
অতিথি না ছাই দেখিনাই ভাই
এমন বেহায়া পুরুষ আগে
কহিল, বসেন, নহিলে আসেন
ক্ষেপিয়া রাগে অনুরাগে।
ধমকান মাতা বলিছ কি যা তা
অতিথি ক্লান্ত ভারী
আছে যাহা ঘরে খেতে দাও তারে
তাড়িও না হেলা করি।
মাতার আদেশ করে মনোনিবেশ
ঢুকিয়া খাবার ঘরে
এক গ্লাস জল সাথে কিছু ফল
এনে দিল থালা ভরে।
পেটভরে খেয়ে ক্লান্তি মিটায়ে
জলদি কেটে পড়ো আজ
সেজো না নেকা ঘরে আমি একা
সারিতে হইবে গৃহকাজ।
বলিলাম তারে কেন কটুস্বরে
কথা বলিতেছ আঁকাবাঁকা
কেন বলিব না বলো যাহাপনা
কেন মোরে সেধেছ টাকা ?
পাহাড় কাটিয়া গতর খাটিয়া
যেটুকু জুটে মোদের ঘটে
খাই দাই তাই বছর চালাই
বাকিটা বেচিয়া দেই হাটে।
পাতিনাকো হাত আমি গারো জাত
আমাদেরও আছে আত্মসম্মান
বাবা চলে গেছে যেটা নিয়ে আছি বেঁচে
সেটাতে করেছ অপমান।
ও, এইকথা গরম হয়েছে মাথা
আমার অশোভন ব্যবহারে
লজ্জিত আমি ক্ষমা চাই তব কাছে
করিয়া দাও ক্ষমা মোরে।
করিব ক্ষমা খুলিয়া জামা
বসো যদি গৃহতলে
ঘেমেছো অনেক জিরোয় ক্ষণেক
সারিবে স্নান ঝর্ণার জলে।
ও ভালোকথা, ভুলেগেছি ছাতা
মা বলেছেন কি জানো ?
অতিথি নারায়ণ এসেছে যখন
দুপুরে খেয়ে যায় যেন।
শুনিয়া অবাক চেয়ে থাকি নির্বাক
দুষ্টু মেয়ে একি বলে
বুঝেছ হাদারাম করগে আরাম
বলিয়া গেল চলে।
দেখিলাম নীড়ে চারদিকে ফিরে
ঘরখানি বেশ খাসা
মাচার উপরে খাঁচার মতো করে
খানিক শূন্যে ভাসা।
দখিণা হাওয়া করে আসাযাওয়া
শীতল হইলো শরীর
ঝর্ণার জলে সারিলাম স্নান
আদেশ পাইয়া পরীর।
‘পরী’ মেয়েটির নাম পরে জানিলাম
বারেক শুধায়ে তাহারে
পরীর মতোই রূপবতী সে
কী মধুর নাম আহারে !...(চলবে)