সম্মুখ বাড়ির বৈঠকখানা আজও মুক্তি যুদ্ধের স্থানীয়
আঁতুড় ঘর হয়ে স্বাক্ষী বহন করে দাঁড়িয়ে আছে শুন্যতায়,
সেই কোলাহল আর নেই। পেছন বাড়ির আঙ্গিনায় আঁটি
কলা গাছের ঝাড়, কামরাঙ্গার গাছ, বরইয়ের গাছ, কদম,
আম, জাম কাঁঠাল, জামরুল, আমড়া গাছ। এদিকে সজনে
গাছের ফুলের মতই ফুল ফুটে বাতাবি লেবু, জলপাই আর
নিম গাছে। বাঁশ-কঞ্চির মাচানে শীমের যৌবনা ফুলের সাথে
খেলা করে পাগলা ভ্রমর, শশার বাহারী হলুদ ফুলে দোল খায়
রঙ্গিলা প্রজাপতি। রাতে ফলের গাছে সুতো কাটা ঘুড়ির
মত দোল খেয়ে ঝুলে থাকে বুনো বাদুড়ের ঝাঁক, বাঁশ ঝাড়ে
আঁধার জোনাকির চেয়ে জ্যোৎস্না জোনাকির আলো রুপালী
ঢেউ তুলে শেষ রাতের ভাঙ্গা চাঁদের পান্ডুর বিছানায়। মায়াময়  
স্বপ্নকেও যেন হার মানায় বেহাগী রাগ রাগিনীর দৃষ্টি।

এখন ঢেকির পাড়ে মরা কুমিরের মত দুই পা মেলে সটান
পড়ে থাকে লম্বা নাক আলা ঢেকি। ঢেকি পাড়ে অস্পষ্ট পল্লী
সুরে আজও মুর্চ্ছা যায় “ ও ধান ভানিরে ঢেকিতে পাড় দিয়া,
ঢেকি নাচে আমি নাচি হেলিয়া দুলিয়া, ও ধান ভানিরে...”।
মনে পড়ে হারিয়ে যাওয়া গেন্দি খালার কন্ঠ। গোয়াল ঘরে
সুন্দরী গাভীর দুধের বাট নিঃসৃত গরম কাঁচা দুধের মগ
নিয়ে দাঁড়ায় না গোয়ালা “বড় বাপ”। বড্ড মনে পড়ে দুধ পান
করাতে তার মন ভোলানো আদর।   যাঁতা কলে ডাল ভাঙ্গার
ঘড় ঘড় শব্দে জমে থাকে না যাঁতার হাতল। গোলা ঘরের
পাড় ঘেঁষে নতুন মাটির উদ্‌গীরনে গর্ত করে না ধাড়ি ইঁদুর।
দুধ দাঁত পড়ে গেলে ধারালো স্বচ্ছ দাঁত পেতে ইঁদুরের গর্তে
দাঁতের বিসর্জনে নতুন দাঁত পেতে ইঁদুরের কাছে এখন হাত
পেতে বায়না ধরে না কেউ। হাতল আলা কলের পাড় হয়েছে
এখন টিপ কলের জল ঘর।
(চলবে)