আচ্ছা এখনো কি চিঠি লিখা হয়, এখনও কি
চিঠির জন্য অস্থির প্রহর কাটে কোন, নিঃসঙ্গ
মা, বাব, স্ত্রী, কিংবা কোন প্রেমিক প্রেমিকার?
কে জানে! অন্ততঃ ডাক বিভাগের যে বেহাল
অবস্থা এই ম্যাসেঞ্জার, হোয়াট্‌স্‌ এপ্স্‌, ভাইবার,
এস এম এসের যুগে। শুনেছি এই অধুনা বিশ্বেও
পোষ্ট বিভাগ নাকি এখন ফুলের বাগান আর
পরিবেশ পরিচ্ছন্নতায় সময় পার করে তবুও  
কেউ ফুল দিয়ে হলেও প্রিয় জনের কাছে
শুভেচ্ছা বিনিময় করে।


চিঠি তো অক্ষর মাত্র, আসলে শব্দে সাজানো
কিছু অক্ষর। তারপরও মুখের ভাষা যখন
আটকে যায়, হারিয়ে ফেলে তার গতি, তখন
কখনও ইচ্ছে হয় এই অক্ষর তথা চিঠির সাহায্য
নিতে। ঠোঁট বা জিহ্বা যেখানে অচল, ইলেক্ট্রোনিক
এর আলো ঝলমল পাতা যেখানে স্থবির, সেখানে
কখনও কখনও আংগুল থেকে উপছে পড়তে চায়
বিভিন্ন স্বাদের অক্ষর চিঠি হোয়ে। যদি তার আপন
প্রিয়জন মানুষটার মান ভাংগানো যায় অথবা কাছে
টানা যায়।


আজ ইচ্ছে করছে মান ভাঙ্গানো যদি একটা চিঠি
তোকে লিখতেই হয় তাহলে লিখতামঃ যদি এ জন্মের  
আগে কোন জন্ম থেকে থাকে, তাহলে নিশ্চই সে
জন্মে তুই আমার ছোটকালের খেলার সাথী ছিলিস,
হয়ত শীতের সুর্যের দিকে তোর উষ্ম হাত ধরে মুক্ত
পাথারে ছুটতে ছুটতে রক্ত মুখ হতাম, পায়ের নীচে
দলিত হোত সবুজ ঘাস, শিক্ত শিশির। সারা দিনমান
ক্লান্ত হোয়ে সিঁদুরে সন্ধ্যায় বাড়ি মুখো হতাম তোর
হাত ধরে। চোটকাল যেন এ ভাবেই কেটেছে আমার
তোর সাথে ছুটো ছুটি করে।


তোর আঙ্গুল আমার বড্ড চেনা, মাটির উপর,
ঘাসের উপর, শিশির কনার উপর তোর পদ চিনহও
আমার বড্ড চেনা। সম্মুখে ছুটার সময় সামনে
বাড়িয়ে দেয়া বুকটা আমার বড্ড চেনা। তোর রক্তিম
মুখ, ঘামে ভিজে উঠা কপাল, চিবুক, মাথা ভর্তি চুল
এ সব আমার ভীষণ ভীষণ চেনা। হয়ত আজ সে
সব দিন গুলোর কথা তোর মনে নেই, হয়ত তুই
আজ অন্য সুখে অন্য প্রকৃতিতে নিজেকে জড়িয়ে ভুলে
গেছিস আমাদের ছোট কালের সকল স্মৃতি।


তারপর কোন একদিন কবে কখন যেন ছেড়ে দিলি
আমার হাত, ঠিক তারপর থেকে আমি আজও একলা
দৌড়ে এ পথ টুকু পাড়ি দিচ্ছি আমার সকল
নিঃসংগতাকে কাঁধে করে। আবার এ ঠিক
নিঃসঙ্গতাও ঠিক নয়, তুই তো আমার সাথে
প্রতিটা মুহুর্তেই ছিলিস।সে ছোট কল থেকে যখন
আমার হাত ছেড়ে দিয়ে ছলে গেলি। আজ এমন
করে অনে কথা তোকে ছিঠিতে লিখতে ইচ্ছে হোচ্ছিল।
কেননা সব কিছু কি আর আলোর পাতায় লিখা
যায়, নাকি লিখলেও তা সম্পুর্ণ হয়? যতটা এই
ছিঠিতে তোকে লিখতে পারলাম। অথচ দেখ এ চিঠি
আমার কাছেই হয়ত থেকে যাবে অপঠিত কেবল
ডাকঘর এর কোন ঠিকানা আজ আর জানা নেই
বলে, কেউ জানে না বলে, কেউ আর ভুল করে
জানতেও চায় না বলে। (সংগৃহীত)