নবীন প্রত্যুষ উঁকিছে মায়
       নাই তো তিমিরতার আভা,
নবার্ক প্রয়াসিছে প্রস্তুতিছে
       দানিবে অচলকীলায় অদ্বিতীয় শোভা!
আঁধার মাত্র কিয়ৎক্ষণ পূর্বে
       ক্ষৌণি হতে গেছে টুটি,
আপন ঔজ্জ্বল্যতা লয়ে আপনি
       সবিতার আলোকদল উঠিছে ফুটি!
ভেদি শান্ত বায়ূর বপু
       উষ্ণ আলো পশেছে ধরায়,
নব দিশির হইল সৃজন
       একটু একটু করি তা ক্ষয়ে যায়!
ভাঙতে শুরু হয়েছে তাহার
       কোমল দুর্লভ কায়াখানি,
শেষমেশ যখন তিমির পশিবে
        দিশি পূর্ণ কলেবর লইবে টানি!
উদার নীলের শান্ত হৃদি
        ঝিকিমিকিছে আলোর শতদলে,
আলোৎপলের কোমল পাপড়ি
        যায় ভরে যায় ধরাতলে!
বিহগ--বিহঙ্গম ত্যাজি আপন নীড়
       দিল ডানা মেলি নীলের বুকে,
কাজিতে ব্যস্ত সুগঠিত ডানা
       হেরিছে তারা নিম্নে ঝুঁকে!
সমীরণ মৃদু ছন্দে--শিষ্ঠাচারে
       ক্ষ্মার 'পরে যায় যে বয়ে,
মর্মরধ্বনিতে ভরে বিস্তৃত ধরাতল
       যায় মোকে বায়ু গীতি শ্রবণিয়ে!
অচলপ্রমাণ তরুর মার্গসম সারি
       দুলিছে বায়ুর ছন্দে তালে,
ভরে যায় মেদিনী নবীন শোভায়
       বায় নিশ্বাসি যায় যে ফুলে!
সুকুমার প্রসূণের সৌরভে--সুবাসে
       যায় ভরি যায় দ্বিতীয় ক্ষিতি,
যেথায় শ্রবণি ভ্রমনের গুঞ্জণ
        বিবিধ খেচরের মিশ্রিত গীতি।
স্রোতোস্বতী ধাইছে ত্বরা ছুটি
        দু’কূলে ফেলি আপন শ্বাস,
গভীর জলের ঢেউয়ের রাশি
        মোর মাঝে তৃপ্তি করে চাষ!
চাষিছে কিষাণ নদীর তটে
        জলার নিকট এক ছোট্টো ভূমি--
সেটাই তাহার বাঁচিবার উপায়
        মাতৃসম তায় যায় যে নমি।
সৃজিছে নদী কলতান তার
        দানিছে বায়ু শরণ তাকে,
শুধু কি তাই--তা তো নয়
        বহিয়া দিয়া যেতেছে মোকে!
এমন প্রাতে হেরি এত কিছু
       মনুষ্যজনমে কী থাকে বাকি,
আমি খুবই নগণ্য--ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক
      তাই কি কেউ চোখ দিতেছে ফাঁকি!
এত কিছু হেরিবার পরে
       লক্ষিবার পরে সবার কাজ
করপুটে করি ’অস্বপ্ন’কে প্রণাম
        মানব জনম সার্থক আজ!
                                     (সমাপ্ত)