এক-
গত বর্ষার পঁচা পাটের দড়িটা ছিঁড়ে ফসল নষ্ট করার অভিযোগে সদ্য বিয়ানো গাভীটাকে খোঁয়াড়ে নিয়ে যায় মালিকের প্রজা ।বিনিময়ে দুই টাকায় আবার বিক্রি হয় প্রজা।কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ায় তরু।পথেই মুখোমুখি দুই বিপরীত মুখ।লোভ এবং মমতার।
দুই-
দশ মাসের বাপ মরা আট বছরের ছেলে তরুর মায়ের দ্বিতীয় সন্তান।আযান দেওয়ার মত কোনো পবিত্র
পুরুষ নাই।দীর্ঘ নাভিটা খড়ের সাথে মিশে গেছে।পোড়া ধূপের গন্ধ।আতুর ঘরের রক্ত  পুরোপুরি শুকোয়নি তখনো।মৃত স্বামীর অবয়ব মিলিয়ে নেয় সদ্যজাত শিশুর ফ্যাকাসে জননী।
তিন-
তরুর বাবার রেখে যাওয়া একমাত্র সম্পত্তি গাভীর দুধ বিক্রির টাকায় কোন রকমে সংসার চলে।সেই গাভীর স্ফীত বাটের যন্ত্রনায় ছটফটানো দেখে একহাত লম্বা হয় খোঁয়াড়ির জিভ।দিনের নিয়মেই গত হয় রাত।তরুর মায়ের অচল সংসার আর কোনো রকমেও চলে না।
চার-
একটা দিন পেরিয়ে গেল।একহাত দড়িতে বাঁধা একমাসের বাছুর। গোয়াল ঘরের চিৎকারে টনটন করে ওঠে আতুর ঘরের স্তন।শিশুকে স্তন্য পান করা তরুর মায়ের ভেতরের মমত্ববোধ ভীষণ মোচড় দিয়ে ওঠে।
শিশুর জন্য রেখে দেওয়া অতিরিক্ত স্তন বাছুরকে পান করায় তরুর মা।অভাবী শরীরে বেঁচে ওঠে দুটি সদ্যজাত সন্তান।
পাঁচ-
ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েছে তরুর মা।বিছানা ছেড়ে কোনো ভাবেই  উঠতে পারে না।আকালের সংসারে শুকিয়ে আসা স্তনের মূল্য বুঝতে পারে আট বছরের তরু।তরু চিৎকার করে কেঁদে কেঁদে মাকে ডাকে।
মা ওঠো।ক্ষুধার যন্ত্রনায় ছোট ভাই কাঁদছে।চিৎকার করে ডাকছে গোয়ালঘরের বাছুর।মমতার জলে চকচক  
করে ওঠে ফ্যাকাসে চোখ।চোখ বন্ধ করা একটা দীর্ঘশ্বাস আসে।কই বাবা তরু কাছে আয় সোনা!
ছয়-
প্রথাগত সমাজ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ধিক্কার জানাবার জন্যই আবার স্ফীত হয়ে আসে তরুর মায়ের নেতিয়ে পড়া স্তনদ্বয়...
সাত-
শরৎচন্দ্র বাবু-
মহেশ একটা ষাঁড়ের নাম।এখন এই নামে মিলে যায় অনেক মানুষ।