বাড়ির লাল মোরগটা যে আমার ঘুম ভাঙাত,
পায়রা দলের রাজা কবুতরটা যে আমার ঘাড়ে বসত,
আমায় ডাকে।



গোয়ালের লাল গাইটা যে আমাকে দুধ খাওয়াত,
ছিপছিপে কালোবিড়ালটা যে খাওয়ার সময় আমার পাশে বসত,
আমায় ডাকে।



রাতের ঝিঁঝিঁ পোকাগুলি যারা আমাকে গান শোনাত ,
বাশবাগানের জোনাকিপোকাগুলি যারা আমাকে অন্ধকারে পথ দেখাত,
আমায় ডাকে।



ধানক্ষেতের পাশে গাব গাছটা যে আমাকে গ্রীষ্মে ছায়া দিত,
পুকুরপাড়ে নাড়িকেল গাছটা যে আমার তৃষ্ণা মেটাত,
আমায় ডাকে।



গায়ের বৈশাখী মেলাটা যেখানে আনান্দ-উতসবে মেতে উঠতাম,
বিলে ফোটা শাপলাটা যাকে সাতরিয়ে তীরে নিয়ে আসতাম,
আমায় ডাকে।



ব্রক্ষ্মপুত্রের পাশে কাশফুলগুলি যেখানে সাদা মেঘের সাথে হারিয়ে যেতাম,
দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ যেখানে বিকেলে ঘুড়ি উড়াইতাম,
আমায় ডাকে।



সোনালী ধানক্ষেতের ঘাসফড়িংটা যে আমাকে দেখে লাফিয়ে চলত,
পথের ধারে বোবা পাগলটা যে আমাকে দেখে কি যেন বলত ,
আমায় ডাকে।



রাতজাগা ডাহুক পাখিটা যে আমার নিঃসঙ্গ মধ্যনিশিতে সঙ্গী হত,
ভোরের দোয়েল পাখিটা যে ঘরের চালে শিস দিত,
আমায় ডাকে।



বৃষ্টিস্নাত কদম্বফুলগুলি যে আমার শৈশবে খেলার সাথী ছিল,
দূর্বা ঘাসে শিশির কন্যা যে রবির আলোয় মিলিয়ে গেল,
আমায় ডাকে।



আমগাছে বসে থাকা কালো কাকটা যে প্রথম পাকা আমটা খেত,
পুকুরে ভেসে চলা হংস ছানাগুলি যারা সবুজ কচুরিপানা খেত,
আমায় ডাকে।



নদীতে ভাসা ডিঙি নৌকাটা যে আমাকে দূর অজানায় নিয়ে যেত,
টিপ টিপ বর্ষায় কলাগাছের ভেলাটা যে আমায় নিরাপদে তীরে পৌঁছাত,
আমায় ডাকে।



লাউ-কুমড়ার ভারে নুইয়ে পড়া মাচাংটা যে আমার রসনায় রস যোগাত,
সুপাড়ি-নাড়িকেল-তাল গাছে ঝুলে থাকা বাবুই পাখিগুলি যারা মনের সুখে বাসা বাধত,
আমায় ডাকে।



উঠানের আকাশে অগনিত তারকারাজি যারা আমাকে চাঁদের দেশে নিয়ে যেত,
ক্লান্ত দুপুরে পদ্মপুকুরে কলমিলতাগুলি যারা ঢেউয়ের সাথে সারাক্ষণ খেলত,
আমায় ডাকে।