"মলিন বিরহ" - মা, মাটি ও মানুষের এক সুশান্ত জমিনের প্রচ্ছদে আঁকা মন ছুঁয়ে যাওয়া ভালোবাসার ছবি!  


কবি ভাবনায় কত কী ছায়াপাত করে! কত কী ভাবনার শিকড় গজায় কবির মনভূমে! প্রকৃতির অমোঘ লীলা প্রত্যক্ষ করেন কবি তাঁর মননের কোণে। জীবন জটিলতায় শত অশান্তি ও সুস্থিরতার অনটনেও কবি হৃদয় আজো শুষ্ক মরুভূমি কিংবা পাষাণ হয়ে যায়নি। আঁধারের আলিঙ্গনে তাই তিনি "চোখের খুউব গভীরে ভীষণ নোনা জমাট জল" ধরে রাখতে পারেন। আজো "ভূখা ন্যাঙা (নাঙা?) মানুষের" প্রতিটি দীর্ঘশ্বাসে তিনি 'ওহ্ আহ্' শব্দ শুনতে পান।


মানুষের মন সতত পরিবর্তনের আবর্তে ঘূর্ণায়মান। তার আছে এক প্রাকৃতিক 'মুছনী'। তাই নিরন্তর দুঃস্বপ্নের মাঝেও মানুষ অনায়াসেই "পেছনের দুঃস্বপ্নের ক্ষত" সহজেই মুছে দিয়ে ভুলে যেতে পারে সব। নিরেট বাস্তবতা সত্ত্বেও মানুষ স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে এবং শত অনটনেও তা গোপনে লুকিয়ে রাখে।


কবির সত্তাজুড়ে আজো স্বজন হারানো মানুষের কষ্ট জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। "গভীর কালো দীর্ঘ রাত"কে তিনি ভুলতে পারেন না। শত কষ্ট ধারণ করা বুক। তন্দ্রাহীন হলুদ দু'চোখে এখনো দেখতে পান" অনাহারী  মানুষের ঢল"। শুনতে পান সেইসব মানুষের আহাজারী - "যারা একদিন স্বপ্ন দেখেছিল" নিশ্চিন্ত ও নির্বিঘ্ন প্রহরের আশায়। অথচ তাদের চোখ এখনো স্বপ্নহীন আর সমুখে সূদুরের অচেনা শঙ্কা!


স্বাধিকার আদায়ের মহান সংগ্রামের সেই" উজ্জ্বল সময়ের কথা" আজও যেন দেদীপ্যমান। আজ দেশ মাতৃকার লাল-সবুজ পতাকার অবমাননা, তার জীর্ণ-মলিন দশা তাঁকে ভীষণ আহত করে। ক্ষোভ ও কষ্টে মৃয়মান হয়ে ভাবেন - "তবে স্বাধীনতা কি আমার মলিন বিরহে কাতর?" এই অনন্ত জিজ্ঞাসার জবাব খুঁজে ফেরেন কবি সতত চিন্তায় ও কাজে।


বোধ ভাবনা ও বক্তব্যে প্রাঞ্জল কবিতাটি কবির দেশপ্রেমের অনন্য স্বাক্ষর। আমার সীমিত জ্ঞানে ও বোধে কবিতার রসাস্বাদন করতে গিয়ে যা অনুভবে ধরা পড়েছে তা-ই লিপিবদ্ধ করার চেষ্টা করেছি মাত্র। জানি না কতটুকু পেরেছি। এই কবিতার কবিই তা ভাল বলতে পারবেন।


এমন সুন্দর দেশপ্রেমের কবিতার রচয়িতা কবিকে জানাই প্রাণের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।