সবজান্তাভাবে দর্শন এখন নিমজ্জিত
--------------------------------------------------
কবি মাত্রই দার্শনিক বা চিন্তাশীল যে কোন মানুষই দার্শনিক ,যদি এই কথাটি সত্য মেনে চলি তাহলে মানুষ মাত্রই দার্শনিক । পুর্ব ও পুর্বাপর অবস্থার পর্যবেক্ষন  বিবেচনায়,  বুদ্ধি ও যুক্তির সমন্বয়ের ফলগত অভিব্যাক্তির প্রকাশই দর্শন নয় কি ? আর এই অধিক পর্যালোচনায় উচ্চারিত “কোন ভাবাবেশ” সমসময়ে উচ্চারিত সত্য,  যত অধিক মানুষের চিন্তাকে চিন্তায় নিযুক্ত করতে পেরেছে বা ভাবাতে পেরেছে তারই নামই  কি  দর্শন বা দার্শনিকতা ?!


“নিজেকে জানো”  এত ছোট অথচ এর ব্যাপ্তি এত বিশাল যে এই বোধ ছাড়া কোন চিন্তা যেন চিন্তাই নয়,  আবার “ পড় তোমার রবের নামে , যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন” চিরন্তন মনে হয় ।


“তোরা যে যা বলিস ভাই ,আমার সোনার হরিন চাই” পুরনো কিন্তু রবীন্দ্রনাথ যখন উচ্চারণ করেন তখন তার ব্যাপ্তি হয়ে যায়  বিশাল ,এত বেশি  মানুষের চিন্তায় দাগ ফেলে যে জীবনাচরণের অংশ মনে হয় ।


এভাবেই যুগে যুগে কোন কোন দর্শন বা ভাব বা দার্শনিক মতাদর্শ চিরস্থায়ী রূপ লাভ করে । আবার কোন কোন চিন্তা সময়ের বির্বতনে চলিত চিন্তায়  যুক্তিহীন প্রমাণিত হয়ে দূরে সরে যায় বা হারিয়ে যায় । কিন্তু সমসময়ে যে ব্যাপকতা লাভ করে তাতে মানুষের চিন্তার প্রসারতা অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়ে যায় । এভাবেই  মানুষ এর  চিন্তা বা দর্শন অগ্রসর হতে থাকে এবং তা ধারাবাহিক ভাবেই এগিয়ে চলেছে । চলার এই ধারাবাহিকতায় নতুন পুরাতন হয়েছে আবার কখনো কখনো পুরাতন সামনে এসে দাড়িয়ে গেছে নতুনরূপে । বিশাল এই পথ পরিক্রমায় আমাদের চিন্তায়ও দার্শনিকতা থাকবে এটাই সত্য ।


শুন্যপাত্রে একফোঁটা পানির অস্তিত্ব যতটা প্রবলভাবে প্রকাশিত হয় ভরা পাত্র ভরে যাওয়া এককথা নয় ।


আমাদের যুগে কবিতায় বা লেখায় দার্শনিকতার ছোঁয়াচ ঠিক তেমনভাবে  ধরা দেয়না বা খুব বেশি আলোড়িত করেনা । “প্রমানিক মন”  ভাবের চেয়ে বাস্তব প্রমানের দর্শনে এখন বিশ্বাসী ,  যা কবিতার জন্য মর্মান্তিক । ভাবের উন্মাদনা না থাকলে কবিতা ঠিক জমে ওঠেনা ।


যদি কেউ আজ এমন উচ্চারন করে “ প্রশ্ন করার সক্ষমতাই জ্ঞান” খুব বেশি কি আপনাকে ভাবাবে ? না । কারণ এমন মনে হবে যেন কতকাল ধরে শুনে এসেছি এবং তা  সত্য । সমভাবের এত শব্দ আমাদের চিন্তায় এখন ঢুকে  আছে যে কোন কিছুই নতুন মনে হয়না । এটা সুরের ক্ষেত্রেও ঘটেছে ,মনে হবে এত শোনা সুর । কবিতায় দার্শনিকতা এখন এরকমই । শোনা শোনা জানা জানা সব । তারপরেও কেউ কেউ যে  ভাবায় , ওটাইবা কম কেন ?  
সমসামময়িক লেখায় বা কবিতায় প্রেমের বা খুবই হৃদয় নিংড়ানো over act (এর বাঙলা প্রতিশব্দ আমার জানা নেই) কিছু দর্শন বা ভবালুতা চোখে পরে ,যা এখনো অনেক মানুষকেই একটা বয়স পর্যন্ত টানে । তারপর আর কোথায় ?


আগে অনেক প্রশ্ন ছিল এখন আর তেমন কই?  
–সবজান্তাভাবে দর্শন এখন  অনেকটাই নিমজ্জিত ।  


বুলবুল আহমেদ
সিউল