এক রোহিঙ্গা মুসলিম শিশু মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বলে-
মা, তুমি চুপটি কেন থাকো? বলোনা, তোমার চোখটি কেন ভরা জলে?
মা শিশুটিরে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠে, বলে না মুখে-
ফ্যাল-ফ্যাল নয়নে শিশুটি আবার শুধায়, ভরা জল গড়ায় তারও চোখে।
‘‘ওরা তোমাকে মেরেছে খুব তাই না? ছিন্ন বস্ত্র, হস্তখানা বালা-শূন্য-
পড়েছিলে ঐ প্যাগোডার বৌদ্ধমূর্তির পাদে, দেহখানি তোমার অচৈতন্য।
সেখানে আরও অনেকেই পড়ে ছিল, ফুফু-খালা-চাচী আরও কত মেয়ে;
আমি তোমাকে ঠিকই খুঁজে নিয়েছি; পেয়ে তোমার বুকে রয়েছিলাম শুয়ে।
জানো মা, ওরা আমাকেও মেরে ফেলতো, সুযোগে পালিয়েছি পাশের ঝোপে
ওরা যখন ভাইয়ার মস্তক দেহ হতে করে বিচ্ছিন্ন, ধারালো ছুরির কোপে।
তারও আগে বাবাকে মেরেছে, কেরোসিন ঢেলে গায়ে দিয়েছে আগুন জ্বেলে
সাথে আরও ছিল চাচা-পাড়া পড়শি কত; খোঁজে দেখ আরও কত মেলে।’’


মা শুনে বাছার কথা খানি, আলগা হতে থাকে কোলের জড়ানো বাঁধন-
শিশুটি ভয়ে বলে উঠে, ও-মাগো ছেড়ে দিও-না, পড়ে যাব এই ক্ষণ।
ডুকরে কেঁদে বলে মা বসে জমির আলে,-বাছাটি আমার খুবই অবোধ-
এই জালিমদের হাত হতে রক্ষা কর আমাদের, হে পরম দয়াল মাবুদ।
ছল-ছল নয়নে শিশু মুছে দেয় মায়ের দু’চোখ, বলে আরও জোরে-
বসেছ কেন মা? উঠো, শয়তান এসে পড়ে বুঝি, যেতে হবে বহু দূরে।
চেয়ে দেখ মা পিছন পানে, জ্বলে অনলে ঐ আমাদের সাজানো গাঁ-
আমাদের সুখের ঘরটিও পুড়ে গেছে; নিয়েছে ঘরের ধন-রত্ন ছিল যা।
ক্ষুধায় উদর মোচড়ায়; আর পারিনা, কিছু খেতে দাও আমায় মা-
হাপাচ্ছো তুমিও তেমনি, বল নেই শরীরে চলছে না তোমারও পা’’।


চুপটি করে থাকতে পারলো না মা, বাছারে জড়িয়ে কেঁদে-কেঁদে বলে-
বাবা, খেতে দেবে কে? আগে জীবন বাঁচাও, এখনই যেতে হবে চলে।
দেখা যায় ঐ দূর পাহাড়, তা ডিঙায়ে নাফ নদী; তারপর পাবে সীমা;
যদি দরদী কেহ থাকে, পার করে দেয় ওপাড়ে, করুণার ছলে করে ক্ষমা।
ওদেশে আছে আমাদের জাতি ভাই, আছে শত মুসলিম আরও কত মহান
ধর্মের দোহাই, মানবতার জোরে দেবে গো ঠাঁই; করে যদি-গো খাদ্য দান।