বিশ বছর আগে কোন এক কলেজ ছুটিতে হায়
বেড়াতে গিয়ে আম জাম লিচু কাঁঠাল দেবদারু ঝাউ
ছায়া ঘেরা এক মায়ার পল্লী গাঁয়।
দেখেছি প্রতি বাড়ী প্রতি ঘরের আঙিনায়
ধান ও খড়ের উৎসব-
দুগ্ধবতি গাভী মারাইয়ের গরু
ঘাণি টানা বলদ গাড়ি টানা মহিষ
বস্তা টানা ঘোড়া রোদে পোড়া সহিস
ফুলে ফলে নূ’য়ে পড়া সুশভিত লতা ও তরু
তখন জল বাঁশে ঝোলা জাল উঁচু মাচায় বসা জেলে
বই খাতা হাতে গল্প করে ফেরা কিষাণ কিষাণীর মেয়ে
কামার কুমার কুলি মজুর তাতী ও শিক্ষকের ছেলে
ছাতা মাথায় শিক্ষক-শিক্ষিকা বিন্ম্রতায় পথ উপচে পড়ে
গাঁয়ের লোকেরা তাঁদেরে কতনা শ্রদ্ধা কতনা ভক্তি করে।


বাড়ীর ফটকে কুটা উড়ানো চিটা রোদে শোভা পায়
সোনার হাড়ি কুমার বাড়ীর এখানে সেখানে ঠাঁয়।
মাটি ছানা মাটি টানা মাটির হাড়িতে মাটি জোড়া
কেহ রং কেহ আলপনা কেহ আবার পূনে দিছে পোড়া।
এখানে হল্লা ওখানে হল্লা এক্কাদোক্কা নাটাই ঘুড়ি
হাতুড়ি হাঁফর তাঁতের শব্দে সে এক স্ব্প্নপূরী।


বিকেলের ছায়া সোনা রোদ হলুদ ফোঁটা
ঝিলমিল আমলকী করমচা বেথলের গোটা
খালের ধার পুলের পাড় মাছরাঙা মন ভেলের বাঁশে
ঝাঁক ঝাঁক হাস নির্মল আকাশ কলমির গন্ধ বাতাসে।
সেদিনই বৈকালিক হাট চট বিছায়ে বসেছে দোকানী
অল্প দামের পশরা অনেক দামী মুখ ভরা হাঁসিখানি।
গামছা কাঁধে খালৈ হাতে খদ্দেরের ভীড় খুশীতে বেচা-কেনা
শহর থেকে আসা মেহমান সহ্জেই যায় চেনা।


গৃহস্থ কিনে তেল লবণ, শিশু খাতা কলম কাঁচের ঘড়ি
সং সেজে রঙয়ের মানুষ বিক্রি করে ক্রিমির ঔষধ বাতের বড়ি।
গ্রাম্য ডাক্তার বাঁশের মাচায় পাচীন বটের জট ঘেঁষে
চোখে চশমা পড়নে ধুতি গলায় পুরনো থার্মস্কোপ।
করাতিরা বসে আছে দড়াদড়ি করাত লয়ে পাশে
আগামী কালের কাজের ভাবনায় উ্ৎগ্রীব সারা চোখ।
সাপুড়ের সাপ খেলা তাবিজ বেচা কুমার হাটার কাছে
মাছের গলিতে এলেই বুঝা যায় বাঙ্গালী ভাতে ও মাছে।


একই হাটে পাঠশালা পাশাপাশি মসজিদ মন্দির
বায়স্কোপের নাচ-গান রাইস মিলের শব্দ নিভিড়।
বেলা গেলো সন্ধ্যা হলো ছায়ার মত আধার এলো হাটে
কাশি খঞ্জনি উলুধ্বনি পাখীদের গান আযান উঠিল সাথে।
দোকানীর ধূপধুনি হাসনাহেনা বকুল ঘ্রাণ বাতাসে
ভক্তিতে নূ’য়ে গেলো দশদিক ভক্তপ্রাণ আরক্ত রসে।
উঁচুসড়ক বাঁশের সাঁকো বিলঝিল ওপারের গ্রাম
পটে আঁকা চিত্রের মত সব কিছু নির্জীব।
ঘর ফেরা শুরু- আগামী কালের স্বপ্ন আগুয়ান
অপেক্ষায় প্রহর গোনে জ্বলে ওঠা মমতার পিদীপ।


ঘরে ফিরে দেখি, সে কী? সেখানেও চলছে
পাটিসাপটা ভাপাপুলি নানা পিঠার নিপূণ আয়োজন
পিদীপের নীচে চেনা মুখ চেনা চোখ ঝলমল জ্বলছে  
বনলতা সেনেন মতন-
‘এত সময় কোথায় ছিলেন?’ সকলেই বলছে।
সে স্বর্গ, স্বর্গীয় সে সুখ বুক ভরে নিতে যদি হয়
আবার আমাদের ফিরে যেতে হবে মাটির কাছে
কোন পল্লী গাঁয়।