বন্ধুরা, আগেই বলেছি; আমি কোন ব্যাকরণবিদ বা সুশিক্ষিত পণ্ডিত নই। নিজে শিখতে গিয়ে যে কৌশলের আশ্রয় নিয়েছি সেগুলোই আপনাদের সাথে শেয়ার করছি মাত্র। এতে যদি কোন বন্ধুর উপকার হয় আমার এ প্রয়াস সার্থক বিবেচনা করব। ক’দিন আগেও আমি প্রচুর ভুল করেছি (এখনো করি, তবে আধিক্য কমেছে) আমার উপস্থাপনায় কোন ভুল পরিলক্ষিত হলে কোন বন্ধু দয়া করে সংশোধন করে দিলে; বাধিত থাকব।


নিজের উপর আস্থা থাকা ভাল। কিন্তু অতি আস্থায় নিজের অজান্তেই কখনো আমরা কিছু ভুল করে বসি। কেউ কেউ ভুল করেও আবার চাতুর্যতার আশ্রয় নিই। নমুনা দেখুন:


১) আমার ‘বানাম কখনও ভূল হয়না’। এখানে পাঁচ শব্দ বিশিষ্ট বাক্যের চারটি শব্দই ভুল করে এমত আস্ফালন করা হয়েছে। শুদ্ধ বাক্যটি হবে – ‘আমার বানান কখনো ভুল হয় না’। বাক্যস্থিত সমস্যাগুলো বুঝতে পারলে নিশ্চয় বক্তা এরূপ ভুল করতেন না (বিষয়টির উপর প্রয়োজনীয় টিপস্ নিচে তুলে ধরছি)।


২) "আমার চোখে কোণ বাণানে ভুল নেই। দয়া করে বাণান ভুলগুলি ভুল ধরিয়ে দিন।"(এই বক্যেও কিছু ভুল রয়েছে)। অথবা “যে একটি বানান ভুল ধরিয়ে দিতে পারবেন তাকে একটি করে কবিতা লিখে উৎস্বর্গ করব।“(এখানেও ভুল)। অতপর; কোন মন্তব্যে ভুলগুলো সংশোধন করে দেয়া হলে যথেষ্ট চাতুর্যতার সাথেই বানানগুলো ঠিক করে নিয়ে কৃতজ্ঞতা স্বরূপ ধন্যবাদ জানাতে ভুল হয়ে যায় এবং সংশোধনীর মন্তব্যটি অথবা গোটা পোস্টটিই মুছে দিয়ে নতুন করে আবার পোস্ট দেয়া হয়।


৩) কেউ বা আবার চাতুর্যতার নিকৃষ্টতম কৌশলের আশ্রয় নিয়ে ধাপ্পা দিয়ে বসেন – “আমার লেখায় যাতে বেশি বেশি মন্তব্য আসে এবং আপনার মত বিশিষ্ট ব্যক্তির নজর কাড়ে সে জন্যে ইচ্ছা করেই ভুল করে রাখি।” এখানে একটা গল্প না বলেই পারছি না – কোন এক ধূর্ত ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত আপনার কলমটি হাতিয়ে নেয়ার তালে সেটিকে নিজের পকেটে রাখল। যখন আপনি বিষয়টিতে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন তখন সে বলছে – “ না, কলম কি আর নিয়ে যাব? দেখছিলাম; আপনি ঠিক খেয়াল রাখতে পারেন কি না!” আমার মনে হয় কবিদের এমন শঠ হওয়া মানায় না।


এবার মনে রাখার মত দুটি টিপস্ বলছি:


* একমাত্র আদেশ বা অনুজ্ঞাসূচক বাক্য হলেই ক্রিয়া পদের শেষে ‘ো’(ও-কার) দেয়ার দরকার আছে। যেমন করো, ধরো, উঠো, শুয়ো, হেঁটো, বসো, এসো, থেকো, যেয়ো, ভুলো, দেখো ইত্যাদি। অথচ এই ভুলটা প্রায় সবাই আমরা করে থাকি। প্রায় ক্ষেত্রেই চলিত-ভাষায় ক্রিয়া পদের শেষে ‘ো’(ও-কার) দিয়ে থাকি। এরূপ চর্চা না করাই উত্তম।


উল্লেখ্য; বাক্যের অন্তর্গত কোন শব্দের ব্যবহারে কখনো অর্থ বিভ্রমের সম্ভাবনা না থাকলে ক্রিয়াপদের শেষে হস্-চিহ্ন অথবা ‘ো’ (ও-কার) প্রযুক্ত হবে না। যেমন; যাবো, খাবো, চলো, করবো, ধরবো, আসবো, ঘুমাবো, উঠাবো, ভুলবো জাতীয় শব্দে ‘ো’(ও-কার)দরকার নেই। কিন্তু ‘দেবো’ শব্দে ‘ো’(ও-কার) না দিলে যদি ‘দেব’ বা ‘দেবতা’ শব্দের সাথে এবং ‘হল’ শব্দটি ‘হলঘর’ শব্দের সাথে( বিভ্রম ঘটার সম্ভাবনা থাকে কেবল তখনই ভাষাকে সাবলীল করতে কিছু ব্যতিক্রম ক্ষেত্রে ‘ো’(ও-কার) দিতে পারি অথবা একটি উল্টো কমার (‘) ব্যবহারেই শব্দটির বিশেষত্ব চিহ্নিত করতে পারি যেমন; দে’ব, হ’ল, খা’ব, যা’ব ইত্যাদি।


আবার; চল, ধর, পর (কাপড় পর, ঘড়ি কিংবা অলংকার পরা) ঠিক, দিক, ইত্যাদি জাতীয় প্রচুর শব্দ আছে যেসব বাংলা উচ্চারণেই হস্ ধ্বনির হয়ে থাকে। কাজেই এসব শব্দ বা পদের শেষে হসন্ত না দেয়াই উত্তম। চল, ধর, পর, কাত, মদ, চট, ফটফট, কলকল, ঝরঝর, তছনছ, জজ, টন, হুক, চেক, ডিশ, করলেন, বললেন, শখ, টাক, টক, ঠিক ইত্যাদি শব্দ উচ্চারণেই হস্-ধ্বনির। দিক্, চল্, ধর্, পর্ ঠিক্, দিক্ ইত্যাদি বোঝাতে শব্দের শেষে হস্-চিহ্নের দরকার নেই। ভুল উচ্চারণের আশঙ্কা থাকলে হস্-চিহ্ন ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন : উহ্, যাহ্। একজন সচেতন লেখক তার প্রকাশের সাবলীলতার স্বার্থেই বুঝে নিবেন তাঁর কি করা উচিৎ। অর্থের বিভ্রান্তির আশঙ্কা থাকলে তুচ্ছ বা অনুজ্ঞাসূচক শব্দে হস্-চিহ্ন ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন : কর্, ধর্, মর্, বল্।


* নঞর্থক শব্দ আলাদা লিখতে হবে যেমন: নাই, নেই, না, নি এই নঞর্থক অব্যয় পদগুলি শব্দের শেষে যুক্ত না হয়ে পৃথক থাকবে। যেমন : বলে নাই, যাই নি, পাব না, তার মা নাই, আমার ভয় নেই। জানি না (পাবনা, যাবনা, বলেনি, হইনি, জানিনা, হতনা, শুনিনি, খাবনা, পাননি ইত্যাদি কখনো নয়)।

তবে শব্দের পূর্বে নঞর্থক উপসর্গরূপে ‘না’ পদটা উত্তরপদের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। যেমন : নারাজ, নাবালক, নাহক, নালায়েক, নাগাওয়া, নাদান, নাখোস ইত্যাদি।


এবার আসা যাক কিছু সাধারণ ভুলের বিষয়ে - যেগুলো একটু সচেতন হলেই আমরা দূর করতে পারি। যেমন;


“ন”-এর ব্যবহারে: কারণ, করুন, করুণ, কাঁকন, গ্রহণ, ধরণ, ধারণ, বরন, বারণ, ঝর্ণা, ঝরনা, স্মরণ, শরণ, মরণ, ইত্যাদি।


“য-ফলার” পর ‘া”(আ-কার): কোন শব্দে থাকবে আর কোন শব্দে থাকবে না তা বেশি বেশি চর্চার মাধ্যমে ও সতর্কতায়ই নিরূপণ করা যায়।


রেফ-এর পর ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হবে না। যেমন: অর্চনা, অর্জন, অর্থ, অর্ধ, কর্দম, কর্তন, কর্ম, কার্য, গর্জন, মূর্ছা, কার্তিক, বার্ধক্য, বার্তা, সূর্য। আগে অনেকেই আমরা দ্বিত্ব বর্ণ ব্যবহার করতাম আবার “য-ফলা”ও দিয়ে থাকতাম। প্রমিত বানান রীতিতে বর্তমানে সে সবের আর দরকার নেই।


শব্দের শেষে বিসর্গ থাকবে না। যেমন : কার্যত, মূলত, প্রধানত, প্রয়াত, বস্তুত, ক্রমশ, প্রায়শ (কার্যতঃ, মূলতঃ, প্রধানতঃ, প্রয়াতঃ, বস্তুতঃ, ক্রমশঃ, প্রায়শঃ নয়)। কিছু ব্যতিক্রম শব্দে শ্বাসঘাত বোঝে শব্দের মাঝে বিসর্গ ব্যবহার করা চলে যেমন: মনঃক্ষুণ্ণ, অতঃপর, শিরঃচ্ছেদ, শিরঃপীড়া ইত্যাদি।


লেখা আর বড় করলে পাঠকের ধৈর্য থাকবে না। তাই, আজ এখানেই থামছি। পরে না হয় আলোচনার সুবাদে আরো কিছু টিপস্ শেয়ার করা যাবে! কামনা করব; সবাই যেন একটু সচেতন হই - তা না হয় নিজের জন্যই। উপকার কিছু হলে আমারই হবে। সবাইকে ‌আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা।