বিদ্যাধরীর গান


বিদ্যাধরী নদী, গাইত যখন গান,
বিকাল বেলা, উদাস মনে জাগত তাঁহার টান।
গাঙশালিকের কিচির মিচির মুছত প্রাণের জ্বালা,
দমকা শীতল নরম বাতাস লাগত কানে তালা।
গোধূলিতে যেতাম চলি বিদ্যাধরীর ধার,
সে ভুলাতো বিয়োগ ব্যথা, মুছত মনের ভার।


কলকলিয়ে চলতো গেয়ে বিদ্যাধরী নদী,
জোয়ার ভাটার জলের টানে বাঁচত নিরবধি ।
নিদাঘ বিকাল কাটত কবির বিদ্যাধরীর কূলে
ফিরত চেতন মনের মাঝে প্রিয়ার পরশ পেলে।
জ্যোৎস্না রাতে যেতাম চলি বিদ্যাধরীর ধার,
খেলত শশী জলের মাঝে, কাটত মনের ভার।


নদীর বুকে উঠত কত  ভাটিয়ালির সুর,
মাঝির গানে প্রাণের কথা ,বিরহ বিধুর।
পানসি নিয়ে যাচ্ছে চলি গহীন নদীর ডাকে,
বিদ্যাধরীর স্নেহের আবেশ বিদায় জানায় তাকে।
আর কি কভু দেখা হবে বিদ্যাধরীর ধার ?
গহীন নদী উঠল হাসি, মন টি হল ভার।


বিদ্যাধরীর জীবন মাঝে এলো ভাটার টান,
মুছল তাঁহার তটের রেখা ,স্তব্ধ হল গান।
পড়লো বাধা জোয়ার ভাটা, ভরল নদীর তল,
কোথায় যেন হারিয়ে গেল গাঙ-শালিকের দল!
কেওড়া,হেঁতাল মুখ লুকাল ভরল হরিৎ ধান,
বিদ্যাধরীর কাঁদন মাঝে, কেউ শোনেনি গান।


কল্লোলিত স্রোতস্বিনী গাইত যে গান আপন মনে,
জানে সবাই, জানে কবি, বাঁচে নদী জীবন-গানে ।
যে দিন হতে স্তব্ধ হল বিদ্যাধরীর গানের কলি,
সে দিন হতেই কান্না এল, মৃত্যু এল আস্তে চলি।
শ্বেত বসনা বকের সারি আর আসে না নদীর কূলে।
বিদ্যাধরীর মৃত-তটে আর যাবো না মনের ভুলে।


ঊষার বেলা অর্ক আসি খোলে স্বপন ডোর,
বিদ্যাধরীর মরণ শোকে, আসে কবির ভোর।
বিদ্যাধরীর সেই যে বেদন কেউ জানে না আর,
গাঙ-শালিক, আর কবি জানে,জানে নদীর ধার।
বিদ্যাধরীর গানের ভাষা আজও মনে বাজে,
বৃষ্টি আমার কান্না মোছায়, দিনের সকল কাজে।


লেখক-নিশিকান্ত দাস
তাং-২৩.০৮.২০১৭