প্রিয় অজানি,
এমন করে আগে কখনো তোমাকে মনে পড়েনি
এমন করে আর কখনই তোমাকে কাছে পেতে ইচ্ছে করেনি
মাতাল ফাগুন যেন একটা নেশা ধরিয়ে দিয়েছে মনে।
চারদিকে এত রুপ এত রঙ এত সুর
নিজেকে আর কিছুতে নিজের মধ্যে পাওয়া যাচ্ছেনা।
মনের বীণায় যেন একটানা বেজে চলছে এক অচেনা সুর
রক্ত কনিকাগুলিতে যেন কিসের ঝংকার
অধর যুগল যেন কিসের ছোঁয়া পেতে ব্যকুল
বুকের বাঁপাশটায় যেন কিসের আর্তনাদ
কিযে এক অদ্ভুদ শিহরন জাগানিয়া মুহূর্ত পার করছি
কি করে বুঝাই তোমাকে।


চোখ বুজলেই দেখতে পাই এক তুমি লক্ষকোটি তুমি হয়ে
ছড়িয়ে পড়ছ আকাশে বাতাসে অরন্যে,
হাজারো ইচ্ছার প্লাবন বইছে আমার মনে
ভীষণ ছেলেমানুষি আর পাগলামো সেই ইচ্ছেগুলি
তোমার কাছে খুব তুচ্ছ শুনাবে, তবুও খুব বলতে ইচ্ছে হচ্ছে।


তুমি পরেছ তোমার প্রিয় হালকা সবুজ রঙ্এর শাড়ি
খোঁপায় জড়ানো বেলি ফুলের মালা
ঠুটে আলতো লিপিস্টিকের ছুঁয়া
চোখে কাজল আকা
বেশ হালকা ধরনের একজোড়া দুল দুলিয়েছ কানে।
ব্যস এটুকুই,
আর এই সামান্যতেই তুমাকে কিযে অপূর্ব লাগছে
কি করে বুঝাই তুমায়!


পড়ন্ত বিকেল, মেঠো পথ, পাশা-পাশি হাঁটছি, তুমি আর আমি।
বনফুলের ‘পড়ে কৌতুকে মেতেছে প্রজাপতির দল,
একটু দূরে হিজল গাছে একটানা ডেকে যাচ্ছে বউ কতা কও
ঝিরঝির বাতাস, বাতাসে উড়ছে তোমার আঁচল
মাঝে মাঝে যখন তা উড়ে এসে ঢেকে দিচ্ছে আমার চোখ আমার মুখ
কি এক অজানা সুখ যেন ছড়িয়ে পড়ছে আমার সারা দেহে।


আমাদের সেই ছোট্ট লাইব্রেরী ঘরটিতে আমাদের কাটে বেশ খানিকটা সময়
খুব সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা তোমার আর আমার প্রিয় বই আর জার্নাল
মেঝেতে বসি দুজনে;
তোমার পিঠ আমার পিঠে আমার পিঠ তোমার
তোমার হাতে থাকে থমাস হার্ডি আমার হাতে হয়তো শরৎ বাবু
অথবা তুমি যখন পড়ছ রবি ঠাকুর আমি তখন রবার্ট ফ্রস্ট
মাঝে মাঝে দেখি তুমি বই পড়ছ আর কাদছ
মুক্ত দানার মত অশ্রু ফোটা টপ টপ করে পড়ছে বইএর শুকনো পাতায়
সে এক অপূর্ব পবিত্র দৃশ্য!
আমি দারুণ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকি আর মনে বলি -
কি বুদ্ধিমতী অথচ কি সরল; কি ব্যক্তিত্বশালিনী অথচ কি কোমল!
হে খোদা, আমি তোমার কাছে আর কিচ্ছু চাইনা
মাঝে মাঝে শুধু এই অপূর্ব দৃশ্য দেখার সুযোগটা দিও।


তোমার সাথে আমার ঝগড়াও বাধে মাঝে মধ্যেই
ঝগড়াতে আমি বড়ই আনাড়ি তাই জিত হয় তুমারই।
তুমি হয়তো জাননা রেগে গেলে তোমার ঠোট কাপে
ভ্রু যুগল যায় বেকে গাল হয়ে ওঠে রক্তিম
তুমি হয়ে ওঠ আরো সুন্দর, আমার ঝগড়ার তাল যায় ছুটে।
এই একটি জায়গায় হেরে যাওয়াতেও আমার আনন্দ হয়।


আমাদের বাংলো টাইপের ছোট্ট বাড়িটার একপাশে একচিলতে বাগান
তার পাশে একটু ফাঁকা জায়গা, সেখানে একটি দুলনা পাতা।
আমাদের প্রায় প্রতি সন্ধ্যা কাটে চায়ের পেয়ালা হাতে সেখানে বসে বসে
কখন দুল খেতে খেতে হারিয়ে যাই দুজনা দুজনের সুরের ভুবনে
‘এই রাত তোমার আমার ঐ চাঁদ তুমার আমার শুধু দুজুনের
এই রাত শুধু যে গানের এই ক্ষণ এ দুটি প্রানের কুহু কুজনের’’