আইন সাধারণের জন্য, আইনের ফাঁদে পড়বে তারাই, ক্ষমতাধর মুক্ত থাক,
আইন তাদের সুরক্ষাই দেয়, বেকায়দায় পড়লে তারাই পায় আইনের ফাঁক।  
অসদুদ্দেশ্যে প্রণীত ব্রিটিশদের সেই পুরনো আইনের তবীয়ত এখনও বহাল
সময়ের কোলে বেমানান আর অকেজো সে আইন জনগণকে করছে বেহাল।
দুর্নীতির বেড়াজাল ছেয়ে গেছে খুব, দুর্নীতিবাজ ছড়িয়ে পড়েছে প্রতিটি স্তরে,
তাদের হাতেই থাকে আইনের দড়ি, দেশ তবে শোষণমুক্ত হবে কেমন করে?
নিরুপায় অসহায় হয়ে জনগণ থাকে শোষণের ভয়ে সাহস নেই রুখে দাঁড়ায়,
উচিত কথা বলতে গেলে হয়রানি আর অপমান মেলে, মুখও যে ভাষা হারায়।
কারণে অকারণে ভুগছে মানুষ, হরদম হয় মৌলিক অধিকারগুলোর অকালহত্যা,  
কজনই পায় তাদের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, ওষুধের অধিকারে অভিগম্যতা? ২৫০  
যে খাদ্য বাঁচাবে প্রাণ সে খাদ্যই যায় না কেনা সহজে, মূল্য বেড়ে আকাশ ছুঁয়ে
ক্ষুধার জ্বালায় মরলে লোকে কেইবা কাঁদে ব্যথায়-শোকে, ক্ষুধা পড়েনাতো নুয়ে,
মানুষের এই ক্ষুধার জ্বালা ভরছে শুধু লাভের থালা সেই মুনাফাভোগীর দলের
যারা জনগণের ক্ষুধার জ্বালা লাগিয়ে কাজে যায় বাড়িয়ে গতি লাভের কলের।      
অতিলোভী বণিকেরা বিবেকশূণ্য, মানবতাশূণ্য, লাগামছাড়া মুনাফা বাগে,  
গুদামে পণ্য জমা করে রাখে, ভাবে বাজারে পণ্যের সংকট কবে লাগে।
পণ্যাভাবে ভোক্তারা যখন ক্ষুব্ধ, অসহায়; হাপিত্যেশ করে উপায় না পায়,
আরও মুনাফার এই তো সময়- বণিকেরা ভাবে, এই সুযোগ কাজে লাগায়।
অতি লোভে কেউ ভেজাল করে পণ্য, মেখে দেয় তাতে ফরমালিনের জল,  
ভেজাল খেয়ে কে মরলো আর কে বাঁচলো- সে ভাবনা তাদের জন্য অচল। ২৬০
শস্যে ভেজাল, ফলে ভেজাল, খাবারে ভেজাল, ঔষধেও আজ ভেজাল অদম,
মানব বিবেকে ভেজাল ঢুকেছে, ভেজালের বিষ যেখানে তোমার পড়বে কদম।
ব্যবসার তরে বিষময় ফরমালিন হরহামেশা লাগে ফল-ফুল-মাছ-মাংস-সবজিতে,
কে রোধে তা? কে দেখে তা? আইন ফলাবে? সাহস আছে কারও কবজিতে?  
যে খাদ্য খেয়ে বাঁচবে মানুষ, বাঁচবে সবাই, সেই খাদ্য খেয়ে এখন মানুষ মরে,
এরকম অদ্ভুত ব্যবসা আর কোথা আছে যে মানুষ মেরে মেরে মুনাফা গড়ে?
ডাক্তার আছে, সেবিকা আছে, হাসপাতাল, ক্লিনিক, স্বাস্থ্য কেন্দ্র আছে ঢের,
রোগ আছে, রোগী আছে, ব্যথা-বেদনা আছে, যন্ত্রণারও আছে রকমফের।
ফার্মেসি আছে, দাতব্য সেবা কেন্দ্র আছে, ঔষধ কারখানা আছে ঔষধে ভরে,
তবুও তো কতো মানুষ ভুগছে রোগে-যন্ত্রণায়, কতোজনই তো যাচ্ছে মরে ২৭০
বিনা চিকিৎসায়। কেউ মরছে অবহেলায়, কেউ মরে শুধু ডাক্তারের ভুলে,
কতো ডাক্তার রোগীকে ফেলে ব্যবসার ফাঁদে বিবেকখানা দূর গগণে তুলে।
এখন মানবসেবা মেলে না আর, টাকার লোভে মানবতা হারিয়েছে তাঁরা,
সামান্য রোগে রোগীকে নেয় অপারেশন তরে, কষ্টে রোগী হয় দিশেহারা।
মৃত রোগীকে চিকিৎসার নামে হাতায় টাকা, শোকের মাতমও শোনে না কানে,
জীবিত রোগীও মরে যায় তাঁদের হাতে, মৃত রোগিতেও তাঁরা খুঁজে টাকার মানে।
মুখেতে ‘মানবসেবা, সেবাই ধর্ম’, লোভাতুর চিকিৎসকের মুনাফার লক্ষ্যই মুখ্য,
কী করে সে বুঝবে রোগীর ভিতরের যন্ত্রণা, কী করে বুঝবে রোগীর যতো দুঃখ?
শিক্ষার মূলে পোঁকায় ধরেছে, লোভ ধরেছে আগায়, শিক্ষক সেজেছে ব্যবসায়ী,
প্রকৃত শিক্ষা যেনো দূর বহুদূর, বদলে গেছে শিক্ষার ধরণ, শিক্ষকও অনেকগুনে ২৮০
গেছেন বদলে, বিষয়ের পর বিষয় আসে, পরিবর্তন একে একে, লক্ষ্যের নেই ঠিক,    
প্রতি বছরই ধরণ পাল্টে উলট পালট করে দেয় সব, শিক্ষার্থীরা যাবে কোন দিক?
যুগের সাথে তাল মেলাতে শেখানো হচ্ছে অনেক কিছুই যার নেই কোনো মিল,
ছেলেমেয়েরা যাচ্ছে পড়ে, না বুঝে কিছু, ছাই বা কচু, অন্ধকারে মারছে শুধু ঢিল।  
‘আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা মামার দেশে যাই, মামা দিলো দুধভাত, পেটভরে খাই,
মজা করে খাবো কী আর? মামি এলো লাঠি হাতে, চল সবে এখনই পালাই, পালাই।’  
হারিয়ে গেছে ‘আদর্শ লিপি’, ডরিমন-পকিমনে ভরে গেছে বই, বাস্তবতার মিল নেই,
মটু-পাতলু, কিরণ-মালা গিলে ফেলেছে শিশুদের মন, হ-য-ব-র-ল সবকিছুতেই।
জাতি গড়ার কারিগর আজ লক্ষ্যভ্রষ্ট, দুহাতে টাকা কামানোর লোভ মেলছে ডানা,
শিক্ষনের নামে কোচিং ব্যবসার পসর বসেছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষন যেনো মানা। ২৯০  
বসতবাড়িতে কোচিং হচ্ছে, কিম্বা কোনও দোকানে টাকার বিনিময়ে দেয়া হয় শিক্ষা,
কতো সহজে পাশের সনদ মেলে-এটাই নীতি, শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে না সঠিক দিক্ষা।  
পুস্তক হাতে চায় না নিতে, চায় না যে কেউ পড়তে, পাশ করা অনেক সহজ কাজ!
পরীক্ষার আগে মিলছে প্রশ্ন, উত্তর যাচ্ছে পাওয়া, শিক্ষার নামে প্রতারণা মেলে আজ।
শিখন-শিক্ষন বড় কথা নয়, পাশ করে সনদ হাতে পাচ্ছে কতোজন সেটাই হলো বড়,
শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড, অশিক্ষা-কুশিক্ষা দিয়ে সেই মেরুদণ্ডকেই ভেঙ্গে চুরমার করো।
না থাকলেও কিছু শিক্ষার্থীর মাথায়, যাই-ই লিখুক পরীক্ষায় খাতায়, পাশ করাতেই হবে,
না থাকুক ঐ শিক্ষার মান, কে নেবে তার খোঁজ? পাশের হারটাই যে বেশী হয়ে রবে।
যে জাতি পায় না উচিত শিক্ষা, আদব-কায়দা বোধ, তার যে কী হবে ভবিষ্যতের হাল?  
জ্ঞানীগুণীরা তাই এটাই ভাবেন, এভাবে একটি দেশ আর পিছে থাকবে কতো কাল?  ৩০০
(চলবে......)