বিষাদের রাত
- পল্লব


রাত নিঝঝুম
নেই চোখে ঘুম
জোনাকিরা খেলে খেলা,
নিশ্চুপ মনে
সঙ্গোপনে
নীরবে অশ্রু ফেলা।


জানি না এ চোখে
কেন থেকে থেকে
বাণ ডাকে অকারণে,
আঁধারে একেলা
কেটে যায় বেলা
অদ্ভুত শিহরণে।


জানালার পরে
বসে দেখি দূরে
মিটিমিটি তারা জ্বলে,
মনে যেন চায়
হারাতে সেথায়
বিষাদের ডানা মেলে।


(রচনাকাল: ৮ সেপ্টেম্বর ২০০৬ ইং)
কবিতাটি তাঁর 'স্বপ্ন পাখি' বইয়ে প্রকাশিত হয়েছে।


আলোচনা -


একাকী জীবনে মানুষ নস্টালজিক তাড়নায় প্রায়ই স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ে। কখনো ডায়েরি কিংবা চিঠি লিখে। কখনো সে আপন মনে কথা বলে নিজেরই সাথে।


তেমনি একাকী জীবনের এক 'জোনাকির আলো খেলা' বিষণ্ন রাতের নিঝঝুম প্রহরে যখন চোখে ঘুম নেই - নীরবে সঙ্গোপনে কত ভাবনাই না মনে চলচ্চিত্রের ফিতা ঘুরিয়ে চলে! কত মাকড়শাই না বুনে যায় রিক্ত স্বপ্নের সাদাকালো জাল!


সেই চলচ্চিত্রের ফিতায় তখন চিত্রিত হতে থাকে - ফেলে আসা জীবনের মলিন অমলিন সব স্মৃতি আর প্রিয়জনের সান্নিধ্য বিরহের কথা। বিষাদের ডানা মেলে একাকী মন উড়তে থাকে... জীবনের স্বপ্ন-সাধ, পাওয়া না পাওয়ার সুখ-বেদনাগুলো ক্রমেই মনের রেটিনায় আলোকসম্পাত করে করে যায়।


ফেলে আসা জীবনের সুখ-স্মৃতিগুলোও তখন এক বিষণ্ন মেদুরতায় ঢেকে যায়। তাই বারেবারে কারণে অকারণে শরীরে অদ্ভুত শিহরণে জাগে। আপনা থেকেই চোখ লোনাবারীর প্লাবনে ভাসে। মুক্ত বাতায়ন গলে ভাবুক মন বিষাদের ডানায় ভর করে হারিয়ে যেতে চায় মিটিমিটি তারা জ্বলা দূর নীলিমায়।


আজ থেকে এগারো বছর আগে রচিত কবিতাটি বলা চলে কবির অপরিণত বয়েসের লেখনী তবু এর ভাব বিন্যাস ছন্দ মাধুর্য কোন ভাবেই অপরিণত বলে মনে হয় না। ভাষার যা কিছু অগণ্য দুর্বলতা আছে তা এখন লিখলে আর হতো না। কারণ এখন তিনি আরো বেশি শীলিত ও ঋদ্ধ।


কবির রচনাশৈলী বরাবর সুন্দর। তিনি লিখেন কম পড়েন বেশি। সেই কারণেই বরাবর তার লেখা  একটা মান বজায় রেখে চলে। কর্মময় জীবনের ভীষণ ব্যস্ততার মাঝে একজন আইটি প্রাযুক্তিক হয়েও তিনি কবিত্ব বোধের কারণেই তারই মত সৌখিন কবিদের জন্যে এমন একটা সুন্দর সাইট উপহার দিতে পেরেছেন।


কবির জন্য রইল প্রাণের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।