সপ্ত সাগরের উচ্ছ্বাসে সূর্য পাতাল জয়ে
যে দামাল ছেলেরা নেয়নি কোন দম,
সোনায় মোড়ানো বাংলায়; প্রতিটি বাঙালি সত্তায়
মিশে অাছে তাদেরই অবদান।


৪৭-এ দ্বিজাতিতত্ত্বে: সাড়ে ৪ কোটি বাঙালির নতুন সীমানা,
৪৮-এ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের সম্মিলিত গণদাবি- রাষ্ট্রভাষা হবে বাংলা।
নেয়নি মেনে নাজিমুদ্দিন, বিরোধিতায় লিয়াকত আলী খান,
ধর্মঘট, মিছিল মিটিং এ উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল প্রাঙ্গণ।
তমদ্দুন মজলিশ ধরল হাল রক্ষিতে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ,
আইয়ুব নেতৃত্বে চলল সভা সমাবেশে ধর-পাকড়, লাঠিচার্জ;
গ্রেফতার শত শত ছাত্র, ব্যস্ত জনপদ।
ছাত্র আন্দোলনের তোড়ে সমঝোতার ৮ চুক্তিতে নাজিমুদ্দিন দিল সায়,
শান্ত করতে উত্তাল সাগর এ মিথ্যা সান্ত্বনা;
কেননা জিন্নাহ্ আসছে ঢাকায়।


"উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা"-
রেসকোর্স, কার্জন হল আর রেডিওতে জিন্নাহ্-র ঘোষণা,
বিক্ষোভে ফেটে পড়ল ছাত্র জনগণ;
ঘোষণা শেষে বাতিলও করল চুক্তির সমঝোতা।
বছর শেষে লিয়াকত আলীর আগমনে,
মিললো না কোন সাড়া পুনঃ দাবি উত্থাপনে।
৫০ এর ডিসেম্বরে সরকারের নতুন প্রস্তাবনা-
"আরবি হরফে লেখা হবে বাংলা", হায়রে উন্মাদনা!
৫২-র ২৭ জানুয়ারী: পল্টনে নাজিমুদ্দিনেরর কন্ঠে আবারও সেই গান;
যেই গান গেয়েছিল জিন্নাহ্,
বার বার উপেক্ষিত জনতার রোষানলে এবার পড়ল বারুদ;
বিক্ষোভ বিপ্লবে দাবানল হল ঘৃণা।
৪ তারিখে প্রতিবাদ সভায় এলো ঘোষণা-
২১ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে হরতাল, মিছিলের পরিকল্পনা।
দমিতে ছাত্র জনতা প্রশাসনের ১৪৪ ধারা জারি,
হায়রে মূর্খ! তাতেই কি সূর্য-সন্তানরা ফিরবে নিজ বাড়ি?


সকল ধারা ভঙ্গ করে ইতিহাস রচনার দিন-
২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ (৮ ফাল্গুন, ১৩৫৮)।
সকাল ৯ টা, গণ জমায়েতের শুরু;
নামলো জনতার ঢল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে,
বেলা ১১ টা, ধারা ভঙ্গের প্রস্তুতিতে পুলিশ ব্যারিকেড,
কাঁদানে গ্যাস জনতার ভাঙ্গনে।
সমস্বরে প্রাণের দাবি, "রাষ্ট্রভাষা বংলা চাই",
আটকাতে পারবে না কোন শক্তি; নেই অত্যাচারীর ঠাঁই।
প্রতিবাদ ছত্রভঙ্গ করতে অবরুদ্ধ আর গ্রেফতার শত শত,
বিক্ষোভ আরও বেড়ে চলল বেলা বাড়ল যত।
বিকাল ৩টা, দাবি উত্থাপনে আইনসভা অভিমুখে অভিগমন  কালে,
ঝাঁঝরা করল পুলিশের বুলেট;
ঢলে পড়ল- রফিক, জব্বার বাংলা মায়ের কোলে।
সালাম, বরকতসহ আরও কত সংগ্রামী বীর দিল তাজা প্রাণ,
শোণিত ধারায় রঞ্জিত রাজপথ; রাখতে বাংলা মায়ের মান।
২২ তারিখ: গায়েবি জানাযা, বিক্ষোভ মিছিলে সারাদেশ কম্পিত,
শহীদ খাতায় যোগ হল- শফিউর, ওয়াহিউল্লাহ, আউয়াল;
আরও নাম না জানা কত।


১০ বাই ৬ ফুট "শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ" বীরের স্মৃতিতে কথা কয়,
২৪ ফেব্রুয়ারিতে উন্মোচিত মিনার দিল গুড়িয়ে;
ভাইহারা প্রলয়ে আহাজারি, শোকের অশ্রু বয়।
কেন্দ্রীয় সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের সিদ্ধান্তে-
২১ ফেব্রুয়ারি পেল "শহীদ দিবস" হিসেবে স্বীকৃতি,
ঠিক এক বছর বাদে কালো ব্যাজে প্রভাতফেরী;
শ্রদ্ধাঞ্জলিতে, আঁখি জলে সিক্ত শহীদ বেদী।
সারা দেশব্যাপী লাখ লাখ জনতার ঢল করিয়ে দিল স্মরণ,
হাল ছাড়েনি বাঙালি এখনও; তারা শহীদের শপথে অবিচল।
যুক্তফ্রন্ট জয়লাভে ৫৪-র ৯ মে-
বাংলা পেল অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি,
৫৬-র ২৯ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে;
সংবিধানে পেল ঠাঁই অমর শহীদের কৃতি।
৬৩-র ভাষা দিবসে-
শহীদ জননী বরকতের মা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার উদ্বোধনে,
৯৯-এ ইউনেস্কোর স্বীকৃতিতে বিশ্ব জানলো;
বাঙালি দিয়েছে বুকের তাজা রক্ত, প্রাণের ভাষা রক্ষণে।
২১ অক্টোবর, ২০১০ প্রস্তাব পাশ: জাতিসংঘ করবে এ দিবস পালন,
বীর সন্তানরা চেয়ে দেখো;
তোমাদের রক্তে রঞ্জিত বাংলাকে আজ বিশ্ব করছে লালন।


"আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো"- একুশের গানে
বাঙালির পরিচয়; নিরবধি ভাসে অশ্রুসিক্ত কোটি আঁখি,
এসো রক্তধারায় অর্জিত বাংলাকে রক্ষার শপথ লই সবে
শুধু আনুষ্ঠানিকতা আর উদযাপনে যেন বন্দী না থাকি।


রচনা ২৮ জানুয়ারী, ২০১৭