এখন মেয়েটির মেজাজ বড্ড খিটমিটে থাকে।
ইদানীং বিকেলকে জড়াজড়ি করে চাদর মুড়ি দিয়ে
ঘুমাতে চায়। ওকে আর কোনও ক্রমে বুঝানো যায় না  
হরতালের অর্থ কি, রাজাকারের অর্থ কি, কেন বিচারিক
ফাঁসি হবে ওদের ? কেন ওর শিশু বন্ধুটি ফাঁসি চাই
ফাঁসি চাই বলতে বলতে সে খেলায় নিজেই প্রথম
ফাঁসিতে ঝুলে মরল ?


অথচ কিছু দিন আগেও এ সময়টায় সে বাহিরে
যাওয়ার জন্য স্বভাব সুলভ ঘ্যান ঘ্যান করত।
পার্কে অশোক বনের ফাঁকে রঙিন প্রজাপতির সাথে
উড়তে চাইত, ফড়িঙয়ের ঝিরি ঝিরি পাখায়
ভেসে শান্ত লেকের জল ছুঁয়ে দেখতে চাইত। ফেরারি
বাতাসের দোলায় ভয় পেত সন্ধ্যার সমাগমে,
ইস ইস করত সুরয্য  নিভে যাবে বলে, ফিরে
যেতে হবে চার দেয়ালের একঘেয়েমি ভাবনায়।


যে মুখে কথার খই ফুটত পটপট, সে মুখে এখন
কুলফি আঁটা, যে চোখে স্বপ্নের জ্বলজ্বলে আলো ছড়াত,
সে চোখে এখন জলের ধারা। যে পায়ে রুমঝুম
নূপুরের ছন্দ খেলা করত, সে পায়ে এখন
পক্ষাঘাতের অসাড়তা। খিল খিল হাসির ঠোঁটে  
এখন খুনসুটি। সারাটা বিকেল গড়িয়ে রাত্রি,
রাত্রি মাড়িয়ে ভোর, ভোর হারিয়ে আর একটি দিন,
তবুও মেজাজ থাকে খিটমিটে এবং খেমটা।


মেয়েটি এখন রান্নার আওয়াজ শুনে কিচেনে
ঘুর ঘুর করে না, টিভির বিজ্ঞাপন দেখে জিঙ্গেলে
গুন গুন করে না, খেলার বাক্সে নির্মাণের ভাবনায়
খুট খাট করে না, খোলা মেলা ভাবনার নতুন শব্দে
বিড় বিড় করে না। কেবলই ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে
থাকে কতগুলি প্রাসঙ্গিক প্রশ্নের মুখোমুখি বসে।


যতই বলি, হরতাল মানে দাবি আদায়ের গণতান্ত্রিক
অধিকার, ভাঙ্গন কিংবা ধ্বংসের আগুন নয়। ও ততই
বলে তাহলে তোমার গাড়ি ভাঙ্গে, ওদের ভাঙ্গে না কেন?
আগুন জ্বলে না কেন ওদের আসনে? যতই বলি রাজাকার
মানে ঘৃণ্য গোলাম আযম, স্বেচ্ছাসেবক শুধু নয়। ও ততই
বলে তাহলে ফাঁসি হয় না কেন তার, ফাঁসি মানে- মৃত্যু;
বলার আগেই বলে- কেন মৃত্যু হল না খুনির?
অথচ এর আগেই মরে গেল একজন নিষ্পাপ শিশু,
তার এ অকাল মৃত্যুর জবাব দিবে কি তোমার দেশ ?


আমার মন টনটন করে উঠে, টলমল চোখে চেয়ে থাকি
ওর মুখের দিকে, বুকের ভেতর থেকে হনহন করে বেরিয়ে
যেতে চায় প্রান বায়ু। শোকে, লজ্জায়, ঘৃণায় প্রজন্মের সম্মুখে
মাথা হেঁট হয়ে আসে, তখন হৈহৈ করে ওকে বুঝানোর চেয়ে
ওর তরতর প্রশ্নের মধ্যে ডুবে যেতে যেতে ভাবি, আমি কি
নিজেই এখনও বুঝি মুক্তি যুদ্ধের চেতনা মানে কি?