***** এই স্পর্শকাতর লেখাখানি আসনের  দুইজন শ্রদ্ধেয়া কবি শ্রীমতী রিনা বিশ্বাস (হাসি) ও শ্রীমতী অনুরাধাকে উৎসর্গ করলাম। ভুলত্রুটির জন্য ক্ষমা করবেন। *****


হঠাৎ সেদিন চিৎকার চেঁচামেচিতে    
ভেঙে গেল মাঝরাতের গভীর ঘুম
চোখ মেলে দেখি চারিপাশে জমাট বাধা
শুধুই বিদঘুটে আঁধারের মেলা।


এই প্রথম, রাত দুপুরে উচ্চস্বরে কান্নার রোল
কে কাঁদে এ গহীন নিশীথে?
চৌধুরী বাড়ির, সদ্য যৌবন পেরোনো
নতুন বৌদি নাকি?
হ্যাঁ আমরা সকলে জানি তারে নতুন বৌদি নামে
শুনেছি সে নাকি বাঁঝ!  
অনেক ডাক্তার, কবিরাজ, বৈদ্য ও হাকিমের প্রচেষ্টা সব গেছে সার
চৌধুরী গিন্নীর গলায় প্রায়তঃ আক্ষেপের সুর সর্বজনবিদিত
“ঘরে বাঁঝ স্ত্রী থাকলে বংশরক্ষা হবে কি করে?”


সামনের বন্ধ জানালার ওপার থেকে  
দিনের বেলায় অহরহ ঝগড়া ঝাটি,
চুলোচুলি, কান্নাকাটির শব্দ কানে বাজে
পরিশেষে ঝগড়ার মাঝেই ভালোবাসার মিষ্টতা
তারপর মান অভিমান ভাঙার পালা,
সবই ঠিক আছে
তবে এই গহীন নিশীথে?  
উফ! কি অসহ্য যন্ত্রণা!
অযথা কেন নাটকের সময়ের আকস্মিক পরিবর্তন?

অনেকদিন আগেই, সেই ছোট্টবেলায় শুনেছিলাম  
ছোট চৌধুরীর প্রথম বউটি নাকি পেটে ধরেছিল  
এক কন্যা সন্তান
বাড়ির দণ্ডপ্রতাপ গার্জেনের আদেশে  
অততঃ বাকীটা ইতিহাস।


চৌধুরী গিন্নীর সুবাদে সমাজে রটেছিল
তাদের বৌমা নাকি চরিত্রহীনা কুলাঙ্গিনি, একটু য়ে ধরনের  
সুতরাং এহেন কুলাঙ্গিনির যথাশীঘ্র বিদেয়ই কাম্য
না বিদেয় হয়নি সে বৌটির    
তবুও বেজেছিল ঢাকের কাঠি
সাথে পেটপুরে মহাভোজের আয়োজন
বড় চৌধুরীর বড় গোঁফের তলে ইয়া বিশাল হাসি
এবার কিন্তু হেব্বি বউ এনেছে ছোট চৌধুরী
দেখতেও বেশ জব্বর
কি সুন্দর কোকিলকণ্ঠী।


ওদিকে স্বামী পরিত্যক্তা পুরনো বউয়ের
অসহায় জীবন, পরণে ছেঁড়াফাটা নোংরা শাড়ি
অপরূপ সুন্দরীর দুধ আলতা গায়ের রঙের উপর  
কেমন যেন কালচে রঙের প্রলেপ
চেহারাখানিও হয়েছে জীর্ণ, হাড় কিলবিলে  
উদাস নয়নে সারাটি দিন বসে থাকে পুকুরঘাটে  
দেখে সত্যি সত্যিই মায়া লাগে।


একদিন শুনশান দুপুরে চৌধুরীর গিন্নীর চোখ গলে
চুপিচুপি গিয়েছিলাম সে পুকুরপাড়ে  
সেক্ষণে বৌদি কড়ে আঙুলের নখ খুঁটছিল আনমনে
জিজ্ঞাসা করেছিলাম “ তোমার খুব কষ্ট না দিদি?”
সস্নেহে বুকে জড়িয়ে, জীর্ণ হাতখানি মাথায় আলতো বুলিয়ে
মলিন হাসি হেসে বলেছিল “ধুর পাগল! এই তো বেশ আছি”
আমার এমন ছোট্ট ভাই থাকতে আবার দুঃখ কীসের?  


কিছু মাস পরে ছাত্রাবাস থেকে ফিরে  
শুনেছিলাম দুঃসংবাদটি  
বড় বৌদি নাকি গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে
না বিশ্বাস করিনি!
আজও দেখি পুকুর ঘাটে পা দুলিয়ে বড় বৌদির হাতছানি
আর সেই মলিন হাসি।  


মনের কোণে নিরন্তর এক নতুন প্রশ্ন জাগে  
নতুন বৌদিরও কি হবে একই দশা,  
আবারও কি বাজবে বিয়ের সানাই,  
আবার কি ছোট চৌধুরী বসবে ছাতনা তলায়,  
আর পাড়া প্রতিবেশীদের জন্য পেটপুরে ভুরিভোজের পুনঃ আয়োজন?