কবি বন্ধুরা, শিরোনাম দেখেই চমকে উঠলেন তো! হ্যাঁ, চমকাবারই কথা। তবে মিথ্যে নয় – এই যে শিরোনামটি দেখলেন, এটাও এক জাতীয় বিপণন কৌশল। মুক্তবাজার অর্থনীতির ডামাডোলের মূলমন্ত্র একটাই –‘প্রচারেই প্রসার’। আমি এখন সে কথাই বলব। চটকদারী বিপণনের থীমটা অবশ্য আমার না, এই আসরে নতুন আগত এক কবির কাছ থেকে পাওয়া। আধুনিক প্রতিযোগীতার বিশ্বে যথার্থ বিপণনই পণ্য, সেবা ও গুণের উপযোগীতা বাড়ায়। আমি কখনো আলকাতরা ব্যবহার করি নি, কিন্তু কোন ব্র্যান্ডের আলকাতরা ভাল আমায় জিজ্ঞেস করলে কিছু না ভেবেও বলে দিতে পারব কারণ, বিজ্ঞাপনের কল্যাণে জেনেছি। কবিতাই বা এর ব্যতিক্রম হবে কেন?


এই আসরের কথাই বলি; অনেক গুণী কবি আছেন যাদের লেখা অতি উচ্চমানের হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের অনেকেরই পাঠক সংখ্যা অপ্রতুল। কারণ কি? উনারা প্রচার করতে জানেন না বা বোঝেন না। উনারা জানেন না যে, সঠিক বিপণন করতে না পারলে কেউ এমনি এমনিই তাদের কবিতা পড়তে আসবেন না। সেসব নিরীহ সম্মানীত বন্ধুদের বিনয়ের সাথে বলি – আমার মত এমন কিছু হাভাতে কবির পাতায় গিয়ে দেখুন পাঠক কয়েকশ’ ছাড়িয়ে গেছে অথচ অনেকেরই উৎকৃষ্ট মানের কবিতার পাঠক সংখ্যা শ’ই ছাড়াতে চায় না। কারণ কি? সমাধান আছে, হ্যাঁ আমার কাছে। ফী লাগবে না, কেবল আস্থা রেখে পরখ করুন, দেখবেন ‘জলবৎ তরলং’। পাতার একজন ভোক্তভোগী সদস্য হিসাবে আমার পর্যবেক্ষণ থেকে পাওয়া বিষয়গুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করছি। পাঠক সংখ্যা বাড়াতে চান? নিজের কবিতার মান যাচাই করতে চান? তাহলে নিম্নে বর্ণীত বিষয়গুলোতে নজর দিন:


আকর্ষণীয় শিরোনাম:
রান্নায় যেমন ‘ঘ্রাণেই অর্ধেক ভোজন’, বলা হয়ে থাকে - কবিতার অর্ধেক স্বাদ এর শিরোনামেই। কবিতা যেমনই হোক না কেন শিরোনামটা যেন আকর্ষণীয় ও কা্ব্যিক হয়। শিরোনামের আকার যথাসম্ভব বড় না হয়। শিরোনামটা কবিতার ভাব ও বক্তব্যের সাথে যেন সাযুজ্য হয়। আর শিরোনামই হ’ল কবিতা বিপণনের প্রথম ধাপ।


আন্তঃকবি সম্পর্ক গড়ে তোলা:
মেধা শ্রম খাটিয়ে, সময় নষ্ট করে কবিতা লিখে পোস্ট দিলাম আর হতে গোনা ক’জন মাত্র কবিতাটি পড়লেন আবার ভালমন্দ কিছু জানতেও পারলাম না। তাহলে আরো ভাল কিছু লেখার উদ্যম আসবে কোথা থেকে? কাজেই, পরিশ্রম সার্থক করতে, পাঠক বাড়াতে কবিতার বিপণন জরুরী। আর বিপণনের দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে আন্তঃকবি সম্পর্কোন্নয়নের মাধ্যমে অধিক পাঠককে কবিতাটি পড়তে উদ্বুদ্ধ করা। তাতে আমার কবিতার মান সম্পর্কে পাঠক/কবিবৃন্দ অবহিত হবেন ও তিনি আমাকে চিনবেন। পাতায় মোটামুটি সবাই নবিসি কবি। স্বনামধন্য কোন কবি এখানে লিখেন না। হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া পাতার অনেকেই অনেককে চিনেন না। যত বড় কবিই হোন, একজন কবির সব লেখাই যেমন উৎকৃষ্ট হয় না তেমনি সবই নিকৃষ্টও নয়। কাজেই কে ভাল লিখেন বা কার কোন কবিতাটি গুণে-মানে সুন্দর তা তার কবিতা না পড়ে কেউই বলতে পারবেন না। কেউ কেউ দু’একবার কারো কবিতা পড়লেও বোঝা যায় না যে তিনি কবিতাটি পড়েছেন। কারণ, লেখাটি পাঠকের মনে গভীরভাবে দাগ না কাটলে খুব কম কবি/পাঠকই অপরিচিত কাউকে মন্তব্য দেন। ফলে কবিতাটির ভাল-মন্দটা যাচাই করা যায় না। সে জন্যে বেশি বেশি কবিতা পড়তে হবে। পাশাপাশি কবিতার ভাল-মন্দ উল্লেখপূর্বক মন্তব্য লিখে ও মন্তব্যকারী কবিকে কৃতজ্ঞতাসূচক প্রতি-মন্তব্যের মাধ্যমে সৌজন্যতা বজায় রেখে রচয়িতা কবির সাথে ব্যক্তিগত পরিচয় ও হৃদ্যতা বাড়ানো যায়। আমার বিশ্বাস; মাত্র একমাস নিষ্ঠার সাথে এই চর্চাটি করতে পারলে পাঠকের সংখ্যা কয়েক গুন বেড়ে যাবে।


ভাব ও বক্তব্যের প্রাঞ্জল উপস্থাপনা:
আমরা অনেকেই শব্দ বিন্যাসের দুর্বলতায় মনের সুন্দর ভাবটাকেও ঠিক মত উপস্থাপন করতে পারি না। এই দুর্বলতা কাটাতে লেখার সময় ও লেখার পরে কবিতাটি বারবার আবৃত্তি করতে হবে। মনে রাখতে হবে, কবিতা লেখার চে’ও আবৃত্তির বোধই একজন কবির বড় সোপার্জিত সম্পদ। ভাল আবৃত্তিকারের জ্ঞান ও দক্ষতা কম থাকলেও তিনি নিঃসন্দেহে কাব্যিক লেখা উপহার দিতে পারবেন। ধরে নেয়া যায়, যে কবিতা আবৃত্তিতে ভাল সে কবিতা যত দুর্বলই হোক কাব্যমানে উত্তীর্ণ। সে কবিতা ভাল না হয়ে যায় না।
  
বানান ও সম্পাদনায় পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা:
শিল্প মাধ্যমের সব ক’টি শাখার মধ্যে কবিতা হ’ল সবচে’ উঁচু মানের বিমূর্ত শিল্প। এই শিল্পের সৌকর্য খোদ কবিতার স্রষ্টার হাতেই। আর কারোরই তাতে রঙ চড়াবার অবকাশ নেই। একটা গান অতি সাধারণ মানের হলেও সুরকার ও কণ্ঠশিল্পীর মুন্সিয়ানায় অনন্য হয়ে উঠতে পারে কিন্তু কবিতায় সে সুযোগ নেই। সুতরাং ভাল-মন্দ যেটুকু হওয়ার তা কবির হাতেই শেষ। কাজেই বানান, যথার্থ যতিচিহ্নের প্রয়োগ ও বিন্যাসের সৌন্দর্য বজায় রাখা এবং বোধ ও ভাবনার পরিচ্ছন্ন প্রকাশে খুবই মনযোগী হওয়া জরুরী।


বক্তব্যে রসবোধের উপস্থিতি:
শিল্প জিনিসটাই রসের হাড়ি। আর সেই রসের রসিক স্রষ্টা কিন্তু কবিই। গানই বলি আর কবিতাই বলি দুইই তৈরী কিন্তু ওই কবির হাতেই। গানে একটু রস কম থাকলেও শিল্পী, সুরকার ও বাদ্যযন্ত্রের কল্যাণে উৎরে যেতে পারে কিন্তু কবিতায় তা সম্ভব নয়। কাজেই বক্তব্যের পাশাপাশি মনোগ্রাহী রসও থাকতে হবে সেই সাথে সুন্দর কাব্যিক বিন্যাস।


আজ এই পর্যন্তই থাক। পরে আরো কথা হবে অন্য কোন দিন, অন্য কোন বিষয় নিয়ে। সবাইকে ধন্যবাদ।
----------------------------------------------------------
কৈফিয়তঃ-  লেখাটা বিশেষ করে এই আসরে লিখেন এমন ক'জন গুণী কবির হতাশার জবাব। বস্তুত তাঁরা সবাই আমার প্রিয় লেখক। তাঁদের লেখা গুণে মানে অনন্য ও অনুকরণীয় কিন্তু আক্ষেপ - তাঁরা যথার্থ মূল্যায়িত হচ্ছেন না। সুতরাং এই আসরে নিজের লেখা কি করে অপর কবিকে দিয়ে পড়িয়ে নেয়া যায় - এ তারই সাময়িক ব্যবস্থাপত্র মাত্র।