বজলুর রশীদ চৌধুরী
গাঁয়ের চাষী ভালবাসি তোমায় বেশী ভাই,
কত কষ্টে আছ মাঠে বলার কেহ নাই।
ভোরের আলো ফুটার আগে-জেগে উঠ তুমি,
তোমার কাছে বেশী প্রিয়-ফসল চাষের ভূমি।
হালের গরু হাকিয়ে চল বীজ বপনের স্বাদে,
লাঙ্গল-জোয়াল-প্রাজন-কুদাল-আছে তোমার কাঁধে।
ঝড়-তুফান বৃষ্টি বাদল কর নাকো ভয়,
অনাহারে যায় চলে দিন-তোমার গায়ে সয়।
রোদের তাপে জ্বলছে দেহ-মাথার ঘাম ঝরে,
সারা বেলা কর্মে ব্যস্ত-সবুজ মাঠের পরে।
হাড় কাঁপানো মাঘের শীতে কাজ কর জলে,
গ্রীষ্মের ঐ আগুন হাওয়া-তোমার গায়ে গলে।
কূঁড়ে ঘরে থাক তুমি গরুর আথাল পাশে,
ফোঁটায় ফোঁটায় পানি পড়ে বৃষ্টি ঝরা মাসে।
অসুখ-বিসুখ থাকলে তাক আসতে দাওনি কাছে,
ডাক্তার ঔষধ নাই কো তোমার-বন বনাজী আছে।
কচি কচি সবুজ চারা-যোগায় চাষীর বল,
ক্ষেতের ফসল জোড়ায় দেহ-নামে খুশীর ঢল।
মেয়ে বিয়ে দেবে এবার বউকে রঙ্গীন শাড়ী,
নয়া জামা পরে ছেলে-স্কুল দিবে পাড়ি।
ক্ষেতের মাঠে ঘুরে ঘুরে ভাবে গরীব চাষী,
ফোঁটু ছালে পড়বে না মেঘ-মেঝ যাবেনা ভাসি।
স্বপ্ন মোহে থাকে চাষী বুকে রাখে বল,
চূর্ণ করে সকল আশা-অকাল বন্যার জল।
বন্যায় কাড়ে আউষের ফসল-ভাসে নবীন চারা,
শিলায় ভাঙ্গেঁ রবি শষ্য অভাব করে তাড়া।
তবু নাহি থামে কৃষাণ-আবার নামে মাঠে,
ব্যাথায় ভরা হৃদয় নিয়ে-ক্ষেতের ভূমে খাটে।
পুষিয়ে নেয় অতীত ক্ষতি, ঘুচিয়ে তুলে সংসার,
সারা বিশ্বে যোগান দিয়ে যোগায় সবের আহার।
গাঁয়ের চাষী তোমায় আমি বাসি কত ভাল,
তুমি আমার দেশের মান-গ্রাম বাংলার আলো।
মুখে তোমার গাঁয়ের ভাষা-গাঁয়ের আদর স্বভাব,
মাটি খুঁড়ে ফলাও ফসল-মিটাও দেশের অভাব।
বড় স্বাদ জাগে ভাই-তোমার পাশে থাকি,
তোমায় লয়ে গাঁয়ে সাথে-তোমার ছবি আঁকি।
সালাম জানাই সালাম লও-ওহে গাঁয়ের চাষী,
সারা জীবন যাই যেন-তোমায় ভালবাসী।


মিশিগান, যুক্তরাষ্ট্র।