যেদিন আমি হারিয়ে যাবো, বুঝবে সেদিন বুঝবে,
অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুছবে-
                      বুঝবে সেইদিন বুঝবে!
                  ছবি আমার বুকে বেঁধে
                  পাগল হ’লে কেঁদে-কেঁদে
                  ফিরবে মরু কানন গিরি,
                  সাগর আকাশ বাতাস চিরি’
                  যেদিন আমায় খুঁজবে-
                      বুঝবে সেদিন বুঝবে!


স্বপন ভেঙে নিশুত্‌ রাতে জাগবে হঠাৎ চমকে,
কাহার যেন চেনা-ছোঁওয়ায় উঠবে ও-বুকে ছমকে,-
                      জাগবে হঠাৎ চমকে!
                  ভাববে বুঝি আমিই এসে
                  ব’সনু বুকের কোলটি ঘেঁষে,
                  ধরতে গিয়ে দেখবে যখন
                  শূন্য শয্যা! মিথ্যা স্বপন!
                  বেদ্‌নাতে চোখ বুঁজবে-
                      বুঝবে সেদিন বুজবে।


গাইতে ব’সে কন্ঠ ছিঁড়ে আস্‌বে যখন কান্না,
ব’লবে সবাই-“সেই য পথিক তার শেখানো গান না?’’
                      আস্‌বে ভেঙে কান্না!
                  প’ড়বে মনে আমার সোহাগ,
                  কন্ঠে তোমার কাঁদবে বেহাগ!
                  প’ড়বে মনে অনেক ফাঁকি
                  অশ্র”-হারা কঠিন আঁখি
                  ঘন-ঘন মুছবে-
                      বুঝ্‌বে সেদিন বুঝবে!


আবার যেদিন শিউলি ফুটে ভ’রবে তোমার অঙ্গন,
তুলতে সে ফুল গাঁথতে মালা কাঁপবে তোমার কঙ্কণ-
                      কাঁদবে কুটীর-অঙ্গন!
                  শিউলি ঢাকা মোর সমাধি
                  প’ড়বে মনে, উঠবে কাঁদি’!
                  বুকের মালা ক’রবে জ্বালা
                  চোখের জলে সেদিন বালা
                  মুখের হাসি ঘুচবে-
                      বুঝবে সেদিন বুঝবে!


আসবে আবার আশিন-হাওয়া, শিশির-ছেঁচা রাত্রি,
থাকবে সবাই – থাকবে না এই মরণ-পথের যাত্রী!
                      আসবে শিশির-রাত্রি!
                  থাকবে পাশে বন্ধু স্বজন,
                  থাকবে রাতে বাহুর বাঁধন,
                  বঁধুর বুকের পরশনে
                  আমার পরশ আনবে মনে-
                  বিষিয়ে ও-বুক উঠবে-
                      বুঝবে সেদিন বুঝবে!


আসবে আবার শীতের রাতি, আসবে না ক আ সে-
তোমার সুখে প’ড়ত বাধা থাকলে যে-জন পার্শ্বে,
                      আসবে না ক’ আর সে!
                  প’ড়বে মনে, মোর বাহুতে
                  মাথা থুয়ে যে-দিন শুতে,
                  মুখ ফিরিয়ে থাকতে ঘৃণায়!
                  সেই স্মৃতি নিতো ঐ বিছানায়
                  কাঁটা হ’য়ে ফুটবে-
                      বুঝবে সেদিন বুঝবে!


আবার গাঙে আসবে জোয়ার, দুলবে তরী রঙ্গে,
সেই তরীতে হয়ত কেহ থাকবে তোমার সঙ্গে-
                      দুলবে তরী রঙ্গে,
                  প’ড়বে মনে সে কোন্‌ রাতে
                  এক তরীতে ছিলে সাথে,
                  এমনি গাঙ ছিল জোয়ার,
                  নদীর দু’ধার এমনি আঁধার
                  তেম্‌নি তরী ছুটবে-
                      বুঝবে সেদিন বুঝবে!


তোমার সখার আসবে যেদিন এমনি কারা-বন্ধ,
আমার মতন কেঁদে-কেঁদে হয়ত হবে অন্ধ-
                      সখার কারা-বন্ধ!
                  বন্ধু তোমার হান্‌বে হেলা
                  ভাঙবে তোমার সুখের মেলা;
                  দীর্ঘ বেলা কাটবে না আর,
                  বইতে প্রাণের শান্ত- এ ভার
                  মরণ-সনে যুঝ্‌বে-
                      বুঝবে সেদিন বুঝ্‌বে!


ফুট্‌বে আবার দোলন চাঁপা চৈতী-রাতের চাঁদনী,
আকাশ-ছাওয়া তারায়-তারায় বাজবে আমার কাঁদ্‌নী-
                      চৈতী-রাতের চাঁদ্‌নী।
                  ঋতুর পরে ফির্‌বে ঋতু,
                  সেদিন-হে মোর সোহাগ-ভীতু!
                  চাইবে কেঁদে নীল নভো গা’য়,
                  আমার মতন চোখ ভ’রে চায়
                  যে-তারা তা’য় খুঁজবে-
                      বুঝ্‌বে সেদিন বুঝ্‌বে!


আস্‌বে ঝড়, নাচবে তুফান, টুটবে সকল বন্ধন,
কাঁপবে কুটীর সেদিন ত্রাসে, জাগবে বুকে ক্রন্দন-
                      টুটবে যবে বন্ধন!
                  পড়বে মনে, নেই সে সাথে
                  বাঁধতে বুকে দুঃখ-রাতে-
                  আপনি গালে যাচবে চুমা,
                  চাইবে আদর, মাগ্‌বে ছোঁওয়া,
                  আপনি যেচে চুমবে-
                      বুঝবে সেদিন বুঝবে।


আমার বুকের যে কাঁটা-ঘা তোমায় ব্যথা হান্‌ত,
সেই আঘাতই যাচবে আবার হয়ত হ’য়ে শ্রান্ত–
                      আসবো তখন পান্ত’।
                  হয়ত তখন আমার কোলে
                  সোহাগ-লোভে প’ড়বে ঢ’লে,
                  আপনি সেদিন সেধে কেঁদে
                  চাপ্‌বে বুকে বাহু বেঁধে,
                  চরণ চুমে পূজবে-
                      বুঝবে সেদিন বুঝবে!