গণতন্ত্রের মুখোশের নীচে
চুপটি করে ঘাবটি মেরে বসে আছে আজ
বিৎঘুটে-কদাকার দানবীয় এক হিংস্র শকুন।
সুযোগ পেলেই যত্রতত্র খোলে ধারালো নখের ভাঁজ
ছো মেরে কেড়ে নেয় বলিষ্ট যুবক
মতিষ্কমান মিছিলের মানুষ।
জনতার আড়ালে-আবডালে নির্জনতায়
ভাঙে বক্ষ পাঁজর হাড়
রক্ত মাংস কলিজা ছিঁড়ে খুঁড়ে খায়
টানা হেঁচড়ায় নষ্ট করে আশপাশের ফসল
ছোট গাছ সবুজ ঘাস।


উদরপূর্তির শস্তিতে কখন কখন
বেছে নেয় উঁচু পাথর শিরিশ শিমুল কড়াইয়ের শাখ
মনানন্দে দুঃশাসনের তন্ত্রীতে ঘঁষে নোংরা দুটি ঠোঁট
মহানন্দে বাতাসে ছড়ায় সুখের হাঁক ডাক।
এ হন্তারক পোশাকের নীচে শকুন-শকুনী ঘাতকেরা
বেশ আরাম অনুভব করে, ভাল করে লুকাতে পারে
নিজেদের দুর্গন্ধময় শরীর, দেহক্ষত-পাপাত্ম পুরাণ দাগ।
এ মিথ্যে সাধুর পোশাকী সাজে
ওরা দেশদরদী জনদরদী নেতা-নেত্রীর সেজে
আসে অবলা জনতার মাঝে।
জনতা চিনে না তাদেরে
হাত তালি দেয় মালা পড়ায় এগিয়ে আনে স্বাদরে।


সাথে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দ্যাখায়
নিজেদের পুরনো পাঠশালা ভাঙা চেয়ার টেবিল খোয়ার খামার
যা কিছু সরল জনতার- তোমার আমার।
কোনখানে বসে রাতের মিটিং মিছিল এসে থামে
নারী কোথায় আঁধারে বসে শানায়
পুরনো অস্ত্রের এপিঠ ওপিঠ, ধুয়ে মুছে প্রস্তুত করে রাখে
যুদ্ধ অভাব মঙ্গা মোকাবেলার সকল সরঞ্জাম।
কোন গোলাপ বাগানে এত ফুল ফোটে
বুলবুলি গায় উদার গলায় বৈরী খেদার গান।
সংগ্রামের হাতে খড়ি কোন ভাঙা দালানের পিছে
কোন আঁতুড় ঘরে মা জন্ম দেয় এত বলিষ্ট সৈনিক
কোন খাগড়া বন বটের ছায় গহন গগন দিগন্ত নীচে
গামছা বিছায়ে শুয়ে থাকে বিদ্রোহী সশস্ত্র দেশপ্রেমিক।


জনতার গলা ধরে এগিয়ে যায় শকুন-শকুনি।
ধীর পদক্ষেপে পলকহীন দু’চোখ ভরে দ্যাখে
জীবন্ত মানুষের ঢল, ফুটন্ত গোলা্‌প প্রসুতি নারী
সংগ্রামী পাঠাশালা অস্ত্রাগার শাণের শীল পাথর আর
বৈরী তাড়ানোর যোগ্য উত্তরসূরি।
নেকাবের নীচে অতিথি রাক্ষুসে শকুন শকুনি
হিংস্র লোভাতুর মন
রক্ত মাংস খুনের নেশায় আইটাই করে
চোয়াল উপচে পড়ে নির্গত রসধার
দ্যাখে আর ভবিষ্যত ক্ষুধার উপাদেয় আহার
শিকারের জন্য ভিতরে ভিতরে হয় প্রস্তুত।


তারপর সময় সুযোগ মত একদিন
খোলে হিংস্র নখের ভাঁজ
ছোঁ মারে মানুষের মিছিলে
কেড়ে নেয় সংগ্রামী মিছিলের প্রাণ
লণ্ডভণ্ড চেয়ার টেবিল পাঠশালা খোয়ার খামার
অস্ত্রাগার আঁতুড় ঘর সাজানো বাগান।
যদিও একদিন জনতার মিটিং মিছিল প্রজ্ঞা একতার তোড়ে
ফিরে যায় কোন বয়সী শকুন-শকুনী
দূর পাহাড় বন বাদাড়ে আয়েস করেই ওড়ে।
সময় সুযোগ পেলে আবার একদনি নির্বাচনী ঘোরে
গণতন্ত্রের দাবীদার হয়ে ফিরে আসে নিজে
অথবা পাঠায় উত্তরসুরী পুত্র-কন্যারে।


এমনি করেই গণতন্ত্রের মুখোশে শকুন-শকুনি আসে
শকুন-শকুনি ফিরে যায়।
জনতা হয় নতুন শিকার, উপাদেয় আহার
মানুষের কঙ্কালে ভরে রাজ্যময় ভাগাড়
মস্তিষ্কমান মানুষ ফুরায়, প্রতিবাদী মিছিল সাবাড়।
শকুন ওড়ে  নির্বাচিত শকুন---