আযানের মধুময় সুরে জীবনের প্রথম প্রহরের সূচনা,
পথ ধরে চলতে থাকা এক অন্তিম উচ্ছাস।
সূর্যের আলো আর পাখির কলরবে ভোর,
গলিত মরুর বুকে ঘর্মাক্ত তপ্ত দুপুর।।


আলো-আঁধারের খেলা করা গোধূলি, অনন্ত আঁধারের কূপোদক সন্ধ্যা তারপর গভীর রজনী।
বিরামহীন ঝিঁঝিঁ শব্দে বিরক্তি প্রকাশ,
অথবা রোমন্থন করা অতি আপন জাগতিক ভাবনাকে।।


রাতের অনাবিল অপরূপ সৌন্দর্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলা,
চাঁদের রূপালি আলোর জোছনায় স্নান।
কল্পনায় মিশে থাকা স্বপ্নপুরীতে হাওয়ার আদলে ভাসতে থাকা।।


কখনোবা খাল-বিল, নদীর বুক জুড়ে জলের রাজত্ব,
ছোটবড় ঢেউয়ের খেলা অথবা মাঠের পরে মাঠ ধূধূ করা প্রান্তর।
গ্রীষ্মের দিনে হঠাৎ হঠাৎ উথলে উঠা ঝড়ের কবলে,
নিজেকে এক জগতের একক বীর ভেবে সম্মুখে সমর দেখা।।


বর্ষার রিমঝিমে পুরনো ভালোবাসার স্মৃতিকথা স্মরণে এনে,
কবিতার পাতা গড়া।
শরতের আকাশে তরী ভাসিয়ে নাবিক হবার মত স্পর্ধায়,
বুকের পাটাতনে সাহসের সঞ্চার।।


হেমন্তের নব অন্নজল আর ঘরোয়া ভালোবাসায়,
নিজেকে হারিয়ে আবার শীতের প্রকোপে থরথর কাঁপুনি।
তারপর বছরের শেষ দাঁগে এসে,
যেন জীবনের চির জয়োধ্বনি শোনা বসন্ত বাসন্তীর গানে,
ফুলে ফুলে ভরে উঠা পৃথিবীর এই চিরচেনা রূপে নিজেকে বাঁধা।।


ফেলে আসা অবুঝ বুদ্ধিহীন শিশুকাল,
সেই দিনগুলো ফিরে পেতে যেন নিজেকে নিজেরই অজান্তে রক্তাক্ত করা।
হারিয়ে যাওয়া সেই শৈশবের ছোটাছুটি দাপরে বেড়ানো প্রতিটি পাড়া,
গৃহকোণে আবদ্ধ থাকা নয় পুরো পৃথিবীকে মন্থন করা।
নব যৌবনের জোয়ারে প্রান্তিক ভাবনাকে রাজপথের দাবীতে রূপান্তর,
কখনো মিছিলের স্লোগানের সাথে করতালি মেলানোর মত দীপ্ত প্রাণোচ্ছল দাপট উল্লাস।।


তারপর বয়সের মাঝে একটা স্থিতিকাল এসে পরা,
ধীরে ধীরে বয়সের ভারে নুইয়ে পরে স্তম্ভিত হয়ে হারিয়ে যাওয়া,
জীবনের সেই কোলাহলকে নিজের করে ফিরে পেতে ব্যর্থ আক্ষেপ,
অতঃপর নিজেকে সঁপে দেয়া মৃত্যুর দ্বারে।।


মানবজীবনের এইতো একটা দিনক্ষণ কাল ব্যাপ্তি,
চিঠির কালি হওয়া সেই রক্তের একসময় জমাট বাঁধা।
দেহের প্রতিটি অংশে আছরে পরা মাটির; খাদক হয়ে উঠা,
অপরূপ পৃথিবীর বুক থেকে নিজেকে মুছে ফেলা,
এইতো মানবজীবন যেন এক ক্ষণিক সময়ের মুসাফির।।


(আমি পৃথিবীস্থ সব কিছুকে পৃথিবীর জন্যে শোভা করেছি, যাতে লোকদের পরীক্ষা করি যে, তাদের মধ্যে কে ভাল কাজ করে।।
এবং তার উপর যাকিছু রয়েছে, অবশ্যই তা আমি উদ্ভিদশূন্য মাটিতে পরিণত করে দেব।।
সুরাঃ কাহফ, আয়াতঃ ৭-৮)


০৩-০৬-২০১৭