আসরের সকল কবিদেরে ভাল বেসে।
সবার দোয়ায় আমি এখন অনেকটাই সুস্থ।
------------------------
হে দক্ষিণ গোলার্ধের উন্মুক্ত অধিবাসী
বিশাল আকাশ অসীম জলরাশি
নীল নীল ঢেউ ধবল মেঘরাশি
বরফ দিগন্ত শুভ্র শীত উদাসী
মেরু বাউল সাগর পড়শি
নীরব দিগন্ত তুষার তমস্বী
হেলে দুলে চল আপন ঠিকানায়
অনাবিল সাতাঁরে বেড়াও ভাসি।


জল ঘেঁষা পাহাড় পাথর পাথর পাড়
সবুজ অরণ্য দ্বীপাধার মেঘের বাহার
সিন্দাবাদ জিন্দাবাদ নাবিক
চাঁদ ছিতারা শুকতারা মৌসুমি হাওয়ার দিক
প্রাগৈতিহাসিক এক সৌন্দর্যের প্রতীক
সভ্য সুশৃংখল মনোহর এক জাতি
জন্ম থেকেই পাওয়া অসীম প্রকৃতি
প্রতীতি। নিজেরাও স্বাধীন
পেঙ্গুইন।


তোমার ভালবাসার চোখ অথৈ ডাগর
স্বপ্নিল আকাশ রং জলের ফাগর
ঢেউয়ে ঢেউ জলে জল অতল অনাবিল দৃষ্টি
মহাসাগর মহামেরু মহাতুহিন কৃষ্টি
ভরা কাঁটাল মরা কাঁটাল অপরূপ সৃষ্টি
উদাসী উল্লসী মৌসুমি নাগর
দূর অভিযাত্রীর স্বপন জাগর
দারুচিনি দারিম্ব সুবাশি আগর
হাওয়াই চিঠি হাওয়াই বাঁশি
মেরু হাসি শোন নিত্যদিন
পেঙ্গুইন।


পাশাপাশি কাছাকাছি প্রিয়-প্রেয়সী
একসাথে থাক, একসাথে চল, খাও
হাঁটাহাঁটি ভাসাভাসি ভালবাসা বাসি কর
শামুক, ক্রিল, ছোট মাছ ধর
স্রষ্টার গুণগানে তৃপ্তি করে খাও
পেটের ক্ষুধা মিঠে গেলেই ঘরে ফিরে যাও
পর ধন পর সুখ হরণ করে জমা নাহি কর
পর দারে কভু হাত নাহি বাড়াও
সাদা তুষারের মত সাদা হৃদে মর।
যে কটা দিন থাক পৃথিবীতে আসি
বিনিময় কর সাদা-সফেদ হাসি
অসঙ্কোচে বল, প্রিয়-প্রিয়তমা বড় ভালবাসি
সুখে হাস, দুঃখে কাঁদ, উৎসবে কর নাচানাচি।
তুমি বড় ভাগ্যবান পেঙ্গুইন!
মানুষ হয়েও আমরা বড় অভাগা হয়ে বেঁচে আছি।


এখনো দেখতে হয়নি তোমার
মহেঞ্জদারো, হরপ্পা, উয়ারীবটেশ্বর
নাম না জানা অসংখ্য সভ্যতার ধবংস চিত্র।
দেখতে হয় নি মানবতা মহাপ্রয়ান
অত্যাচারে অত্যাচারে ক্ষয়িষ্ণু ভগবান
সৃষ্টির বিপক্ষে আগুয়ান-ক্রুদ্ধোন্মত্ত
ভিসুভিয়াস ফুজিয়ামার ভয়াল লেলিহান
আকাশে বাতাসে ধুঁয়ার মত্ত রূপ
মনুষ্য বসতি পঙ্কিলতার আকণ্ঠ ধ্বংসস্তূপ।
দেখতে হয় নি মৃত্যুপূরী হিরোশিমা নাগাসাকি ট্রয়
আফগান ইরাক লিবিয়া সুরিয়ার মানবপ্রলয়
সৃষ্টি বিনাশী প্রজন্ম ধ্বংসী লোভের এ্যাটম
দেখতে হয় নি বুনোবাসীর অনাকাঙ্ক্ষিত চিতা
ক্ষুধা মন্বন্তর গোঁড়ামির আগুনে সতীর মরণ।
দেখতে হয় নি ক্ষমতার হানাহানি ধর্মের টানাটানি
আসনের জন্য রক্তের প্রমত্তা বাহিনী
পাইক পেয়াদা আমলার ধরপাকড় হয়রানি
কিছুই দেখতে হয় নি, আমরা যা দেখি নিত্যদিন
হে সৌভাগ্যবান মুক্ত পেঙ্গুইন!


আহ! আমি যদি হতাম তোমার মত পেঙ্গুইন
ওই নীল আকাশ খোলা দিগন্ত শুভ্র তুষার দেশে
আরো আরো পেঙ্গুইন পেঙ্গুইনদের পাশে
আনন্দ হরষে কেটে যেত দিন।
অজানারে ভালবেসে নিরুদ্দেশে দিতাম পাড়ি
অচিন অচিন মহাদেশ মহাসাগর ঢেউয়ের আড়ি
ভেঙে যেতাম সাথী করে ইচ্ছে স্বাধীন
তারপর নিরিবিলি নির্জনে তোমার পাশে বিলিন।


জানি সেখানেও আছে হাঙর তিমি সিন্ধুঘোটক সিল
শেতভল্লুক, সরিসৃরীপ, শ্যান চোখ চিল
আছে তুষার ঝড় বুক ভাঙা ঊর্মিল
তবুও নয় অতটা ভয়ংকর অতটা হিংস্র পঙ্কিল
যতটা মানুষের দিল।
আহ! আমি যদি হতাম তোমার অমন স্বাধীন পেঙ্গুইন
আপন মনে বরফ দেশে জলে ভেসে
তোমার পাশে কেটে যেত দিন
পেঙ্গুইন।