নেতা হতে আর শিক্ষা লাগে না, লাগে না সাহসী বুকের পাটা
লাগে শুধু যতো গুন্ডার দল, ভাংচুরে পাকা, ত্রাসের কর্মে আঁটা।
খুন করে পার পেয়ে গেলে বুঝি সেই বাগে পায় তকমা বীরের,
গডফাদারই সেরা নেতা হয়, পায় যে স্মারক সোনা কিম্বা হীরের।  
যারা যতো খুন-ত্রাসের রেকর্ড সেই বাহাবার খেতাব যে পায়,
সৎ মানুষের নেতাগিরি তেল বিনা ল্যাম্প, শুধু সলতে পোড়ায়।
দিনরাত শুধু নীলনকশা আঁকে, হয় ত্রাস-খুন-টাকা-পেশীর বড়াই,  
ভোট কেন্দ্র দখল হবে, জাল ভোটে জিততে হবে ভোটের লড়াই।
যে জ্বালায় প্রতিপক্ষের ঘর, ছাই করে সব, দুয়ারেতে লাগায় তালা,
হাত উঁচিয়ে সে দেখায় দর্প, গলা ভরে দেয় কতো ফুলের মালা! ১১০  
রাজনীতি এখন যেনো ব্যবসার মাঠ, টাকা বিনিয়োগের সেরা স্থান,  
টাকা ঢেলে তাই ভোট করে যাওয়া, ভোট জিতে হবে শুরু অভিযান।
ভোট লুটে যে প্রতিনিধি সাজে সেই লুটে যায় যেখানে যা সুযোগ রবে,  
যে টাকা গেছে ভোটের মাঠে এবার তাতো সুদ-আসলে তুলতেই হবে।
রাজকোষ থেকে বাগাও টাকা, পড়ে থাক সব উন্নয়নের ছেঁড়া খাতা,
নিজের আখের গোছাও এবার, কেইবা খোঁজ নেবে? দেখতে কে তা?
লাখ টাকা নিয়ে যে দাঁড়ালো ভোটে, ভোট জিতে সেই হয় কোটিপতি,  
যার তরে সে প্রতিনিধি হলো সেই জনগণ ভুগে যায় আরও, কি দুর্গতি!
উন্নয়ন কল্পে বরাদ্দ হবে, নেতার পকেটে আসবে কাড়ি কাড়ি টাকা,
কী উন্নয়ন! লুটপাট শুধু, ভাগাভাগি হবে, নেতায়-নেতায় এই ছক আঁকা। ১২০
নেতাই করে রাজনীতি, ফের নেতাই ব্যবসায়ী, সেই নেতাই হচ্ছে ঠিকাদার,
নেতার শিল্প, কল-কারখানা, বাড়ি-গাড়ি-জায়গা-জমি! পুরোদস্তুর জমিদার!  
টাকার নেশা বড় নেশা, সেই নেশাটা মেটাতে হলে রাজনীতিটাই চাই,
ধরা-ছোঁওয়ার বাইরে নেতা, ইচ্ছে মতো যাই করুক, বলার কিছু নাই!
ভোট জিতলেই আসে টাকা, সুবিধা কতো! কতো প্লট-ফ্ল্যাট, শুলমুক্ত গাড়ি,  
ব্যাংকের পর ব্যাংকের মালিক, টাকার ভান্ডার যায় দেশের সীমানা ছাড়ি।
টাকা দেবে রাষ্ট্রীয় কোষ, টাকা দেবে এলাকার লোক, ফকিরেও দেবে টাকা,
তা না হলে কেড়ে-লুটে নেবে সব, চাঁদা না দিলে এলাকায় যাবে না থাকা।
রেলের জমি, সওজের জমি, মাঠে-ঘাটে-বাটে যতো জিরাত, খাস জমি আছে,
খাল, বিল, নালা, পুকুর যতো সবই যাবে ভোটে জয়ী সকল নেতার কাছে। ১৩০
জনপ্রতিনিধি জ্ঞানী–গুণী-সম্মানী লোক! তাকে ছাড়া হবে ছোট্ট একটি কাজও,  
তিনি হলেন সমাজ-দরদি, সকলের লোক, বন্ধু যে তার সকল দূর্নীতিবাজও।
তিনি হলেন সবার নেতা, করবে না কেউ বিরোধিতা, বুঝবে যে তার রুচি,  
সবাই তাকে মানবে গুরু, অলি-গলির ব্যাপারী, ব্যবসায়ী হোক, কিম্বা মুদি-মুচি,
কৃষক, চাষি, খামারী হোক, কিম্বা কামার-কুমোর-জেলে, সবার গুনতে হবে চাঁদা
দিনকাদিনের লাভটা থেকে, তা না হলে বুঝবে বিষম ঠেলা, নেতাই দেবেন বাঁধা।
বাড়ি-খামার-জায়গা–জমি যার যা যতো আছে, সব হিসেব জানতে হবে নেতার।  
এতো খবর রাখেন নেতা! এমন নেতার বিরল ভাষণ নিতে আসবে টিভি, বেতার।  
নেতা কেনেন টিভি-বেতার চ্যানেল, সংবাদপত্র তাও নেতার, প্রচার নেতার তরে,
এমন নেতা দেখবে-চিনবে সবাই, নেতার ছবি, ভাষণ, বাণী তাই থাকবে ঘরে ঘরে। ১৪০
পোস্টার, ব্যানার, ফ্যাস্টুন আর বিলবোর্ড ভরে যাবে, পথে পথে ঝুলবে নেতার ছবি,
শতো শতো দেয়াল লিখন হবে- নেতা মহান, সমাজ সেবক, নেতাই শিল্পী-কবি।  
পাড়ায়-পাড়ায়-মহল্লাতে থাকেন নেতা দিনে রাতে- এমনটা তো যায় না তেমন দেখা,  
তাই তো নেতার বিশাল ছবি টাঙানো হয়, অলিগলি, পথেপথে নেতারই নাম লেখা।
কোন সে নেতা কী করেছেন, দেশের তরে কী করবেন, ছাপিয়ে লিস্টিখানা
হাতে হাতে প্রচার করে, এর পরের ভোটেও জিতবে হবে-এ নীতি হোক মানা।
প্রতিপক্ষ নেতার বাড় কমাতে পেশীর খেলায় নেমে যখন নেতায়-নেতায় বাজে,
জনগণই হয় বলি তার, প্রাণ ঝরে যায় জনগণের, লাশগুলিও লাগে নেতার কাজে।
নিজ দলের প্রধান থাকলে সহায় মনোনয়নটা যে জুটে যায়, মার্কাটা তো জানা,
পেশী-টাকা লাগিয়ে মোটে জিততেই হবে আবার ভোটে, ভোট চুরি নয় মানা। ১৫০