কপালে ছোট্ট একটা কালো টিপ না দিলে,
আমার ভালোই লাগে না জানো!
রেশমি আঁচল, ঝুমকো দুল,
একটু কাজল, হালকা হাসি
আর ছোট্ট নোটন খোপা ;
এর বেশি চেয়েছি কী কখনো কিছু?
অথচ এসবের প্রতি ন্যানোমিটারে ভয়ের
থাবা বিছানো!
এসবের রন্ধ্রে নাকি রাক্ষস বসত করে!
সে এক মস্ত নখরওয়ালা শ্বাপদ।
টিপ দেখলে যার মাথায় খুন চাপে,
বেলীর সুবাসে নাকি সে কালনাগ হয়ে ওঠে.....
সাজ, অ-সাজ,লাজ, কাজ, ভাঁজ সবেতেই
নাকি তার ভীষণ ক্ষ্যাপাটে খিদে!


বিশ্বাস করো, আমি টিপের পাতা পুকুরে ফেলেছি,
ফুল দিইনা চুলে।
সাজের আশেপাশেও নেই।
অতঃপর
খুশিমনে আমি আমাকে আবৃত করেছি
ভদ্রতার নিচ্ছিদ্র নিপাট কালো বসনে।
গলায় বেড়ি ঝুলিয়েছি যাতে কণ্ঠস্বর ভারি হয়।
বাগানের সব কামিনীর গাছ উপড়ে ফেলেছি,
পাছে সেই শ্বাপদের নেশা হয়ে যায়।


এখন আমি অন্ধকারের সাথে মিতালী করেছি।
সবটা আবৃত করার পর শুনলাম,
ওতেও নাকি আমার নিস্তার নেই!
আমার ঘর নেই,উঠান নেই, রাস্তা নেই, ক্যাম্পাস নেই, অফিস নেই,
ছুটন্ত বাসের সামান্য সিটটাও আমার জন্য নিরাপদে বরাদ্দ নেই।
যেকোনো সময়,
হ্যাঁ, যেকোনো সময় আমাকে ছিঁড়ে ফেলা হতে পারে, চিবিয়ে কিংবা সপাটে গিলে ফেলা হতে
পারে ,  
ওয়ান-টাইম প্লেটের মতো ছুঁড়ে ফেলা হতে পারে
শ্যাওলা ঠাসা কোন নর্দমার পাশে,
কোণঠাসা হয়ে যেতে পারে আমার সমস্ত অস্তিত্ব,
কিংবা মুখ ঝলসে যেতে পারে কারো সেকেন্ডের পাশবিকতায়!
আমার কোমল মাংশপেশিতে যেকোন সময় চাপাতি চালিয়ে দেয়া হতে পারে,
হতে পারি অর্ধগলিত বস্তাবন্দি লাশ!  


ভাবতে পারো?
এইসব চিন্তা আমরা বয়ে বেড়াই প্রতিদিন!
পোশাক সামলানোর হুশ হবার আগেই
আমাদের জানিয়ে দেয়া হয়,
তা ছিঁড়ে ফেলা হতে পারে!!
অতএব, সাবধান.....
এসব জানার পরে কি বিশ্রী গা গুলোনো
অনুভূতি নিয়ে আমরা বড় হয়ে উঠি!
টেরও পাবে না৷


মজার কথা শোনো,
আমাদের তারল্য টাকার চাইতে বেশি!
মূহুর্তে আমাদের ফুটপাতে বেচা কলার সাথে তুলনা করা যায়,
মুহুর্তে তুলে দেয়া যায় চাঁদে,
কাব্য করা যায়, ভেঙে ফেলা যায়,
বারান্দা থেকে এক ঝটকায় ফেলে দেয়া যায়
নিষিদ্ধ পল্লীতে!
আহা! বিমোহিত........


একটা ভয়ংকর শ্বাপদ
তার অযুত নিযুত নখর পেতে রেখেছে আনাচে কানাচে,
যেকোনো মূহুর্তে আকাশ থেকে বজ্রের মতো নেমে আসতে পারে অসম্মান,
থরথর করে কেঁপে যাই
সাবধানতার ছাতায় কুলোবে কতক্ষণ?


নাক টেনে টেনে কিছু বিধিনিষেধের
পালন করে যাই,
আমাদের কোন নিঃশ্বাস প্রশ্বাস নেই।


শ্বাপদের কাছে জানতে বড় ইচ্ছে করে,
"ঠিক কত পুরুত্বের কত গজ কাপড় পেঁচালে
তোর হাত থেকে বাঁচা যায়?
গয়নার বদলে ঠিক কতটা শেকল জড়ালে তুই
দূরে সরে যাবি?
কোথায় লুকোবো বল?
ধরিত্রী দ্বিধা হোক, পৃথিবীর কেন্দ্রে চলে যাই।
জানি তখনো নোংরা নখে
তুই মাটি আঁচড়াবি।
আমাদের তো মরেও শান্তি নেই।
নারী শব্দটা শুনলেই তোর নাড়ীতে বিষ-ক্রিয়া জাগে...... "
এসবের উত্তর শ্বাপদ দেয় না।
ক্রুর হাসি হেসে কেড়ে নেয় আমাদের ডানা আর হার-না-মানা উড়াল আকাশমন।
কৃষ্ণচুড়া পাতার মতো আমরা তিরিতির করে
কাঁপি, কাঁপতেই থাকি।


জানো, আজকাল কংকাল হতে ইচ্ছে করে।
আপনা মাংস হরিণা বৈরী!
কংকালের শরীরে কোন মাংস থাকে না,
থাকে না কোন ভয়.........
আমরা তো বেঁচে নেই,
করছি বাঁচার অভিনয়!