ক্লান্ত পৃথিবী যখন গভীর ঘুমে নীরব-স্তব্ধ,
ঝিঁঝিঁপোকা'রা চারিদিক গেয়ে যায় গান;
মনে হয় যেন সুনসান নিঝুম রাত্রির সাথে
কতো সহস্র বছরের বন্ধুত্ব আমার-
কতনা মায়ার বাঁধনে জড়ানো এ'জীবন!
পাশাপাশি নিঃসঙ্গ রাত্রি আর আমি
নির্ঘুম কাটিয়ে দিলাম কত'রাত- কতকাল!
পথেঘাটে প্রান্তরে শূন্যময় নিকষ অঁধারের
বুক চিরে দেয়া রাতজাগা জোনাকি যখন
ধীরেধীরে ক্লান্ত-তখনো সরব ঘুমহীন নয়ন
একাকীত্বে বেদনাহত রাতের কান্নার শব্দ
শুনে ঘরের চালে- গাছের পাতায় পাতায়।
কতটা কষ্টের অঘাতে চোখে অশ্রু গড়ায়,
ব্যথা করে চিনচিন বুকের বাম দিকটায়...
ঘুম মনে হয় বাসিন্দা কোন অচিন দেশের!


অজানা কোন দূরহি কান্নার আওয়াজ
যেন বিষমাখা তীর- বেদনায় ভাঙে পাঁজর,
সে-কান্নার সুরে না জানি কত সহস্র বছর
চাঁপা কষ্টের আর্তনাদ আসে ভেসে! ভাদর
বাদল ভরে নয়ন- বুকে মহাপ্রলয়ের ঝড়
ছিন্নভিন্ন করে যায় কত যত্নে সাজানো স্বপ্ন!
নির্যাতিত দুর্বল মানুষের বুকফাটা চিৎকার
হয়তো কাঁপায় স্রষ্টার আসন-করে দেয় স্তব্ধ!
আজ মানবতা হারা পৃথিবীতে মানুষ অন্তর
পাষণ্ড লোভী একেকটা হিংস্র জানোয়ার-
খাবলে খায় মানব দেহ-চোষে নেয় সব রক্ত।


ভাঙনের শব্দে যেন শ্রবণ-অক্ষম ভালোবাসা
ছেঁড়া বাঁধন আত্মার, চাইলেও যাবেনা বাঁধা-
অর্থহীন ভালোবাসা প্রিয়ার কাছে মূল্যহীন!
মানুষের ভালোবাসা সব স্বার্থে পড়েছে ঢাকা।
অবহেলা নিয়ে চিরকাল বাঁচে গরীব-দুর্বল,
স্বজন হারানো ব্যথা বুঝেছি কতটা কষ্টকর!
কি দুঃসহ আগুনে পুড়ে দিনরাত বুঝবেনা;
পুতুলের মতো ভাঙবেই ধনী- গরীবের অন্তর।


আমি অন্তর ভাঙা এক যুবক! সহজেই বুঝে
যাই কান্নার সুরে-দুঃখটা কত গভীর,অনুভবে
শিহরিত হই বাস্তব কত কঠিন, কতটা নির্মম
হতে পারে মানুষ! পুড়ে না কখনো বিবেকের
ধ্বংসনে এরা,ওদের নাই কোন মানবতা,সম্ভ্রম।
নিঝুম রাত্রির সাথে করি শেয়ার মনের যতো
দুঃখ কষ্ট, কিভাবে গড়বে আত্মার-সেতুবন্ধন
মানুষে মানুষে! ভুলে জাতিভেদ, বৈষম্যহীন
সমাজ পৃথিবী-পারবোনা হয়তো দেখে যেতে!
কিভাবে হবে মানবিকতার বিজয়! অচেতন
মানুষ গুলো কি আর পাবেনাকো কভু চেতন!


যদি জানতে বন্ধু- এ'বুকে কতটা দুঃখ বেদন
জমে আছে, কত অসহ্য যন্ত্রণাময় প্রতি'রাত
করছি পার নির্ঘুম! স্বপ্ন ভাঙনের এই ক্রন্দন
সুর পৌঁছে না তোমার সুখ-শয্যায়, বেমালুম
ভুলে থাকো সব! বৈষম্যের দুঃসহ কষ্ট'রা সব
আমার ভেতর করে চলেছে ক্ষয়, কষ্টের বন্ধু!
এ'যে মহা-বেদনার সিন্ধু হয়ে করছে বসবাস
বুকটার ভেতর! ভালোবাসা হারানোর ব্যথা
কতটা নিষ্ঠুর হতে পারে আমি জানি,জানেনা
কেবল মানুষরূপে মুখোশ জানোয়ার গুলো!
তাইতো যুগে যুগে কত সহস্র রাজন-সাগর
মানবতার গায়ে থুথু ছিটিয়ে নেয় চির-বিদায়!


আমার চোখে ভেসে উঠে শেষ বিদায়ের ক্ষণ,
কষ্টের বাড়ে তীব্রতা, ভুলে যাই প্রিয়ার সে'মুখ!
যদি নাইবা থাকে প্রেম মানুষে, পৃথিবীর সুখ
মানবতার যদি না হয় বিজয়- কষ্টের পূর্বক্ষণ
এ'যে সমগ্র মানবজাতির! ধ্বংস হবে সমাজ,
বিশ্বের বুকে মানবিকতার হবে চূড়ান্ত অবক্ষয়!


কষ্টের ভারে ভারি আকাশের বুকচেরা বরিষণ
ভিজিয়ে চলেছে রাতের আঁধার।বৃক্ষ-তরু'লতা
সব জড়সড়-পথহারা পাখিটির চিত্ত বেদনাময়,
প্রতীক্ষারত চোখ দেখবে আবার নতুন সকাল,
উচ্ছ্বাস-ভালোবাসায় ভরে উঠবে তার পৃথিবী।


বুকের ভেতর জড়ো হওয়া কষ্ট'রা যেন-ভারী
মেঘ হয়ে ঘুরছে আমার দুই চোখের পাতায়,
প্রবল বর্ষণে মুহূর্তে ভাসিয়ে দেবে হৃদয় ভূমি।
তবু আমি আশাহত নই'দেখি স্বপ্ন, মানবতায়
ভরে উঠবে মানুষের অন্তর, প্রেমানন্দে ধরণী
সাজবে'ই,মহাকাশ ফাঁড়ি জাগবে প্রভাত সূর্য।