বাড়ির মালিক চলে গেছেন 45 বছর আগে । 1971 সালের 14 সেপ্টেম্বর । কিন্তু এখনও এবাড়ির রন্ধ্রে রন্ধ্রে রয়েছে সেই মানুষটার স্মৃতি ।
দশকের পর দশক পেরিয়ে এসে 4 কাঠা জমির উপর বানানো তিনতলা বাড়িটি আজ জরাজীর্ণ । সেই বাড়ি বোধহয় এবার যেতে বসেছে প্রোমোটারের হাতে । তেমনটাই জানাচ্ছেন অমলশঙ্কর বন্ধ্যোপাধ্যায় ।
ঠাকুরদা কিংবদন্তি সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্ধ্যোপাধ্যায় এই বাড়িরই ঘরে বসে লিখেছেন কালজয়ী সব লেখা । বিভিন্ন ঘরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে মূল্যবান স্মারক । রয়েছে অপ্রকাশিত কবিতার খাতা, ডায়েরি, দুষ্প্রাপ্য সব ছবি । রয়েছে তারাশঙ্করের অটোগ্রাফ নেওয়ার খাতা । যে খাতার অন্যতম সেরা প্রাপ্তি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেওয়া অটোগ্রাফ । সংগে কবিগুরুর লেখা পংক্তি-
'ক্ষুধিতেরে ফাঁকি দেওয়া ছিল না ব্যবসা, বিধাতা দিয়েছে ফাঁকি তাই এই দশা ।' এমনই সব অমূল্য সম্পদ ।
বাড়িটির অস্তিত্বের সঙ্গে সঙ্গে যাদের ভবিষ্যত নিয়ে তৈরী হয়েছে অনিশ্চয়তা । তারাশঙ্করের বড়ো ছেলে সনৎকুমারের চতুর্থ পুত্র অমলশঙ্কর এ বাড়ীর একতলার বাসিন্দা । বাকি ঘরগুলো তালাবন্ধই থাকে । 12 কামরার এই বাড়ির শরিকের সংখ্যা জনা দশেক । এতজন মিলেও কেন রক্ষনাবেক্ষন করা যাচ্ছে না বাড়িটি ? উত্তরে অবসরপ্রাপ্ত ইতিহাসের অধ্যাপক অমলশঙ্কর বিষন্ন সুরে বলেন- 'আমরা সবাই মিলে আপ্রাণ চেষ্টা করছি যাতে এ বাড়িকে রক্ষা করা যায় । কিন্তু রক্ষনাবেক্ষনের জন্য বিপুল টাকা প্রয়োজন । সেই সংস্থান আমাদের নেই । তাই বাধ্য হচ্ছি প্রোমোটারের হাতে তুলে দিতে ।'


অমলশঙ্কর চিঠি লিখেছেন খোদ রাষ্ট্রপতিকে । জানিয়েছিলেন 1948 সালের জুলাই মাস থেকে মৃত্যু অবধি এ বাড়িতেই কাটিয়েছিলেন প্রয়াত সাহিত্যিক । এ পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতিকে বাড়িটি নায্য মূল্যে অধিগ্রহনের সুবন্দোবস্ত করার অনুরোধ জানান তিনি । সাহিত্য একাডেমি এ বিষয়ে কিছু করতে অস্বীকার করে । পরে জানানো হয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকেও ।
প্রস্তাব রাখা হচ্ছে বাড়িটির একতলায় একটি সংগ্রহশালা গড়ে তোলার । স্থাপন করতে হবে কালজয়ী সাহিত্যিকের মর্মর মূর্তি । পাশাপাশি এ বাড়ীর সমস্ত নির্মানের সঙ্গে যুক্ত রাখতে হবে তারাশঙ্করের নাম ।
হাঁসুলীবাঁকের উপকথা,  কবি, আরোগ্যনিকেতন, গনদেবতা-র মতো অসামান্য ও চিরকালীন উপন্যাসের রচয়িতার বাড়ি কি সত্যিই শেষ পর্যন্ত চলে যাবে প্রোমোটারের হাতে !


তথ্যঋণ-  দৈনিক "সংবাদ"