উৎসর্গঃ- বাংলা কবিতা ডট কমের সকল কবি ও পাঠকে,


আমার জন্মের কিছুদিন পরই
ইহলোক ছেড়ে বাবার পরলোকে পাড়ি
আসা যাওয়ায় এইতো বিধির ধারা
দুঃখ বেদনা মন্বন্তরে অসহায় মা
দিকহারা দিশাহারা পথহারা।
সর্বনাশিনী জলকন্যা কেড়ে নিলো শেষ আশ্রয়
ভিটেমাটি পিতৃভূমিটুক।
আমরা বড় জড়সড় দুখের বৈরী হাওয়ায়
সে জরাজীর্ণ অবস্থায় বেদনা সর্বভুক
ইচ্ছে মত আমাদেরে চিঁড়ে খুঁড়ে খায়।


তারপরও দুঃখের শরীর আঁকড়ে ধরেই
শীত ব্সন্ত খরা বাদল ঝড়ে
পরগাছার মত শুন্য ভিটের পরেই
আমরা বাঁচতে চাই
ব্যর্থ হাতে খুঁজি সামান্য ঠাঁই।
বেঁচে ছিলাম- বেঁচে আছি
তবে মানুষ হিসাবে নয়- দুঃখী হয়ে সংসারে।


আমাদের গায়ে ঈদের পোশাক উঠেছে খুবি কম
ঈদগা খেলার মাঠে ছিলো না তেমন উদ্যম
অন্যদের মত মেলার ভীড়ে হয় নি যাওয়া
মাটির ঘোড়া টিনের বাঁশি চাঁচের চশমা
হয় নি তেমন পাওয়া। বাবা বলে, কাকু বলে
হাত ধরে কেউ যায়নি নিয়ে দেখতে ঘোড় দৌড়
দৌড়ের গরু, বাইসের নৌকা দেখেছি যেতে
দেখিনি তাদের দোড়।
মায়ের কাছে কখনো ধরিনি কিছুর বায়না
আমরা যে গরীব-পিতৃহারা
মায়ের মুখই ছিলো তা চেনার আয়না।


দাদীর কোলে শুয়ে হয়নি শোনা গল্প কবিতা
দেখিনি দূরের চাঁদ
দাদার পীঠে ঘোড়া ঘোড়া খেলা
মামীর হাতে মেলেনি দুধ ভাত।
নানার দেখা পাইনি ধরায়, নানুর দেখা অল্প
মামার কাছে মিলেছে যা সে এক দুঃখের গল্প।
খলা-খালু ফুফা ফুফু কাকে বলে আজো জানিনে তা
আমরা ছিলাম চিরদুঃখী, আমাদের ছিলো শুধু বিধাতা।


তারপর একদিন সুমতি হলে সর্বনাশিনী জলকন্যার
ফিরিয়ে দিলো অপরপাড় সামান্য মাটি বাপ দাদার
বালি আর ঘাসের পাহাড়।
মাথা আঁচড়িয়ে মুখ মুছে বই না দিয়ে হাতে
মা দিলেন নিড়ানি
বললেন, যাও বাবা বীরের মত যুদ্ধ করো!
ভাগ্য আর জীবনের সাথে
বসে থাকতে ধরণীতে আমরা আসিনি।
এই কাস্তে কোদাল লাঙল জোয়াল
পিতৃপুরুষের ভালোবাসার মাটি
মমতাময়ী এ বালুর চর- ঘাস ফসল দিগন্ত পরিপাটি
যদি পারো শ্রম দিয়ে এ সুন্দর পৃথিবী
আরো সুন্দর করে গড়ো!


সেই থেকে সেই যুদ্ধের মাঠে এতগুলো বছর
এই আমি; লাঙলে কদালে নিরন্তর
আবাদযোগ্য করে তোলা জলকন্যা পারের অনাবাদী জমি
ঘামে গন্ধে পূর্ণ করা কতনা ফসলের শীষ
শহ্র-বন্দর-গঞ্জের মানুষের কাছে পৌঁছানো জীবন বেশাতি
হৃদয় মমতা দিয়ে মা মাটি মানুষেরে বড় ভালোবাসা!
বাবুদের কাছে তবু আমি এক চাষার ছেলে চাষা
মা পেলেন না পৃথিবীর কোন স্বীকৃতি-ই।