এখন হয়না, তোমাকে নিয়ে কবিতা লিখার সাহস -
ড্রেসিং টেবিলে পড়ে থাকা তোমার আধ খাওয়া আপেলে
লুকিয়ে আছে অজস্র কবিতার লাইন;
যে পথ তোমার, - স্রেফ সে পথে দাঁড়ালে শব্দরা মিছিলে যাবে
যে রিকশাওয়ালা'র বুক পকেটে তোমার  টাকা
তার সাথে মোলাকাত করতে করতে সৃষ্টি হবে সহস্র কবিতা
যে বাবুটা তোমার আদর খায়, তাকে দেখে অক্ষর গুলো ভাষা হবে
স্পর্শ লোভে বানাবে কয়েক'শ পঙক্তিমালা
তুমি বললেই শুরু হবে কবিতায়, স্বৈরতন্ত্র শাসন ব্যবস্থা
তুমি তাকালেই কবির মাথায় ভেঙে পড়বে আকাশ
কবিতার বানানে ভুল হবে, তৈরি হবে শস্তা অখাদ্য
তোমার মৌলিক ইচ্ছে প্রকাশে পাওয়া যাবে কবিতার বিষয়বস্তু ।


এখন হয়না, তোমাকে নিয়ে  কবিতা লিখার সাহস -
কেটে যাওয়া দিন লাইন হয়না কবিতায়
প্রকৃতির মত তুমি, পারিনা দিতে তোমার বর্ণনা
তোমার  সারংশ লিখতে  লাগবে এক রিম
তোমার ব্যাখ্যা আত্মসাত্‍ করতে পারবেনা এক সমুদ্র নোনা জল ।
আকাশ সমান জমানো প্রেম, আর অসভ্য প্রেমিকের যত্ন
চোখ অনেক দূরে, কাজল নিয়ে লিখতে ভাবতে হয় দশ দিন
তোমার সাথে বেমানান চাঁদ, সদ্য ফোঁটা কদম কিংবা ন'টার ফুল
তুচ্ছ মনরম ঝিঁ ঝিঁ পোঁকা রাত্রির গভিরে,
হিজিবিজি সন্ধ্যায়  হরহামেশা সমুখে উপস্থিত হতাশা
তোমার স্পর্শে স্যাঁতসেতে হয়, উড়ে যায়
ঠোঁটের কোনে জমা মুখ বয়ে পড়া সামান্য জলে
লিখা যায় হাজার খানেক গল্প ।


এখন হয়না, তোমাকে নিয়ে কবিতা লিখার সাহস -
তোমার সেপটিপিনে গেঁথে দেওয়া যাবে কবিতার বিষাদ
অসমাপ্ত মহাকাল আর   দুঃখ দুঃখ খেলা
আঁচলে ডেকে দেওয়া যাবে কষ্ট নামক নোংরা প্রোডাক্ট
চুলে  হাত বুলালে একবার,
রোদ্র জলসানো দুপুর হবে শীত কবিতা লিখার শ্রেষ্ঠ সময়
বাঁধ দিলে হবে কবিতার  দাড়ি কমা,
তুমি রাগলে উস্কে যাবে দ্রোহের কবিরা, সর্টকাট বসে যাবে কলম হাতে
রাঁধতে গিয়ে যখন মাইক্রোওভেনে হাতে লাগবে চোট
তখন বিরহে ভেঙে যাবে এক কবির বুক, আচমকা লিখে যাবে শেষবিহীন
তুমি চলে যাবে বললেই, কবি নির্বাসনে যাবে সোত্‍সাহে
সেচ্চায় আত্ম গোপনে থাকবে সমস্ত কবিতা
লোকালয় হবে সুনসান, বদ্ধভূমিতে পড়ে থাকা কালর্ভাট আরো ভেঙে যাবে
সাবধানে চলতে গিয়ে বারবার ঘটবে র্দুঘটনা ।


এখন হয়না, তোমাকে নিয়ে কবিতা লিখার সাহস -
তুমি 'ক' বললে কবিতারা কবিকে রেখেই বেরিয়ে পড়বে অক্ষরের সন্ধানে
খুঁজতে খুঁজতে বছর যাবে রাত সকাল হবে আসবে ভোর
প্রকৃত শব্দ পাবেনা, রবি ঠাকুর বেঁচে নেই ।
একতরপা মধ্যযুগীয় শব্দ খুঁজবে অভিধানে
সময়ের গ্যারাকলে কর্পরেট কবিরা ।
তোমার ঘুম মুখ দেখে রাত ভর কবিত্ব ভাবনায় মত্ত থেকে
সকালে কাগজে বসবেনা কবির কালি, লিখতে পারবেনা কিছু
ভাবনায় জটলা ছিলো, দেখতে দেখতে বছর কাটুক ।
তোমার নিঃশ্বাস উড়ে জমা হবে শাশ্বত বানীতে
শরীরের গন্ধ পরিনত হবে কবিতার গায়ে দামি পারপিউম
তোমার হাতে মগ ভরতি পানি মানে কবিতার সমুদ্র স্নান
চোখ টিপলেই ভেঙে যাবে আয়না, কবিতার মুখে লাগবে উড়ন্ত চুমু ।
ট্রাফিক জ্যামে আটকে পড়ে যতটা ঘাম ঝরেছে
প্রত্যেক ঘামের ফোঁটায় লুকিয়ে থাকবে কবির প্রশান্তি ।
তোমার অনাঘ্রাত চুল শুকে  তৈরি কবিতার বিস্তারিত
অগণিত শব্দাবলি থমথমে বিরাজোমান ।
তোমার বিমুখ প্রান্তরে কবিতা সাজবে  বিভাষায়
অবিক্রিত রয়ে যাবে বিভীষিকাময় কাব্যরা,
কষ্টের ফেরিওয়ালা ফিরবে ঘরে ।


এখন হয়না, তোমাকে নিয়ে কবিতা লিখার সাহস -
অশ্রু নামক বৃষ্টি হলে হঠাত্‍ আঁধারে শুনবো ভৌতিক অট্টহাসি
তিন তলা কালো হয়ে আসবে নীরব নিস্তব্ধতা
শহর জুড়ে জারি হবে কারপিউ, নয় নাম্বার সর্তকসংকেত
সপিংমল দামি রেষ্টুরেন্ট আর নির্জণ পার্কে খালি বেঞ্চ
কারেন্টের তারে দোল খাবে বিভত্‍স নোংরা আর পঁচে যাওয়া কিছু বিষাদ ।
কবিতার  চিবুকে কাটা দাঁগ, এক বিস্ময় চিহ্ন
দাঁড়িয়ে থাকা ইস্টিশনে পাখিদের বাঁধা নেই যেতে পারে যেখানে খুশি ।


এখন হয়না, তোমাকে নিয়ে কবিতা লিখার সাহস-
তোমার বিচ্ছেদে নিষ্প্রাণ কবিতার শিকড় গজাবে  
আস্তাকুড়ে যাবে কবিত্ব সংশয়, সে অ'যুক্ত কবি
প্রগতিশীল কোন ভাবনা নেই,
সভ্যতা লিখে না, লিখে বিরহ, কালের বিবর্তন লিখে না লিখে কষ্ট
সৃষ্টি লিখেনা  ধ্বংস লিখে, নিত্য সত্য ভুলে লিখে অসত্য আর অসুন্দর ।


''এখন হয়না, তোমাকে নিয়ে কবিতা লিখার সাহস''
- জেবাউল নকিব
২৬-০৫-২০১৪