আমিতো কিছুই না
ওইযে একটু আগে একঝাঁক বাবুই চড়ুই
মধ্যবয়সী খেজুর গাছের চিরল পাতার আড়ে
চোখের পলকে লুকিয়ে গেল;
আমি ওদের খুনসুটি।
ডানায় ডানা মিলিয়ে একটু আকাশ দেখো।


জলের তলে পাতাঝাঁঝি জানেনা
কোন রাজ্যে যুদ্ধ বেঁধেছে।
কেন ভবন ধ্বসে হচ্ছে চুরচুর!
জানেনা পারমাণবিক হামলা কাকে বলে।
ও জানে শুধু আজন্ম সাঁতারু মাছের
টুপটুপ ঠোঁট নেড়ে প্লাংকটন খাওয়া।
জানে হঠাৎ হঠাৎ রোদ বলে
কিছু একটা জলে হানা দেয়.....
যা পারবেনা ছুঁতে কোনদিন।
আমি ওই অসূর্যম্পশ্যার আমৃত্যু ঘুম;
                    আমায় জাগিয়ে তোল।


আজীবন হেঁটেও জমিন থেকে ডগা অব্দি
না পৌঁছে মরে যাওয়া পতঙ্গের
আক্ষেপ গায়ে জড়িয়ে যে গাছগুলো
আমাজনের অন্ধকারে অসহায় দাঁড়িয়ে আছে,
যাদের শরীরে হার্পির খিদে
আর বানরছানার ছিন্নভিন্ন শরীর
নিত্যদিনের ত্রাস;
আমি সেই নিরুপায় বৃক্ষের অপারগ ছাল।
খসে যাওয়ার অপেক্ষায় দিন গুনছি৷
             আমায় শেকড়ের সুধা এনে দাও।


আমি আমার সেই মেরুন ডায়েরিটা
চারপাতা লিখে যাকে নির্বাসনে দিয়েছি
বেখেয়ালে.......
শূণ্য বুকের ক্যানভাস নিয়ে অপেক্ষমান
হয়ত প্রতিদিন কাঁদে!
এইসব বিমূর্ত কান্না কেউ টের পায়না।
আমায় অঝোরে কাঁদাও......


প্রতিদিন কত শব্দ ধ্বনির পাখায় উড়ে যায়
ফুঁড়ে যায় বিশুষ্ক আকাশ!
চুরচুর মিশে যায় শুকনো বালিতে
যান্ত্রিক কোলাহল
আর আমাদের দ্বান্দ্বিক সম্পর্কে।
আমি অই শব্দগুলোর অভিধান
আমায় স্পর্শ করো।
পাঠোদ্ধার করো আজন্ম লুকায়িত
এই কুমারি গ্রন্থের।
পংক্তিতে পংক্তিতে
আমি শুধু তোমাকেই ছুঁতে অপেক্ষমাণ।  


যে ঝিনুক কখনো জানেওনি
জালে বেঁধে বিদ্যে ফলিয়ে
মুক্তোর চাষ হয়।
চিরাচরিত যাতনায় ক্ষয়িষ্ণু
শক্ত খোলের আড়ে
যে নরম শরীর মুক্তোর স্বাদ পায়;
আমি ওই ঝিনুকের প্রথম যন্ত্রণা।
       আমাকে আলিঙ্গন করো,
মুক্তি দাও আভূষণ হবার দায় থেকে।


রঙের দোকানে হাজার কৌটো
মুখ আঁটা দম নিয়ে হাঁসফাঁস করে।
ছড়িয়ে যেতে দিলে
এই বৈষয়িক পৃথিবী রঙে ডুবিয়ে চুবিয়ে
      ওরা একাকার করে দেবে।
সৃজিত হবে পার্থিব অমরাবতী
ঘাসের বুকে পাপড়ি মেলবে রংধনু।
পৃথিবীর সব কোণে মেরুপ্রভা
সব আকাশ হবে সূর্যাস্ত হোলি!
আমার বছর কুড়ি ধরে পুষে রাখা
টিপের কৌটো
সগৌরবে চড়ুইভাতি করবে
ধনুক ভুরুর মাঝে পড়ে থাকা
   এক চিলতে উদাস উঠোনে।
ছিপি-আঁটা অই রঙ-কৌটো-ভীড়
ছড়িয়ে যেতে দাও
গড়িয়ে যেতে দাও;
রাঙাই খানিক তোমার অভিমানী ওষ্ঠ-অধর।


স্বরূপ চিনতে গিয়ে মিথুন জাতিকা বেভুল দ্বৈরথ
আমাকে খুঁজতে গিয়ে আমি হারিয়েছি পথ।
বড্ড অচেনা লাগছে এ বিশ্ব চরাচর,
প্রিয়তম, এবার তো হাত ছুঁতে দাও....
অন্ধকারে জ্বলে উঠুক অমিত বাতিঘর।