হতাশ কবিদের জন্য সুখবর! অনিরুদ্ধের রুদ্ধদ্বার ফর্মুলা জেনে নিন! কবির লেখায় মন্তব্য কিংবা পাঠক বাড়াতে কবিকে এখন আর ‘আপনা ঢোল আপনিই বাজাতে’ হবে না! আসুন, আমার কাছে জেনে নিন - পাঠক ও মন্তব্য বাড়াবার অভিনব ফর্মুলা!


প্রথমেই একটা পরিসংখ্যান মন দিয়ে শুনুন; বাংলা-কবিতা পাতায় ছয় হাজারেরও বেশি নিবন্ধিত কবি থাকলেও অধিকাংশই বলা যায় অলস একাউন্ট বা নিবন্ধন পর্যন্তই সৌখিন কবি সাজার শখটি থেমে গেছে। কিছু আছে ছয়মাস-বছর দিনের বিরতিতে মাঝেমাঝে পাতায় হাজিরা দেন। তবে ৩০০ থেকে ৫০০ নিবেদিতপ্রাণ সাহিত্যপ্রেমী কবি আছেন যারা একেবারে নিয়মিত না হলেও জাগতিক ঝক্কি-ঝামেলা এড়িয়ে মাঝেমাঝে হলেও কবিতা পাতায় আসেন। প্রতিদিন গড়ে ৮ থেকে ১০জন নতুন কবিও ঢুকছেন। নতুন একাউন্টধারীরা কয়েকদিন থেকে কয়েকমাস পর্যন্ত নিয়মিত পাতায় আনাগোনা করেন। তারপর হয় ডুব দেন নয় তো অনিয়মিত আসা-যাওয়া করেন। সেই হিসাবে পাতায় দৈনিক গড়ে দেড়-দুই শ কবির যাতায়াত আছে।


সপ্তাহের শুক্র থেকে রবি (ভারতসহ বহির্বিশ্ব ও বাংলাদেশের) সাপ্তাহিক ছুটি এবং দুই দেশের অন্যান্য সরকারী ছুটির দিনগুলো ছাড়াও বিশেষ উৎসব-পার্বণ বা ক্রিকেট খেলার বিশেষ ম্যাচের দিনগুলোতে পাতায় কবিদের উপস্থিতি এমনিতেই বেশ কম থাকে। তাতেও গড়-পড়তা দৈনিক কমবেশি ৮০-৯০টা কবিতা পোস্ট হলেও শ-দেড়েক কবির বিচরণ থাকেই পাতায়। তার মধ্যে অনেক কবি আবার লাজুক প্রকৃতির - মন্তব্য দিতে সংকোচ বোধ করেন অথবা মন্তব্য দিতে অভ্যস্তই নন। কেউ কেউ আছেন - শখে দু'একটি কবিতা লিখে ফেললেও দু-ছত্র বিবৃতিধর্মী বক্তব্য লিখতে ঘেমে নেয়ে উঠেন। আবার যা লিখেন তাও স্পষ্ট ভাব প্রকাশ করে না। তাই তারা বাধ্য হয়ে দু-এক শব্দের কিছু মন্তব্য দিয়ে নিজের পাতায় সেই কবির পাল্টা মন্তব্যের স্বত্বটা নিশ্চিত করেন মাত্র (এটাকেই আমি একে অপরের পিঠ চুলকে দেয়া বলি)। অনেকে ব্যস্ততা বা টেকনিক্যাল কারণেও সবসময় মন্তব্য দিতে পারেন না।

আবার কিছু কবিতা আছে, পড়া হলেও মন্তব্য দিতে গিয়ে (বহুবিধ কারণে: ক) অতিরিক্ত রাজনৈতিক, যৌনতা ঘেষা বা বিতর্কিত বিষয় নিয়ে লেখা। খ) কতক লেখার মান নিয়ে কথা বলতে গেলে যা লিখতে হয় তাতে লেখক কবি অসন্তুষ্ট বা হতোদ্যম হবার সম্ভাবনাই থাকে বেশি) ফিরে আসতে হয়। গ) কিছু লেখা আছে, উঁচু বোধের হলেও এত বিমূর্ত যে, কিছু বলতে গিয়ে নিজের অজ্ঞতাই প্রকাশ করতে হয় (খুব কম কবিই এটা করতে চাইবেন)। ঘ) আর কিছু লেখা আছে, যার বোধ-বক্তব্য তো বোঝা যায়ই না লেখার মানে ও বানানে সে লেখা নিয়ে কিছু লেখার আগ্রহই জাগে না। এখানে কিছু বলতে যাওয়াটাই পণ্ডশ্রম বলে মনে হয়।


সুতরাং, শত আন্তরিকতায় যথেষ্ট সময় ক্ষেপণ করেও (৬-৮ ঘন্টা সময়ে) নিজের লেখা-লেখি করে, নিজের পাতায় পোস্ট দিয়ে ও নিজের কবিতায় প্রাপ্ত মন্তব্যের জবাব দিয়ে একজন কবি সারাদিনে ২০-৩০টি (সত্যিকারের কবিতা পড়ে উপলব্ধি-সজ্জাত) মন্তব্যও দিতে পারেন না। তাহলে তিনি ক-জনের কবিতা পড়বেন আর ক-জনকে মন্তব্য দিবেন? তিনি তো আর দিনের পোস্টকৃত ৮০-৯০টি কবিতাই পড়তে পারেন না বা সব কটিতেই মন্তব্য দিতে পারেন না! তখন বাধ্য হয়েই অনেকে ছোট করে মান বাঁচানো ‘পিঠ চুলকানো’ মন্তব্য দিয়ে দায় সারেন।


এখন আমার প্রশ্ন; আপনি কি একে অপরের পিঠ চুলকে দিয়ে পাতায় মন্তব্য বাড়াবেন না খাঁটি মন্তব্য আপনার পাঠকের কাছ থেকে জোর করে আদায় করবেন? এত কিছুর পরও গড়-পড়তা ৫০-৬০জন নিয়মিত মন্তব্যদাতা কবির বিচরণ কিন্তু দেখতে পাই পাতায় (এই কবিরাই হলেন ‘মন্তব্য ব্যাঙ্ক’)। তার মধ্যে সময়-সংকীর্ণতা বা নানাবিধ কারণে কবিতা পড়লেও সবার মন্তব্য সব সময় সবার ভাগ্যে জোটে না। তাদের মধ্য থেকেই ভাল লেখিয়েরা গড়ে ২০-৩০টা মন্তব্য আদায় করে নিচ্ছেন? ভাল লেখিয়েদের পাতায় সেসব মন্তব্যের প্রতি-উত্তর যোগ হয়ে তা-ই ৪০/৫০/৬০ বা ৭০ দেখাচ্ছে। বাস্তব বিবেচনায় এটাই স্ট্যান্ডার্ড। অপরাপর ব্লগ সাইটের তুলনায় এই সাইটে আন্তঃলেখক সম্পর্ক বেশ নিবিড় তাই মন্তব্য তুলনামূলক বেশিই আছে।


এবার অনিরুদ্ধের নিগূঢ় তত্ত্বটি মন দিয়ে শুনুন; সবার আগে লেখার পাঠকসংখ্যার দিকে নজর দিন। পাঠক বাড়লে মন্তব্য আপনিই বাড়বে। যেখানে দৈনিক শ-দেড়েক পাঠকের বিচরণ সেখানে কোন লেখায় (পোস্টের তারিখ থেকে সাতদিনের মধ্যে) এক দেড়-শ পাঠক পেলে সেটাই স্ট্যান্ডার্ড। ভাল লেখিয়েদের অবশ্য ভক্তচক্র-গুণে এই সংখ্যাটি আরো এগিয়ে থাকে। কারণ; ভাল লেখিয়েদের পেছনে সরে যাওয়া লেখাও ভক্তরা পাতায় গিয়ে খুঁজে পড়েন। তাহলে আপনাকে ভক্তচক্র তৈরী করতে হবে! আপনি ভাল লেখিয়ে হলে কয়েক মাসের ব্যবধানে সে সংখাটি দ্বিগুণ/ত্রিগুণ হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।

তাহলে ভাবুন; আপনার পাতায় পাঠকসংখ্যা কিভাবে বাড়ানো যায়? এর দুটি উপায় আছে; প্রথমত - আকর্ষণীয় লেখা দিয়ে ভক্তচক্র বৃদ্ধি করা (লক্ষ্য করলে দেখবেন; পাতায় যেসব কবির সে গুণটি আছে তাঁদের পাঠক সংখ্যাও তুলনামূলকভাবে বেশি)। দ্বিতীয়ত - অপর কবির পাতায় সৃষ্টিধর্মী নান্দনিক মন্তব্য দিয়ে সেই কবির দৃষ্টি কাড়ুন। আপনার দু-তিনটে মন্তব্য পাওয়ার পরই দেখবেন; আমন্ত্রণ জানাতে হবে না, তিনি নিজে থেকেই আপনার কবিতা পড়তে চলে এসেছেন এবং আপনার লেখা পড়ে বাধ্য হয়েই মনের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে সুন্দর সুন্দর মন্তব্য দিচ্ছেন।


মনে রাখবেন; বাংলা-কবিতা সাইট একটা (কবিতার) বিশেষায়িত সাইট। এই সাইটের পাঠক কেবল কবিতাপ্রেমীরাই (খুবই সীমিত সংখ্যক)। সুতরাং, এই সাইটের আঙ্গিকে ২০০-র উপর পাঠক পাওয়া সত্যি ভাগ্যের ব্যাপার - সে কবি নিঃসন্দেহে ভাল লেখিয়ে। তাহলে ঠিক কাজটি করুন; লেখার মান ভাল করুন। আর মান ভাল করতে হলে - ভাল লেখকদের লেখা পড়ুন। আর ভাল লেখক খুঁজে পেতে পাতায় বেশিবেশি কবিতা পড়ুন! আপনার লেখায় ২০০-র বেশি পাঠকের সমাবেশ ঘটানোর কথাটি মাথায় রাখুন। ভাল লেখিয়ে হোন।


কী ডেকে এনে ফাঁকি দিয়েছি কি? আমার কথা শোনে আশা করি ঠকেন নি কেউ! কিছু হারিয়েছেন কি? তাহলে এখন থেকেই চেষ্টায় লেগে যান! অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা নিন –