ঘরের চার দেওয়ালের সীমানা ছাড়িয়ে
ওরা এসে দাঁড়ায় প্রকৃতির নীবিড় স্নেহে
একজন জন্মান্ধ - অপরজন বোবা ।
অপরাহ্নের স্তিমিত আলো এসে লাগে ওদের চোখে-মুখে
বৈশাখের অক্লান্ত শুষ্ক বাতাস বয়ে চলে --
কিছুসময় দুজন দুজনকে আবিষ্ট রাখে মৌনতায়,
বিহঙ্গের দল সমস্ত দিনের রৌদ্র মেখে
উড়ে চলে দোদুল্যমান নীড়ের খোঁজে,
দূরে নদীর পাড় ভাঙ্গার শব্দ প্রখরতর হয়
বুনোফুলের গন্ধে বাতাস নতুন প্রাণ পায়
ঠিক তখনই কাঁধে দুটি হাত রেখে জন্মান্ধ বলে:
- আমার হাত থেকেও তোমার কাছে ঋণী
কখনোও বোঝা মনে হয়নি আমাকে !’
বোবা মেয়েটির হাত দুটি অপর দুটি হাতে মুষ্ঠিবদ্ধ হয়
ই - ই শব্দে কিছু বলতে চায় --
এক ফোঁটা জল নিম্নগামী মুষ্ঠিবদ্ধ হাতের উপর এসে পড়ে
জন্মান্ধ ছেলেটি বলে : কেন আমায় ভালোবাসো বুঝি ?
হাত যুগল আরোও শক্ত হয়ে ওঠে,
এত কম কথায় এযেন গভীরতার মাপকাঠি !
জ্যোত্স্নার শীতল আলোক-মালায় উজ্জল হয়ে ওঠে ওরা
মেয়েটি উ - উ শব্দে ওর মুখটি তুলে ধরে –
- ‘চাঁদ দেখতে কেমন, কিবা তার রূপ
কখনো দেখিনি আমি’ : জন্মান্ধ বলে।
মেয়েটি জন্মান্ধের হাত দুটি নিজের মুখের উপর রাখে
কাঁপা কাঁপা দুটি হাতের দশটি আঙ্গুল যেন
নারকেল পাতার ফাঁক দিয়ে চন্দ্রীমাকে স্পর্শ করে
দশ আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে দেখা মুখটি যেন
তলোয়ার দিয়ে ফালা ফালা করা রূপের টুকরো।
জন্মান্ধ বলে ওঠে : চাঁদ দেখতে গোল হয় --
তোমার মুখ ঠিক যেন তাই,
-   হা  হা শব্দে হেসে উঠে চুল এলিয়ে দেয় ওর মুখের ওপর,
-  কী মধুর ফুলের গন্ধ তোমার চুলে
   ফুল কেমন হয় !
আরো একবার মেয়েটি জন্মান্ধের হাত দুটি
তার বুকের কোমল অঙ্গে রাখে
বোবা মেয়েটির শরীর যেন স্লথ হয়ে আসে –
-  ফুল তোমারি মত সুন্দর আর নরম।’
হঠাত বাতাসের গতিবেগ বাড়তে থাকে
বিদ্যুতের ঝলকানিতে ভীত বোবা মেয়েটি
জন্মান্ধের হাত চেপে ধরে,
প্রচন্ড একটা শব্দ আর আলোকবর্ষে
বোবা মেয়েটির চোখ ধাঁধিয়ে যায়,
ওরা দুজন-দুজনকে আরোও শক্ত করে চেপে ধরে
তারপর এক পলকেই সব শেষ।
থমথমে রাত বোবা কান্নায় মুখ ঢাকে ,
প্রকৃতির তান্ডব শেষে আসে প্রভাত
তখনোও হাত দুটি মুষ্ঠিবদ্ধ , নিথর দুটি প্রাণ।