আকাশে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা দেয়ার সাথে সাথে চতুর্দিকে ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হচ্ছে কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত গানঃ


ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশীর ঈদ।
তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন্‌ আসমানী তাগিদ।।
তোর সোনা-দানা বালাখানা সব রাহেলিল্লাহ্‌।
দে জাকাত মুর্দ্দা মুসলিমের আজ ভাঙাইতে নিদ্‌।।
আজ পড়বি ঈদের নামাজ রে মন সেই সে ঈদ গাহে।
যে ময়দানে সব গাজী মুসলিম হয়েছে শহীদ।।
আজ ভুলে যা তোর দোস্ত ও দুশমন হাত মিলাও হাতে।
তোর প্রেম দিয়ে কর বিশ্ব নিখিল ইসলামে মুরীদ।।
ঢাল হৃদয়ের তোর তশতরীতে শির্‌নী তৌহিদের।
তোর দাওয়াতে কবুল করবে হজরত হয় মনে উম্মীদ।।


ঈদের আনন্দ সম্পূর্ণ আলাদা। অন্য কোন আনন্দের মাঝে এ আনন্দের তুলনা চলে না। এই আনন্দময় দিনে সমগ্র বিশ্ববাসী, বিশেষ করে উম্মতে মুহাম্মদীর প্রতি জানাই আমাদের ঈদ মুবারক। সবার জীবনে ঈদ বয়ে আনুক আনন্দের বার্তা। ঈদ শব্দের অর্থ আনন্দ, এমন আনন্দ যা বারবার ঘুরে আসে। ঈদ বিশ্ব মুসলিমের বার্ষিক সম্মিলন ও উৎসবের দিন। ঈদের দিন সবাই পরস্পর হিংসা বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ছোট-বড়, ধনী-গরীব এক কাতারে দাঁড়িয়ে ঈদগাহে নামাজ আদায় করেন। রাসুল (সা.) কে মহান রাব্বুল আলামিন বিশেষ কিছু বরকতময় অনুষ্ঠান প্রদান করেছেন, যা অন্যকোন  জাতি লাভ করতে সক্ষম হয়নি। তন্মধ্যে পরস্পর ভ্রাতৃত্ব ও ভালোবাসা, প্রীতি ও সৌহার্দের এক অনুপম দৃষ্টান্ত প্রদর্শনের অনুষ্ঠান ঈদ। ঈদ আসে বিশ্ববাসীর দ্বারপ্রান্তে বাৎসরিক আনন্দের বার্তা নিয়ে, আসে সীমাহীন প্রেম, প্রীতি, ভালোবাসা ও কল্যাণের সওগাত নিয়ে। সেই ঈদকে যথার্থ মর্যাদায় উদযাপন করা এবং ঈদের নামাজ সময়মত আদায় করা একজন মুসলমানেরর অবশ্যকর্তব্য। ঈদ উৎসবের সন্ধিক্ষণে কে কত সুন্দর এবং দামি পোশাক পরিধান করল, সেটা কখনও দেখার ও বিচার্য নয়। বিচার্য বিষয় হলো, নিজ আত্মাকে কে কতটুকু নিষ্পাপ রাখতে পেরেছে ? মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে ত্যাগ স্বীকার করে তার নৈকট্য লাভে কে কতটা ধন্য হয়েছে।
রমজান শেষে শাওয়াল মাসের চাঁদ উদিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঈদুল ফিতরের দেখা মিলে। ফিতর- এর অর্থ ‘ভাঙ্গা’। এদিন দীর্ঘ এক মাস উপবাস থাকার পরে মুমিনেরা রোজা ভাঙ্গেন বলে তাকে ঈদুল ফিতর বলা যায়। ঈদের আরেকটি অর্থ ‘উৎসব’। এ উৎসব ধনী-গরিব নির্বিশেষে বিজয়ের এক মহা উৎসব। মহান রাব্বুল আলামিনের আদেশ এবং প্রিয় নবী (সা.)- এর সুন্নাহ হলো, ঈদের দিন গরীব, অসহায়, পথশিশু ও ইয়াতিমদের সাহায্য করা। নিজ আনন্দ উৎসবে সাধ্যমত তাদের শরীক করা। গরীব দুঃখিদের আনন্দ উৎসবে পাশে রাখা। তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়া। প্রয়োজনীয় পোশাকাদি দিয়ে সাহায্য করা।
ঈদের দিনের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, ভালো রান্না এবং খাবারদাবার। এদিনে মিষ্টি খাওয়া এবং খাওয়ানো প্রিয়নবী (সা.) এর সুন্নাত। রাসুল (সা.) ও সাহাবায় কেরাম নতুন খেজুর আর মিষ্টি হালুয়া খেতেন। কিন্তু আমরা ঈদ উৎসবকে পরিণত করেছি বিলাসের উৎসবে। এদিনে আমরা খাওয়ার নামে বাহুল্য খরচ করি, অপচয় করি, যা বাঞ্ছনীয় নয়। সকল আনন্দেই ভারসাম্য ও পরিমিত থাকবে, এটাই ইসলামের শিক্ষা। দুঃখের বিষয়; আমাদের ঈদ উৎসব এখন অনেক ক্ষেত্রে বিকৃতরূপ লাভ করেছে। আনন্দ উৎসব মুহূর্তে নিজেদের ব্যক্তিসত্তা হারিয়ে আমরা বিভিন্ন গর্হিত কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ছি। ত্যাগের উৎসব এখন পরিণত হয়েছে ভোগের উৎসবে। আমরা যেভাবে আনন্দ উৎসবে মত্ত হয়ে উল্লাসের প্রস্তুতি নিতে থাকি, তাতে মনে হয় এটি ঈদ উৎসব নয়, বরং কোনো বিজাতীয় উৎসব। অথচ এ সময়েও একজন মুমিনের উচিৎ আল্লাহকে স্মরণ করা। সীমালঙ্ঘন থেকে বিরত থাকা। ঈদুল ফিতরের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো, ফিতরা আদায় করা। কি পরিমাণ অর্থ সদকা বা ফিতরা হিসেবে দিতে হবে, তার নির্দেশ পবিত্র কুরআনে রয়েছে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত সব কিছুই সাহায্য করতে মহান রাব্বুল আলামিন নির্দেশ দিয়েছেন। রাসুল (সা.) ঈদুল ফিতরের দিন বিশেষভাবে পাড়া-প্রতিবেশীদের খোঁজখবর নিতেন। তাদের সঙ্গে দেখা করতেন।
______________________________
আনন্দের আমেজ ছড়িয়ে পড়ুক সর্বত্র। আসরের মুসলিম কবিদের পক্ষ থেকে সবাইকে জানাই ঈদ মোবারক।