বসন্ত এসে দাঁড়িয়ে ছিল, অপেক্ষায় ছিল তারা দিনের পর দিন,
আমার কোজাগরী আঙ্গিনায় ফুটেছিল এক থালা চাঁদ
আমাকে নিয়ে জোসনায় ভাসবে বলে।
স্বপ্নের বিলিকাটা রাতে খেতিপাথার ঘেঁষা ভালোবাসারা কত
আদুরে কথায় ছিল মত্ত, শুধু আমার অপেক্ষা।


অথচ খিড়কির ওপারেই ধর্ষীত নারীর আর্তনাদ,
খেতিপাথারের ওপারেই হত্যাকারীদের খবিশ উল্লাস আর  
সীমান্তে কাঁটা তারে মানবতার স্বাধীনতাকে কাতরাতে দেখে
দু’চোখ এসেছিল বুকফাটা কান্না।
এখন আর কাঁদতে চাই না। কি হবে কন্না করে?


মুদির দোকানে কি আর বসন্ত কিনতে পাওয়া যায়?
কাঁচা বাজার, মাছের বাজার সেখানে বসন্ত কোথায়?
এখন গ্রীষ্মের উত্তাপ। ফলের বাগান শূণ্য, শস্যের বাগান শূণ্য!
শরত এসে রাত জাগিয়ে রাখে আরাধনায় রত গেরস্থকে।
সম্পদের ভান্ডারে সঁধেল চোর আজ ডাকাতের থেকেও ভয়ংকর।
ছুরি নয় রীতিমত অস্ত্র উঁচিয়ে ধরে। তখন কাঁদি না, একটুও কাঁদি না,
আর কাঁদতেও চাই না। কি হবে কেঁদে যেখানে ভাগ্যবিধাতাই
আজ আহত হয়ে মাটিতে পড়ে গোঁঙায়।  


আমি চাষা, আমি কৃষক। আমি ওতো কিছু বুঝি না।
কিসের দোহাই দিয়ে কারা মূল্য বৃদ্ধি করল পন্যের,
কেন করল জানি না। বর্ষায় বৃষ্টি হবে, বন্যায় ফসল তলাবে,
এ তো স্বাভাবিক! আমার তো বড্ড খারাপ লাগে সকল
আহারি মানুষের কষ্টের কথা ভেবে। মূল্য বৃদ্ধিতে আমি
এতটুকু খুশি নই। আমি রাতারাতি ধনবান হতে চাই না।
আমি চাই আমার উৎপাদন খরচের সাথে ন্যায্য মূল্যটুকু।
তার পর আবার চাষ, আবার উৎপাদন, আবার ভালোবাসা।


আর কাঁদতে চাই না, কাঁদাতেও চাই না।
উন্নয়নের জন্য ভেকু মেশিন গিলছে আমার খেতিপাথার।
কোজাগরি জোসনারা হচ্ছে অট্টালিকার পাষাণ দেহে আড়াল,
মন্ত্রী- এম পি’র ছেলে মেয়েরা চলাফেরা করে সাথে নিয়ে
হাফ ডজন বডিগার্ড। ওরা বসন্ত বুঝে না,
ওরা কোজাগরি পুর্ণিমা বুঝে না। ওরা ভেকু মেশিন চেনে,
ওরা বুল ডোজার চেনে, ওরা অস্ত্র চেনে, খুনের রক্ত যে লাল-
জবা ফুলের মত, গন্ধ নেই, ধর্ষণের  মূল্য যে কয়েক লক্ষ টাকা মাত্র,
না হয় অজ্ঞাত স্থানে বেওয়ারিশ লাশ সে সব বুঝে।
তাই কাঁদতে ইচ্ছে হয় না!


শুধু কাঁদতে ইচ্ছে হয় যখন কবিতা এসে কাঁদে।
একটা বসন্ত এসে অপেক্ষায় থাকে।
এক থালা চাঁদ এসে টানাটানি করে খেতিপাথারে আলু, পেঁয়াজ,
রসুন, আদা, লাউ আর লাল শাকের আয়ত আঙ্গিনায়,
তাদের মধ্যে ডুবে যেতে যেতে আঁধার রাতের কথা বলতে।
কেননা দিনের আলো আর জোসনার আলোয় তবুও তো
খুনের রঙ হয় পানশে, খুনিরা থাকে নেকাবে, লালসার নষ্ট ধর্ষকেরা
থাকে নেকাব। কবিতার জন্ম হয়, প্রেমের জন্ম হয়,
মায়ারা এসে চোখের জলে ভাসতে থাকে কোজাগরী থালা মাথায়।


১৫ নভেম্বর, ২০২০।