ক্ষুধার্ত পেটে সে গোলাপ বেচতে এসেছিল,
তোমাদের ধুলোঠাসা সিমেন্ট শহরে।
কচি পায়ে সরু সরু ফাটল
রক্ত চুইয়ে মিশে গেছে কালো-পিচ রাস্তায়।
রুক্ষ চুলের বেনী-জটায়
এক প্লেট ভাতের স্বপ্ন ফেসে গেছে।
টের পায়নি অই পয়মন্তী বালিকা
কতটা অপয়া হতে পারে রডের কঙ্কাল
আর ইঁটের মাংশপেশি!


ফুলগুলো বেচার আগেই,
ঝরে গেছে সে।
ভাদ্রের কুকুরগুলো দাঁতের চাকু খিঁচিয়ে
ফালা ফালা করে গেছে তার
ডালিম হাতের ফ্রক!


তারপর কেটে গেছে অনেকটা দিন,
রাস্তায় জল জমেছে,
ম্যানহোলে ডুবে গেছে নাগরিক বিবেকের
ছেঁড়া ফাটা মুখোশ,
আগুন লেগেছে বহুতল ভবনে,
রাস্তায় হয়েছে কত অবাঞ্চিত মানববন্ধন।
সাঁই সাঁই করে ধাবমান কত উড়ালযান আর
মার্বেল প্রাচীর।


পয়মন্তীর কপাল ফেরেনি।
ফুলের বদলে এখন তার কোলজুড়ে
অযাচিত ভ্রুণ খেলা করে।
খিদে বেড়েছে, বেড়েছে চুলের জট।
আজকাল সে শ্যাওলা শীতল আকাশ থেকে
ভাঙা ভাতের প্লেট ঝরতে দ্যাখে।
কেউ তাকে সোহাগ করে পয়মন্তী ডাকেনা।
উড়াল সেতুর ঠিক নিচে,
ডানাছেঁড়া ময়লা ফড়িং!
লোকে তারে পাগলি বলে;
নাক ঢেকে সরে যায় ভীড়ে।


সভ্যতার এই ভীষণ দেমাগে
অসভ্য আকাশ ফ্যালফ্যাল করে দেখে,
মাটির ফাটল, ইটের সুরকি
আর শিশুর খুলিতে গেঁথে যাওয়া রডের শেষাংশ।
শোনে পয়মন্তীর বাতুল ভ্রুণ আলাপ।


রাত নামে শহরের আকাশে,
ঘোলা জ্যোৎস্নায় অভিশাপ পাক খেয়ে ভাসে।
অপয়া এই শহরে চেয়ে দ্যাখো সব সব সব,
সব বিশ্রী বেসামাল................