অদ্য এ-হেন মধ্যরজনীক্ষণে প্রেয়সী মম
      ধরিত্রী নিমজ্জিত নিদ্রাপারাবারে,
বিজনাবাসে তোমাতে আমাতে মিলি দোঁহে
      কুসুমশোভিত পরিপাটি শয্যার 'পরে;
   তবাঙ্কে আমি স্থাপিয়াছি শির
   আবেগপূর্ণ হৃদি আর রহেনা স্থির,
শ্রবণিবারে চাহে তোমা প্রিয়া হায়--
      প্রসূণবরষণসম যাহা নেত্রযুগলে ঝরে!
   শিষ্ঠাচারপূর্ণবায় সাক্ষাতি বাতায়নে
   টিপেটিপে চলে অতি সংগোপণে
তোমাতে কি শ্রবণিবে তাহা--
       সমীরণ শ্রবণিতে প্রয়াসিতে পারে!
   লজ্জা-শরম আজ দূরে ফেলি
   মস্তকের অবগুণ্ঠণ ত্বরা খুলি
আনন্দোচ্ছ্বাসে,পুলকে,আবেগে
        ভরাও গো প্রিয়া মোরে!
অদ্য এ-হেন মধ্যরজনীক্ষণে প্রেয়সী মম
      ধরিত্রী নিমজ্জিত নিদ্রাপারাবারে!


মম অক্ষিপানে কর তব অক্ষিপাত
        লোচনে-নেত্রে হোক ভাষা বিনিময়,
তব সুমধুর হাস্য মম অন্ত:করণে
         করিয়া দিক প্রিয়া অক্ষয়!
     তব করস্পর্শ মোর গণ্ডদেশে
     যাই যে ভাসি আমি নবীনোচ্ছ্বাসে
যামিনী যে ছুটিছে হয়সম,প্রেয়সী,
অপেক্ষিতে নারে--আর নয়!
     আজ এ শান্ত মধুর নিশিতে
     তব অধিকার হইবে বুঝিতে,
বুঝাইয়া দিতেও হইবে ওগো
       নাশি শঙ্কা-ত্রাস-ভয়!
      আজ এ-নিশিতে নিদ্রিত সবাই
      একটিও ঝিঁঝিঁ সুর তুলে নাই,
তব সনে মোর গো অদ্য
          হইবে নূতন প্রগাঢ় পরিচয়!
মম অক্ষিপানে কর তব অক্ষিপাত
        লোচনে-নেত্রে হোক ভাষা বিনিময়!


বদন হতে টুটিয়া লও হস্তখানি
         আমি যে ভুগিতেছি ব্যস্ততায়,
ওই অদ্বিতীয় বদন হেরিব
         সুখের নতুনত্বে জড়াইব তোমায়!
       সহসা কেন উঠিছ শরমি?
      মোর বিবাহিতা জায়া জান নাই তুমি?
মোর থেকে সব লও গো কাড়ি
      তোমারও সব এ-নিশিতে দাও গো আমায়!
    রক্তিম সিন্দুরচ্ছটা রাঙাইল তব সিঁথি
    লক্ষকোটি জনম ধরি তুমি মোরই সাথী,
এ-ত্রিযামা টুটিছে যে ত্বরা
      কেন নষ্টিছ মূল্যবান সময় হায়!
     প্রসূণশোভিত শয্যাখানি,
     সুকুমার সৌরভ যেতেছে দানি,
সাজ সাজ,কর উচ্চ বদন
      প্রিয়া,সময় যে বয়ে যায়!
বদন হতে টুটিয়া লও হস্তখানি
         আমি যে ভুগিতেছি ব্যস্ততায়!


অদ্য এ-নিশিতে যদি যাও এড়ি
       কত রজনী লুকাইবে তব ওই যৌবন?
এ-নিশি গেলেও আগামী নিশিতে
       আবার তব সনে মোর হবে আলাপন!
     এই সুমধুর মধুচন্দ্রিমার রাতে
     হাতটি রাখ প্রেয়সী মোর হাতে,
মম করে সবই বিসর্জিয়া প্রিয়া
      পতি বলি করহে সম্ভাষণ!
     মিষ্টি বদনের সুষ্ঠ বুলি
     দুটি অন্তত কও হৃদি খুলি,
এ-হেন কালে আমি অপেক্ষিয়া মরি
      আর শরমজগতে তোমার নিত্য বিচরণ!
      পতিসম্মুখে লজ্জা করে কি নারী?
      তবাচারে কিছু বুঝিতেই নারি,
তুমিই মোর অর্ধাঙ্গিণী ওগো,
        কিন্তু কেমন--কীরূপ তোমার ধরণ!
অদ্য এ-নিশিতে যদি যাও এড়ি
       কত রজনী লুকাইবে তব ওই যৌবন?


অদ্য এ-নিশিতে মোর জীবন-যৌবন
        তব করে দিব চিরাঞ্জলি,
আজ এ রাতে তব সাথে
        লজ্জা-শরম যাইব ভুলি !
      তব আঁখিতে রাখিব আঁখি,
      হৃদিদ্বয় একত্রে লইব মাখি
তোমার সুরে সুর মিশিয়া দিব
       একত্রে উঠিব যে তান তুলি!
      যা আছে  মোর তুমি সবই লহ
      বিনিময়ে তোমার যা আছে সব দেহ
মোর হিয়াতে আবেগার্ণব
        টুইটম্বুর হইয়া উঠিছে ফুলি!
      বহু দিবস হতে প্রিয়া অণ্বেষিতেছি
      এমন সুমধুর বিজন রাতি;
দাও ওহে প্রিয়া তোমার সুধার পাত্র
        মোর দুই করে সমার্পিয়া--তুলি!
অদ্য এ-নিশিতে মোর জীবন-যৌবন
        তব করে দিব চিরাঞ্জলি!


তিন-চতুর্থাংশ নিশিকালকক্ষণ হায়
         তোমা-আমা হতে গেছে টুটি,
অবহি,এত পরে তব বদনে,প্রেয়সী
          উঠিল মিষ্ট হাস্য ফুটি!
        জ্ঞাত,আর নহে বাধা নয়
        বিসর্জিয়া আপন ত্রাস ভয়
মোর এ কোমল বক্ষের ’পরে
          পড় ওহে প্রিয়তমা লুটি!
        তব প্রতি মোর যাহা অধিকার
        দিয়ে যাও এ নিশিতে আমার
শঙ্কা-ত্রাস-লজ্জা-শরম
          চিরতরে প্রিয়া দিয়ে দাও ছুটি!
     সেই তো বিসর্জিবে সব--করিবে সকলই দান,      
     মোর পানে কেন বাড়াইলে আপন মান?
তুমি আমি আজ লঙ্ঘিব সীমা
          কারণ এ-গৃহে আমরা মানুষ দুটি!
তিন-চতুর্থাংশ নিশিকালকক্ষণ হায়
         তোমা-আমা হতে গেছে টুটি!

এই যা! হায়! এ ছিল স্বপ্ন!
         কী হেরিলাম নিদ্রিত বিছানায়!
এ কী আবেগ!এ কী পুলক!
         কে কেমনে দিয়ে গেল আমায়!
       কোন অপরূপা এ-সুন্দরী
       ধীর মস্তিষ্কে একটু স্মরণ করি,
ও!এ তো মোর স্বর্ণালীগোলাপ
         এ কী হেরিলাম হায়!
       লক্ষ নীলোৎপল উঠেছিল ফুটি,
       এক নিমেষে কোথা গেল টুটি!
একাকীত্ব হায় বজায় রহিছে
         জাগরিত আমি নিদ্রিত শয্যায়
       আসিবে কি সেই ত্রিযামা--
       প্রেয়সী মোর যা দিল আমা!
জীবনে কি আমি পারিব লাভিতে
         সেই মধুচন্দ্রিমায়--নিশায়!
এই যা! হায়! এ ছিল স্বপ্ন!
         কী হেরিলাম নিদ্রিত বিছানায়!
                                         (সমাপ্ত)