ছ'টি মাস গেল চোখের পলকে
হাসিয়া খেলিয়া কবে,
স্বামী-মুখ খানি আঁকিয়া হৃদয়ে
সোহাগিনী বৈভবে।
সুখের পিছন ছুটিয়া কখন
দুঃখ হইয়াছে খাড়া,
দেখে নাই ভাবিয়া কষ্মিনকালে
পায় নাই তার সাড়া।
স্বামীর সোহাগে হইয়া সোহাগিনী
আবেশে কাটিল দিন,
কোন ছেদ দিয়া ঢুকিল বেদনা
সুখেরে করিল ক্ষীণ।
সেই দিনও স্বামী ঘরেতে  ফিরিল
সব রোজকার মতো,
সেই দিনের কথা ভুলিতে পারেনা
হিয়া করে পীড়াহত।


দিনের আলো নিভিয়াছে কবে
সাঁঝের মায়ারে ভুলি,
সাঁঝের ধরাও রাতের কোলেতে
ঝুঁকিয়াছে হাই তুলি।
হাঁটুরে দিনের খাটুনে দেহখানা
বালিশে হেলান দিয়া,
স্বামী ঝাড়ে তারি ক্লান্তির বিষ
ঘুমের তন্ত্রী নিয়া।
এমনি ক্ষণেতে ছোট ননদিনী
জাগাইলো আসি তাহারে,
ঘুমাইছো নাকি বড় ভাইজান
বাজান ডাকিছে তোমারে।
বাপজান তারি অতি পাকা লোক
স্বরেতে বজ্র ঝরে,
ত্রস্ত সদাই বাড়ির সকলে
মাথা তুলেনা ডরে।
লক্ষী পড়িছে কূট-কলে ধরা
বিষয়ের বাড়াবাড়ি,
নামধাম আর জোত-জমি জোরে
কয়না কাহারে ছাড়ি।


স্বামী গিয়াছে বাবার ঘরেতে
ফিরিতে হইবে দেরী,
রাজ্যের ঘুম চোখেতে আসিয়া
করিতেছে গড়াগড়ি।
আধেক রাতে স্বামী ফিরিলো
ডাকিলো শান্ত স্বরে,
'ঘুমায়েছো নাকি?' কপালেতে হাত
রাখিল সোহাগ ভরে।
'কাল সকালে তোমাগো বাড়ি
যাইতে হইবে দু'জনায়',
চমকিয়া উঠে বধূ তারি শুনি
বুকে ডর খেলে যায়।
উঠিয়া বসিয়া জিজ্ঞাসে স্বামীরে
'কি হইয়াছে বল মোরে!'
'ঘুমাও এখন সব কথা খুলিয়া
বলিবো তোমারে পরে'।
মন আনচান কিষাণ বধূর
বিষয় কি জানিবারে,
মাথা রাখিয়া স্বামীর বুকেতে
জিজ্ঞাসিলো নরম স্বরে।
জানিতো কি সেদিন ধীরে এক
বিষ বৃক্ষের চারা,
ডালপালা লইয়া যমের মতন
সম্মুখে হইবে খাড়া?
সেই যে আসা বাপের বাড়ি
নিতে স্বামী আসে নাই,
সোনার থালার ধন করি চুরি
কে দিল ভরিয়া ছাই!
কি কথা লইয়া বাপের সাথে
হইল তারি রাগারাগি,
বুঝিবার আগেই কপাল ভাঙ্গিল
হিয়ারে লইলো দাগি।
দুই দিন পরে শ্বশুর আসিল
সাথে লয়ে দু'চার জন,
বাপের সহিত বচসা হইল
লইয়া বিবাহের পণ।
শ্বশুর রাগিলো 'কি দাম তাহার
ওয়াদা যে খেলাপ করে'?
বাপে কহিল 'জানাও নাই কেন্
ছেলেটা যে দোজবরে'?
এক কথা আনিল অন্যেরে টানি
রাগে রাগে বেসামাল,
দুই পক্ষের লোক জন বসিয়া
করিল তাহার হাল।
আকাশ ভাঙ্গিল মাথার উপরে
আন্ধার নামিল চোখে,
সোনার অঙ্গে ছায়া পড়িল
বদনাম লোক মুখে।
চপল চরণ স্থবির হইল
মুখর মুখেতে তালা,
নিদয় বিধি বাম হইল
সুখের ঘরেতে জ্বালা।।