[দাশবাবুর "আট বছর আগের একদিন" এর প্যারোডি!
ওনার ভক্তেরা আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন।
ঢাকার রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি দেখে বিরক্ত এবং অনুপ্রাণিত হয়ে লেখা...]


______________________________________________


শোনা গেল মিরপুর সড়কে
এসে গেছে কোদাল হাতে লোকে;
কাল দিনে - আষাঢ়ের  দুপুরে
যখন উঠেছে গগনে বৃষ্টি শেষে সূর্য
রাস্তা খুঁড়িতে হ'লো তারা অধৈর্য।


ঝকঝকে রাস্তা ছিল - গাড়িও চলছিল;
অক্ষত পিচ ছিল, স্পিড ছিল - গাড়িতে - তবু তারা দেখিল
কোন খুঁত? রাস্তা কেন ভাঙতে হলো তার?
অথবা হয়নি রাস্তা ভাঙা বহুকাল - মিরপুর রোডে রাস্তা ভাঙে এবার।


এই রাস্তা চেয়েছিল বুঝি!
খোঁড়া ফুটপাতে ধুলো আর কাদায় মাখামাখি
বৃষ্টির ঝিরিঝিরি ধারায় নাকানি চুবানি খায় এবার।
এ রাস্তা আগের মত মসৃণ হবে না আর।


'আগের চেয়ে মসৃণ হবে, হবে না ক্ষতি আর
মসৃণ করিবার কি বাসনা আর সংকল্প তার
কারো কথা শুনিবে না ধারিবে না ধার
কেউ ঠেকাতে এলে দেবে না ছাড় - '
এই কথা বলেছিল তারে
বর্ষার প্রথম বৃষ্টির পর চকচকে আকাশে
তার অফিসের জানালার ধারে
গাধার দাঁতের মত দাঁত কেলিয়ে এক ঠিকাদার এসে।


তবুও তো গাধা রাস্তা চলে;
গরু-ছাগল আরো দুই ডিগ্রি বেশি ভাঙা রাস্তা দিয়ে চলে
নিজ গন্তব্যে ফেরার উষ্ণ আবেগ আর গুঁতোগুঁতি-ভিড় ঠেলে।


টের পাই রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে ঝুম বর্ষা শেষে
চারিদিকে তেলবাজ আমলা আর ঠিকাদারের সীমাহীন চাটুকারিতা;
ঠিকাদার তার মনোবাসনা নিয়ে মেয়রের অফিসে বসে থাকে।


কত বাস, রিক্সার এই মিরপুর রোড ধরে ছুটে চলা;
দেখিয়াছি কত দুরন্ত বাস-প্রাইভেট কারের গুঁতোগুঁতির খেলা।


এই মসৃণ রাস্তা যেন - যেন কোনো দৌড়ের মাঠ
অধিকার করে আছে ঠিকাদারের মনের ঘাট;
দুরন্ত বাসের ধাক্কা আর চাপে রিক্সা, প্রাইভেট কার
মরণের সাথে লড়িয়াছে;
বৃষ্টি থেমে গেলে পর ঠিক  দুপুরে ফুটপাতে গিয়েছিলে
ওয়াসা আর তিতাস গ্যাসের দেয়া একগুচ্ছ ম্যাপ হাতে একা;
যে রাস্তা বাস, রিক্সা, প্রাইভেট কারের - সে রাস্তার সাথে হয় নাকো দেখা
এই জেনে।


ফুটপাতের পাথর-কংক্রিট
করেনি কি প্রতিবাদ? রিক্সার ভিড় এসে রাস্তার মোড়ে
করেনি কি হুড়োহুড়ি?
রিক্সাওয়ালা এসে
বলেনি কি : "মসৃণ রাস্তা গেছে বুঝি বর্ষায় ভেসে?
চমৎকার! -
মেরামত হয়ে যাক দুয়েকটা সড়ক এবার।"
জানায়নি রিক্সাওয়ালা এসে এ তুমুল গাঢ় সমাচার?


রাস্তার এই মসৃণতা - গাড়ির ছুটে চলা বর্ষার শুরুতে -
                তোমার অসহ্য বোধ হল -
রাস্তা কেটে হৃদয় জুড়োল
ফুটপাতে-ড্রেনে
বেকুবের মত ধুলো, কাদা মাখা শরীরে!
শোনো
তবু এ রাস্তার গল্প; কোনো
জ্যামে জর্জরিত হয় নাই;
পিচঢালা রাস্তার আইল্যান্ড
কোনো দিন ভাঙে নাই, এ যেন ইংল্যান্ড,
সময়ের উদ্বর্তনে উঠে এসে রাস্তা
সস্তা বালু আর সিমেন্টের বস্তা
ফেলেছে ধারেতে;
দুর্ঘটনার গ্লানি আর বেদনাতে
এ রাস্তা কোনোদিন কেঁপে ওঠে নাই;
তাই
বর্ষার প্রথম দিনে
কোদাল আর শাবল দিয়ে খুঁড়ছে তাকে আনমনে।


জানি - তবু জানি
মসৃণতা-জ্যামহীনতা-নয় সবখানি
পিচ নয়, স্পিড নয়, সৌন্দর্য নয়-
আরো এক অদ্ভুত ভাবনা
তাহাদের মগজের অন্তর্গত গোবরের ভিতরে
খেলা করে;
তাহাদের ক্লান্ত করে
ক্লান্ত-ক্লান্ত করে;
রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িতে
সেই ক্লান্তি নাই
তাই
বর্ষার প্রথম দিনে
কোদাল আর শাবল দিয়ে খুঁড়ছে তাকে আনমনে।


তবু রোজ বাসে উঠে আমি চেয়ে দেখি, আহা,
রিক্সাওয়ালা, বাস ড্রাইভার তাহাদের সিটে বসে,
চোখ পাল্টায়ে কয় : "মসৃণ রাস্তা গেছে বুঝি বর্ষায় ভেসে?
চমৎকার! -
মেরামত হয়ে যাক দুয়েকটা সড়ক এবার।"
হে প্রগাঢ় রিক্সাওয়ালা, বাস ড্রাইভার, আজো চমৎকার?
আমি তোমার চেয়ে ধুরন্ধর হব-মসৃণ সুন্দর রাস্তাটাকে আমি
ডুবিয়ে দেব অথৈ জলে বর্ষার;
আমি একাই খুঁড়ে যাবো ঢাকা শহরের সমস্ত রাস্তার ধার।


______________________________________________


ফেব্রুয়ারি ৭, ২০২২