অতীতে যারা গাইতো গান, এক ঘাটেতে রান্দিবাড়ি আরেক ঘাটে খাই মোদের সুখের সীমা নাই,
সেই বেদেদের জীবনে এখন দুর্বিষহ দুঃখ আর কষ্ট, সে জীবনে এখন সুখের হয়না ঠাঁই।
লাউয়ো, চাপাইলা বলো, কিম্বা ঝুরবুটির বাজিকর, বেজ, গাইন, মেল্লছ, বান্দাইরা, মাল,
সাপুড়িয়ার দলই বলো, সবাই এখন নিত্য জীবিকার সন্ধানে দিশেহারা, পাল্টে গেছে হাল।
এতোটা প্রান্তে গেছে তাদের জীবনমান, কার আর আছে বলো তাদের প্রতি টান, হায় হতভাগা!
গুরুত্বহীন থাকে মুমূর্ষু নদীর বুকে, কিম্বা বসবাসে শুধু স্রোতহীন নদীর তীরে কিছু নৌকা লাগা।
নগরায়নের থাবায় মৃতপ্রায় নদী বয়না এখন আর নিরবধি বেদেরাও আর পায়না নদীর জল,
পদে পদে ঘুরে যাদের জীবিকার যোগান সেই পদগুলো এখন শহুরে মানুষে করে কোলাহল,
এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ছুটে যেটুকু অন্ন জুটে কাজে লাগে না সেই ঝাড়ফুঁক আর তন্ত্রমন্ত্র,
সাপের খেলা এখন মানুষ দেখে না, সাপুরের যাদুতে সারে না ব্যথা, দূর হয়না প্রেতাত্মাতন্ত্র। ৩৩০  
শূন্য থাকে বেদের ওষুধের ঝুড়ি, কেউ কেনেনা বেদের চুড়ি, জঙ্গলের সাপও হচ্ছে বিদায়,
দাঁতের চিকিৎসাও হয়েছে সেকেলে, শিঙ্গা ফুঁকা, শরীরে উল্কা অকেজো, ধরেছে ক্ষিধায়।
খোলা আকাশের নিচে রাস্তার ধারে কতো বেদে থাকে ছোট ঝুপড়ি ঘরে গাদাগাদি করেই,  
চুলো আছে চাল নেই, তেল নেই, ডাল নেই, বেদের মেয়ে আছে, কোনও জ্যোৎস্না নেই,
গাছগাছড়ার শিকড়বাঁকল, আলতা কিম্বা সাদা দাঁতের মাজন এখন বলো কেনে কজন?
গ্রীষ্মের সব তপ্ত হাওয়া, বর্ষা-বাদল, শীতের কাঁপন মিলেমিশে হয় বেদের আত্মীয়স্বজন।
নিরুপায় এই মানুষগুলো আশা দেখে এলোমেলো, কী হবে সামনে কেউ তো না জানে,
অন্ন যোগানে পিতামাতা যায়, ছেয়েমেয়েরা চাতক পাখির মতো চেয়ে থাকে পথ পানে।
পূর্ব পুরুষের নিয়মের জালে বাঁধা পড়ে গেছে তারা চিরকালে, বেমানান যে মূলধারায়,
পায় না জীবনে মানবতার অধিকার, পায় না শিক্ষা, দায়িত্বশীল কেউ হাত না বাড়ায়। ৩৪০