শৈশবের বেহায়া দিনগুলো খুব মনে পড়ে
পুকুরের জলে দীর্ঘক্ষণ ঝাঁপানোর শেষে
চোয়ালের নীচে শ্যাওলার ছাপ
রগড়ে রগড়ে চোয়ালের দুরবস্থা
নিশ্চিত একপ্রস্ত পিটুনি অবধারিত ছিল বাবার হাতে
এখনও অনুভব করি স্বর্ণাভ ক্ষণগুলো অজান্তে।


আখের ক্ষেতের হাড় হিম করা ভয়াবহতা
কে যেন চাক্ষুষ করেছিল কালো ভুতের অস্তিত্ব
না!! আখ খাওয়া আর হয়নি সেদিন
আর কোনও দিন হয়নি।
সন্ধ্যার নামাজের শেষে,
আলো আঁধারের রংমিলান্তির  ক্ষণে
দিব্যি, হাওয়ায় নিত্য কেউ উড়ে যায়
অনেকেই নাকি দেখেছিল,
কিন্তু আমার চাক্ষুষ হয়নি কোনও দিনই
বন্ধুরা শুনিয়েছিল, পালকের রথে চড়ে
পিরসাহেবের আনাগোনার রোমাঞ্চকর সব গল্প,
কাঁটা দিত গায়ে,শিহরণ জাগত কোমল মনে
ভয়ে খুঁজতাম মায়ের কোল।


সেদিনের নিভে যাওয়া সলতেটুকু এখনও জীবন্ত
সাহসের অভাবে জ্বালানো হয়নি পুনরায়
দাদু বলেছিল ,দূরে অশ্বত্থ গাছের ডালে নাকি অশরীরীর বাসা
শিরশিরে হাড় হিম করা কল্পনার কটমট শব্দ
কতবার শুনেছি নিজ কানে
দিনের আলোয় দীর্ঘক্ষণ পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছি
না তাদের অস্তিত্বের প্রমাণ পায় নি।
আশ্চর্য  গল্পগুলো আজও ঘুরপাক খায়
এতোগুলো বছর পরে
শুধু গল্পের চেনা মুখগুলো বদলে গেছে
বিষয়বস্তু কিন্তু এখনো বদলায়নি।


এখন তো আর নেই সেদিনের মাটির দিয়া,
নেই পিদিমের আলো, কেরোসিনের লম্ফ
নেই সেই ক্ষেত খালিয়ান, ভর্তি গোয়ালঘর
নেই রেডিওতে নাটক শোনার রোমঞ্চতা
নেই নিঝুম গহীন রাতে পঞ্চরসের পালা,
নেই হাডুডু খেলার উন্মাদনা, শেষে দু-দলের তুমুল ঝগড়া
নেই আলকাপের গান, পুতুল নাচ,
ফকিরের অদ্ভুত হাঁক
দশমীর দিনে ষাঁড়ের দৌড়
সিঁদেল চোর, ডাকাতের ভয়....
নেই অনেক কিছুই।


গ্রামগঞ্জেও এখন আধুনিকতার ছোঁয়া
ডিজিটালের হওয়ায় বেশ বদলে যাচ্ছে জীবনধারা
এখন বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলে রাতের আঁধারে
আর ঝিঁঝিঁ পোকাদের ডাক তো এখন ইতিহাস
শুধু জানতে ইচ্ছে করে, খুব ইচ্ছে করে
শৈশবের ভুতগুলো কি এখনও বেঁচে?
আর বয়োজ্যেষ্ঠদের রসালো গল্প শোনানোর মানসিকতা।।