গতকাল স্কুলে গরমের ছুটি পড়েছে  
তাই মিমি সারাটাদিন খেলে বেড়িয়েছে
সন্ধ্যে হতেই বাবার হাত ধরে
নাটমন্দিরে গেল আরতি দেখতে,
ঘড়িতে ঢংঢং করে আটটা বাজলো
আলোক-ছটায় পূজার আরতি হল শুরু
আর তারই সাথে আচমকা গুলিবর্ষণ
প্রচন্ড-শব্দ ধোঁয়া-ধুলো চিত্কার-চেঁচামেচি  
বারুদের গন্ধে বাতাস বিষাক্ত হয়ে ওঠে
বিক্ষীপ্ত প্রাণগুলি ছুটতে থাকে এদিক থেকে ওদিক
তারপর সব আলো নিভে যায় ।


মিমির মা তখন রাতের রান্না শেষে
গা ধুয়ে এলো চুলে চিরুনি দিয়ে
চৌকির উপর এসে বসে,
স্কুলের নতুন খাতার মলাট দিয়ে
সেলাই করতে গিয়ে রক্তপাত ঘটে ।


রাত দশটা বাজলো
মানুষটা সেই যে গেল
এখনো ফেরার নাম নেই,
'সমস্ত দিন জমিতে চাষ দিয়েছে
তারপর কোথায় একটু বিশ্রাম নেবে
তা নয়, মেয়ের যত আবদার
সে না করতে পারে না ।’


জানালার দিকে চোখ পড়তেই প্রচন্ড আলো
আর শব্দে ভীত হয়ে ঘরের এক কোনে
ইষ্টনাম স্মরণ করতে থাকে তার মা ।
তারপর অনেক রাত্তিরে
বারুদের গন্ধ মেখে রক্তাক্ত চাষী
বাড়ী ফিরল --
হাতে মিমির লাশ।


ডুকরে কেঁদে উঠলো ওর মা
পাষাণ বাবা মুখ চেপে ধরে বলল
চুপ ! ওকে শান্তিতে ঘুমোতে দাও --
যারা শান্তি চেয়েছিল তারা
ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে,
এসো আমরাও ঘুমিয়ে পড়ি!
পরেরদিন সকালে শুধু নাটমন্দিরে নয়
চাষীর পোড়া ঘর থেকেও
লাশ পোড়া গন্ধ বাতাসে ভেসে বেড়ায় ।


কারা লাগলো চাষীর ঘরে আগুন ?
কারা চালালো গুলি ?
কেন হলো এতগুলো প্রাণের আহুতি !
কী তাদের অপরাধ !
হে দেশের রাজা, কেন আমাদের সাজা ?
আমরাতো শুধু বাঁচতে চেয়েছিলাম
তোমরা চেয়েছিলে শান্তি !