দেওরা-তালের আনুভূতি
গাড়োয়ালের শিখরে শিখরে ঘুরিতেছে সদা যারা,
‘চৌ-খাম্বার’ শুভ্র শিখর  দিয়েছে তাদের নাড়া।
শিখরের ছবি জলক্রীড়া করে দেওরা-তালের জলে,
দেবতারা সেথায় ঊষার লগনে স্নানসারে ঐ তালে।
পুরাণে লিখিত ‘দেওরা-তাল’-টি ‘খাম্বা’ শিখর পাশে,
পঞ্চ পাণ্ডব গিয়েছিলো তথা তৃষ্ণা নিবারের আশে
যক্ষ তথায় বকরুপধরি করিছে পাহারাদারি,
কেহ পারেনাই তৃষ্ণা মেটাতে যক্ষের কাছে হারি।
পরাণ প্রীয় গুরুদেব মোর সদাজাগ্রত সেথা,
ঊষার লগনে সাক্ষাৎ লাগি গিয়েছিনু আমি তথা।
রজনী তখন তৃতীয় প্রহর সাঁঝে,
পশিলাম গুরু বাণী মম অন্তর মাঝে-
  “বিশটা বছর ধরি-
মরুতৃষা লয়ে গুরুকৃপা চাহি, আঁখি করিয়াছ ভারী
চরণোপরি তব অশ্রুতে,আমি তো গিয়াছি হারি,
ভক্তদুয়ারে চাহি যে থাকিতে হয়ে চীরকাল দ্বারি।
তাইতো এসেছি নামি-
এসো ত্বরাকরি তালের কিনারে আশীষ করিব আমি”।


শুভাশিষ লাগি  আসিনু তালের ধারে,
মানস-চক্ষে পশিব আমি যে তাঁরে।
দেওরিয়া তালে ঊষার লগনে চাহিয়া দেখিনু জলে
জোছনা তাঁহার রজত মাধুরী ঢালিতেছে যেন তালে
কাহার লাগিয়া আকাশের চাঁদ হাসিতেছে খলখলি্
তুমি তো কহিলে, “এই হেথা আমি, এস ত্বরাকরি চলি।
সাজিগ্রাম হতে সন্ধা আঁধারে তালে যাইবার কালে,
বলেছিনু তোমা নাহিকিছুভয় চুমুদিয়া তব ভালে,
অশ্বরূপ ধরি আমি এসেছিনু তুমি ছিলে মোরপরে,
তবভার নাশী আমি এনেছিনু দেওরা তালের ধারে।
উঠিবার কালে পথখানি ছিলো নিশার-আঁধারে ঢাকা
তব মুখে ছিলো মোর নামখানি,মনে মোর ছবি আঁকা।
তুমি স্থাননিলে তাঁবুর মাঝারে,ঝরে যে আশ্রুবারি,
চাঁদহয়ে আমি আকাশের বুকে করেছি পাহারাদারি
জোছনা হইয়া করুনার ধারা ঢালিনু তোমারি লাগি,
শেষ রজনীর ব্রহ্মসময়ে, তুমি ছিলে তালে জাগি
অশ্রু-ফুলের মালাখানিগাঁথি, দিলে মোর পায়ে রাখি
ভক্তের লাগি সদা জাগ্রত,জলে ভরে মোর আঁখি।
তুমিই আমার আমি যে তোমার, ভক্তের আমি যে দাস
শুদ্ধ-প্রেমের ভক্তি-মাধুরী পাইবার আছে আশ”।


আনমনে আমি গিয়েছিনু উঠি সচ্ছজলের ধারে,
“অনুভূত হলো, তব কর ভার, মোর মূক্ত শিরের পরে,
তোমার পরশে দেহ-পিঞ্জর,কম্পিত হলো মন,
বুঝিনু তুমি এসেছো প্রভু, ভাবিয়া আপন জন!
সচ্ছ সলিলে তালের জলেতে গুরু মুখ খানি আঁকা,
সুধাইলে হাসি, ‘নাহি কোন ভয়,কভু নহ্ তুমি একা”।
নতশিরে যুথকরি মোর হাত,
“সরণে রেখো, ওগো তুমি নাথ,
চরণো-কমল ধৌতকরিতে,আমি অধিকার যেন পাই,
তোমার পরশে পরম শান্তি পিপাসা মিটেছে তাই।
শিউলিদল সম তব পদরেণু পড়ুক ঝরিয়া মাথে
জনমে জনমে যোগ-গুরু রুপে, তুমি থাক মোর সাথে।  
তুমিই ব্রহ্মা, তুমিই বিষ্ণু,তুমিই ধ্যানের মাঝারে জ্যোতী,
তুমি পিতামহ, তুমি মোর পিতা তোমাতেই রেখো মতি”।
                 লেখক-নিশিকান্ত দাশ  
তাং-০৪-০৫-২০১৬
              
বি.দ্রা.:-গাড়োয়ালের পথে যিনি ছিলেন আমাদের প্রেরণাদাতা,পথপ্রদর্শক ও সর্বক্ষণের সাথি, সেই শ্রোদ্ধেয় বিশ্বাসদা’ আমার সতীর্থ দাদা (শ্রী অমরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস)কে শ্রোদ্ধাবনত মস্তকে, তাঁর করকমলে আমার এই ক্ষুদ্র শ্রোদ্ধার্ঘ নিবেদন করলাম।আমি দাদার কাছে চিরকৃতঞ্জ।