(কবি কাজী নজরুল ইসলাম-এর বিদ্রোহী কাবিতার (বিপরীত ভাবনায় রচিত)প্যারোডি কবিতা-"অদ্রোহ"।)


              দ্যখো সত্যাশ্রয়-
        দ্যাখো প্রতিভা দীপ্ত হৃদয়
হৃদয় নক্ষত্র আমারই মৌন হৃদয় ওই সৃষ্টির বিস্ময়।
             দ্যখো সত্যাশ্রয়-
  দ্যাখো বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের চক্রব্যুহ পেরিয়ে
        অদৃশ্য স্বাপ্নিক স্বর্গ ছাড়িয়ে
   গ্রহ-সূর্যের অশুভ প্রভাব এড়িয়ে
জেগেছি চীর উদ্দীপ্ত আমি প্রাজ্ঞ চিন্ময়
আমার মস্তিষ্কে জ্ঞাত ঈশ্বর হাসে সৃ্ষ্টি
                         প্রমত্তে বিনিদ্র-নির্ভয়।
            দ্যাখো সত্যাশ্রয়-
           প্রতিভা দীপ্ত হৃদয়।


      আমি চির বিনম্র,বিনীত,অহিংস
শুচি প্রণয়ের আমি প্রেমীরাজ,আমি গাংচিল,আমি হংস
আমি বরাভয়,আমি আশীর্বাদ পৃথিবীর
             আমি কম্পিউটার
আমি গুপ্ত অজানাকে করি আবিষ্কার
       আমি নিয়ম-নীতি সুশৃঙ্খল
আমি ফেলে যাই যতো বিদ্রুপ,যতো অনিয়ম-উচ্ছৃঙ্খল
     আমি মেনে নিয়েছি প্রকৃতির আইন
আমি প্রলাপকে করি গোলাপ সন্নিভ,আমি কীবোর্ট,আমি গানের সপ্তম লাইন
আমি প্রমৃষ্ট,আমি পূর্বাশার বায়ু শীত-গ্রীষ্মের সমন্বয়
আমি অদ্রোহ,আমি অদ্রোহে-স্নাত ওই স্রষ্টার সঞ্চয়।
              দ্যাখো সত্যাশ্রয়-
          চির প্রতিভা দীপ্ত হৃদয়।
আমি ঝরনা,আমি নদী
আমি নীলাভ সমুদ্র-বুকে ভেসে চলি ধীরে নিরবধি
         আমি গদ্য কবিতার ছন্দ
আমি ভদ্রতার তালে চলে যাই,আমি ফুল্ল জীবনানন্দ
আমি ইকারুসের আকাশ,আমি রবি, আমি শব্দ শ্রমিক
আমি ভাবের বিষেষণ নিরিবিলি একাকী
বসে ভাবতে ভাবতে কখনো লেখি
       হঠৎ অপলকে দেখি দিগ্বিদিক,
       আমি সত্য-সুন্দরের সৈনিক।


আমি তাই করি প্রায় যখন চায় এ পৃথিবী যা
করি নিসর্গের সাথে কোলাকুলি,দেই নীলিমার গায়ে মাঞ্জা
       আমি ভাস্বর,আমি সজ্জা
আমি রোমাঞ্চ,আমি প্রীতি এ গ্যালাক্সীর জ্যোতির্ময়
আমি আশা-ভাষা সৃজনের,আমি শান্ত চির বিনয়
                দ্যাখো সত্যাশ্রয়-
          আমি চির বিচিত্র হৃদয়।


আমি স্বেচ্ছা সেবক,আমি সময় বিজয়ী সাংবাদিক
আমি শহীদ স্মৃতি,আমি সালাম,আমি রফিক
আমি ফ্লাগ,আমি মানচিত্র,আমি লাল-সবুজের স্পন্দন
আমি বায়ান্নো,আমি একাত্তরের দেশমাতার ক্রন্দন,
আমি স্বাধীনতা-প্লুত বুকে সাহস চোখে জয় রোমান্টিক
আমার হৃদয় কখনো বিপ্লবী,কখনো ভীষন আবেগী প্রেমিক
আমি প্রবৃত্তির কোমল-কঠোর সংমিশ্রণ চেতনায় স্বতন্ত্র অতিশয়
আমি নেপথ্যচারী,করি পায়চারী যত্রতত্র হয়ে নীরব তন্ময়,
             দ্যাখো সত্যাশ্রয়-
          চির প্রতিভা দীপ্ত হৃদয়।


আমি দ্বৈতবাদী,দৃষ্ট দার্শনিক
আমি জ্যোতির্বিদ,আমার বোধোদয় মুক্ত আধুনিক
আমি মেন্ডেলা,আমি বেঞ্জামিন
আমি মানবতা প্রিয় জ্ঞানী ও অর্বাচীন
আমি শুভ্র,আমি সৎ-সভ্যতার আ্যলবাম
আমি বৈজ্ঞানিকের অম্লান কৃষ্টির সংগ্রাম
আমি সকল নবীর অমর বাণী,চির পবিত্র ধর্ম
আমি তন্ত্র ও মহাগ্রন্থ,আমি চৌকস দৃঢ় কর্ম
আমি যোগ্য উচ্ছাশা,মহৎ পথের যাত্রী
আমি প্রেমালো চাঁদ,আলোকিত করবো রাত্রী,
আমি মসৃন-মৃদু প্রশ্বাস,-আমি স্বচ্ছময়ী সুবাস
আমি দ্যুতি-প্রণয়ের দ্বাদশ রাশির উন্মীলিত উদ্ভাস।
আমি কখনো পার্থিব-কখনো অনাবিল স্বপ্নচারী
আমি অলুব্ধ সুখে বিমুগ্ধ,আমি বিধাতার কর্মচারী
            আমি সুচারু,আমি সুন্দর
আমি নির্ঝর স্বর ঝর ঝর,তাজা শিশির ভেজা চরাচর।


আমি শ্যমবর্ণ বালিকার এলোচুল,মিষ্টি চোখের দৃষ্টি
আমি অষ্টাদশীর কমনীয় কপোল,
বর্ণালী চিবুক,আমি শ্রাবনের বৃষ্টি
    আমি অকৃত্রিম মন সম্প্রীতির
আমি পুরুষের বুকে স্ফীত বিশ্বাস,শ্রেয় আশ্বাস,আমি উদাসীর
আমি সঞ্চিত কথার পান্ডুলিপি স্ফুট অনুরাগের যতো অভিসারীর
আমি জীবনের সুপ্ত বাসনা,মার্জিত কামনা প্রিয় বাঞ্ছিত বুকে পথবাসীর
আমি প্রত্যাশী চির প্রসন্ন মনের সুনসান নীরবতা মনোরম স্পর্শের
শ্রী-অলংকার সুর ঝংকার আমি ঝন ঝন শ্রুতি নির্মল হর্ষের।


আমি প্রেয়সী পূর্বিতার স্মিতমুখ,পেলব ঠোঁটের চুম্বন
আমি নীল লজ্জাবতীর ভালোবাসা,তার স্পর্শভীরু কম্পন,
আমি ভোরের পাখি,আমি বিশুদ্ধ সরোবর
আমি যমুনার মাঝি,ঝড়-বাদলের নির্ভীক সহোচর
আমি বাউল কবির ভাটিয়ালী সুর, রাখাল ছেলের বাঁশের বাঁশী
আমি শস্যভরা সবুজ দিগন্ত,কৃষাণ বধুর মধুর হাসি
আমি হিম রাতের উষ্ণতা,গোধূলীর
স্নিগ্ধ সূৃর্য
আমি উদীচির ঝির ঝির বাতাস,আমি শ্যমলিমার সৌন্দর্য,
আমি সুখানন্দে হেটে চলি একি প্রশান্ত,
আমি প্রশান্ত
আমি ভেবে আমাকে বুঝেছি,আমার কেটে গেছে সব ভ্রান্ত,


আমি সজীব,আমি মিতভাষী,আমি কফিহাউজের আড্ডা অন্তরঙ্গ
আমি সংসদ উদ্যানের চত্বর,বৈকালিক অবসরের সঙ্গ
        করি কথোপকথন মাধুরী মিশিয়ে
                 সুনিপুণ সংগোপনে
পার্ক-ক্যাম্পাস আর ভার্সিডির করিডোর স্মৃতি আমার
             ঘাসের গন্ধ ছড়ায় মনে।


আমি প্রকৃতির বুকে শ্বেত শিউলি,ছড়াবো সুরভি অফুরন্ত
আমি আকাশে বাতাস মেঘের আবাস হিম দোদুল্যমান অনন্ত
আমি সাগর সৈকত,আমি অমিত সাহসী নাবিক
আমি ঝড়ের পূর্বাভাস,আমি সংবেদনশীল নাগরিক
আমি উড্ডয়ন রকেটচারী,উড়ে যাই দূর মহাশূণ্যের আহবানে
আমি জ্ঞান-সঞ্চয়ী পৃথিবীর মানুষ,
ছুটি রহস্যের সন্ধানে
             খুঁজি গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে-
খুঁজি "জীবনচিহ্ন"ধুমকেতু আর নীহারিকার সৌর বন্দরে।


              আমি মানব শিশু,আমি সহজও
আমি ইষ্ট,আমি ঠোঁট দিয়ে চুষি বিশ্ব মায়ের বক্ষোজ।
              আমি অপ্সরীর নীলাম্বরী
            অলীক স্বপ্ন সারল্যে ঝিলমিল
         নীল সুখ দিয়ে করি পৃথিবীকে স্বপ্নীল
            প্রাণে আমার গানের সঞ্চারী
           আমি কিশোরের নিক্কন বাঁশরী,
       আমি হেসে উঠি যখন পৃথিবীর বুকে
আনন্দে অষ্টম স্বর্গ জান্নাত বেহেশ্ত নেচে নেচে ওঠে সুখে,
       আমি অদ্রোহ-চারী সারা বিশ্বের মুখে।


             আমি তরুন-কিরণ-প্রভা
কখনো পৃথিবীকে করি ঘুমের রাত,কখনো ভোরের নৈসর্গিক শোভা,
আমি গোপনে চেয়ে নেবো শ্রাবন্তীর বুক থেকে অটবীর পদ্ম-জবা,
    আমি সব্যসাচী,আমি পীযুষ,আমি অঞ্জলি
আমি সুর-স্বর-স্বরলিপির অপরুপ কৌতূহলী
আমি সুনিপুণ শিল্পী,আমি উদীয়মান কবি
আমি ব্যাবিলনের অলিন্দে বসে ভাবি সৃষ্টিকে ভাবি।


                 আমি পল্লব,আমি কল্লোল
     আমি নমনীয় কমনীয় উচ্ছ্বল,আমি হিল্লোল
     আমি জীবন-যৌবন-তারুণ্যের উচ্ছ্বাস
            বিশ্বে আমি প্রীতির কৃতজ্ঞ নির্যাস


           সুপ্ত-আত্মদর্শী আমি জিতেন্দ্রীয় সত্য
আমি সুরে সুরে অন্তরে গাই গজল-কোরাস নিত্য।    
             আমি প্রশান্ত,আমি প্রশান্ত
আমি বুঝেছি আমাকে,ইদানিং আমার কেটে গেছে সব ভ্রান্ত।


         আমি অভিনেতার অভিনব অভিনয়
নিরবধ্য করবো বিশ্ব,ছড়াবো কল্প শিল্প নিচয়।
              আমি অবিনশ্বর মন্ত্রে-
আমি বপন করবো স্বাধীন বিশ্ব পুলকে দৃঢ় সংসদীয় গনতন্ত্রে।
                সাম্য-অদ্রোহী শুচি-শান্ত
                আমি সেই দিন হবো ক্লান্ত-
যখন মানবিকতার সৌজন্যবোধ উদার হৃদয়ে জাগবেনা,
সত্যবাদীর মুক্ত-প্রাণ বিশ্ব প্রভুকে ডাকবে না-
                অদ্রোহ শুচি শান্ত
              আমি সেই দিন হবো ক্লান্ত।


আমি অদ্রোহ-নম্র,বিধাতার মুখে মেখে দেই প্রেম স্পর্শ,
আমি দ্রষ্টা-সুজন,সুখ-প্রীতি-মায়া অনিন্দ্য স্রষ্টার বুক করবো হর্ষ
আমি অদ্রোহ-নম্র,বিধাতার মুখে মেখে দেবো প্রেম স্পর্শ,
      আমি অনিন্দ্য স্রষ্টার বুক করবো হর্ষ।


           আমি চির অদ্রোহ সদয়,
আমি চক্রব্যুহ পেরিয়ে জেগেছি একা
              চির উদ্দীপ্ত হৃদয়।।
****************************
পিংনা,জামালপুর,বাংলাদেশ।
(তারিখঃ-১৩,১৪,১৫-৯-১৯৯১ইং)