হেলায় হেলায় মানব বিবেক নিভৃতে কাঁদে দেহের কোণে,
সহানুভূতি কীট সেজে ডাঁশা মাকড়শারই জাল যে বুনে।
ভাবাবেগ মরে ক্ষয়ে ক্ষয়ে বেগের কাছে হার মেনে যায়,
সন্দেহের শাখা ছড়ায় শুধু, বিশ্বাসে যে জায়গা না পায়।
স্বার্থহীনের চিরপ্রস্থানে পতপতে উড়ে স্বার্থপরের কেতন,
অহমবাদীর সদা হুংকারে ভয়ে পালিয়ে মরে সকল চেতন।
স্নেহ মায়া আর মমতার বাঁধন পায় নাকো আজ শ্রদ্ধার সাড়া,
উচিতের বুকে সদা দংশিতে আজ অনুচিত যে লাগামছাড়া।
জনকজননী ভ্রাতা ভগ্নী এতো কাছের হয়েও পায় না নাগাল,
শিকড়টাকে অস্বীকার করে উপরেই উঠে অবাধ্য আগাল। ১০
ব্যথিতের ব্যথা দুঃখ বিলাপ ঝরায় না আজ চোখের পানি,
পাপাধর্মের বল্লম বিঁধে হারায়েছে জীবন সব ধর্মের বাণী।
আশা-ভালোবাসা-পণ-প্রতিশ্রুতি দু-পায়ে পরেছে ডান্ডাবেড়ি,
অমানুষ মানুষের মুখোশ পরেছে , প্রতারণা যে করেনা দেরি।
মানববুকে বেঁধেছে পাষাণ, কীসে দয়ামায়া, বোধ নেই তার,
বস্তুবাদের নেশা যে ধরেছে, কাম-কামনার জয়-জয়কার।
নিরক্ষরে শিক্ষক সেজে ধরেছে মানব গড়ার কারিগর-বেশ,
দেহই গড়েছে, গড়েনিকো মন, ধুঁকে ধুঁকে হয় সে দেহ শেষ।
কাছাকাছি থেকেও হয় না তো কথা, হয় নাতো সুখ ভাগ,
হয় না তো শোনা দুঃখের কথাও, কেনো রাগ-অনুরাগ। ২০
কে পড়েছে দুঃখে, কে মরে ধুঁকে, তার হয় না নেয়া খোঁজ,
প্রতিবেশীরে ক্ষুধা-অনাহারে রেখে ঠিকই হয় ভুঁড়ি ভোজ।
একটুখানি সহায় আশে শতশত মানুষ পাশে করে কান্নাকাটি,
অশীতিপর অসহায়ে জীবনঝড়ের ঘুর্নিবায়ে নিষ্পেষণে মাটি।
অন্ধজনের যষ্ঠি লূটে, দুঃখীজনের জীবন কুটে কেউ করে মজা,
দলিতের গলে চালিয়ে ছুরি ওড়ায় যে কেউ বিজয়ের ধ্বজা।
জনপ্রিয়ের তকমা লোভে অনেকে খেলে জনসেবার মিথ্যে খেলা,
দিনের আলোয় সাধু সেজে কেউ সাজে চোর মাঝরাতের বেলা।
জ্ঞানীগুণী চলে গুটিগুটি পায়ে, বিজ্ঞ-ধার্মিকে পায় মশকরা,
বকধার্মিকে পকেট ফোলায় গোটা পৃথিবী যেন তার বশ করা। ৩০
ধর্ম প্রচারে নেমে গেছে কেউ মারবে তাদের মানবে না যারা,
ইচ্ছে হলেই গলায় কোপায়ে হত্যাই জিহাদ- জেনে গেছে তারা!
অস্ত্র ঘুরিয়ে, জ্বালিয়ে, পুড়িয়ে পদে পদে তারা শেখাবে দ্বীন!
জঙ্গিবাদীরা ধর্ম ফলায়, বাকিরা যেনো আল্লাহ্-রাসুলহীন!
লেবাশ পরে ধর্মটারে নিজ স্বার্থে লাগায় সব ফতোয়াবাজ,
ধর্মে ধর্মে দ্বন্দ্বে জড়ায়ে নিজের আখের গোছানো ওদের কাজ।
সম্পর্কগুলো যেনো পথধুলো যখন ইচ্ছে উড়াবে পায়ে ছুঁড়ে,
প্রেম-ভালোবাসা ছলনায় ঠাঁসা, সময়ে কাছে, অসময়ে দূরে।
মন কেনাবেচা সওদার মতো, সকাল-বিকেলে বদলানো যায়,
আজ এ নেবে, কাল ও নেবে, বোঝা মুশকিল-মন কী যে চায়। ৪০
ক্ষণিকের সুখে কেউ মাতোয়ারা, হারিয়ে যায় যৌবনভাঁজে,
কেউ বিকিয়ে হয় দিশেহারা, সঙ্গী যে সাজে সব অকাজে।
লাইলি-মজনু, শিরি-ফরহাদ, ইউসুফ-জুলেখার ক্ষণিক বাস,
সকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হতেই কেউ চন্দ্রমুখী, কেউ দেবদাস।
এ কলিকালে দুঃসহ হালে সন্তান নিষ্প্রাণ হয় জননীর কোলে,
জননীকে ফের কুপিয়ে মেরে সন্তানও যে খাটিয়ায় তোলে।
সন্তানের দেয়া আগুনে জ্বলে ছাই হলো হায় দুর্ভাগা পিতা!
কুলাঙ্গারে চুন কালি মেখে সুখের সংসারে জ্বালায় চিতা।
টাকার পেছনে ছুটছে মানুষ, আর নেয় না কোনও খবর,
সুখবাদী সেই মানুষগুলো শেষে নিজেই খুঁড়ে নিজের কবর। ৫০