বাড়ির দৃষ্টি সীমায় ওপার বাংলার নো ম্যান্স ল্যান্ড। কাঁটাতার
ঘেরা ভারত সীমান্ত। কাঁটাতারে দেহ আটকালেও মনতো
আটকায় না, সংস্কৃতি আটকায় না, আত্মীয়তা আটকায় না।
জানতে ইচ্ছে করে ছোটকালে দেখা ওপারের তারা কাকা,
গয়া কাকা, ধীরেন কাকা আর কাকি মা’রা কেমন আছে?
কেমন আছে এলি’দি, সন্দ্যা’দি, পদ্মা’দি? দেখি আমার
আকাশ আর ওপারের আকাশ একই, আমার প্রকৃতি আর
ওপারের প্রকৃতি একই, আমার বাতাস ওপারের বাতাস
একই। এই বাতাসেই কত ঘুড়ি উড়িয়েছি সীমান্ত ছাড়া।
সীমান্ত প্রহরী আটকাতে পারেনি মনের আকুতির মেলবন্ধন।
ঘুড়ির সুতোয় তাই রাখি বন্ধন হয়েছে ওপারের ছোটকালের
বন্ধু যতীন, নিশিথ, জয়ন্ত, শিবু,গনেশের সাথে। জানতে
বড্ড ইচ্ছে করে কেমন আছে সে সব বাল্য বন্ধুরা। জানতে
ইচ্ছে করে ওরাও আমার মত কবিতার প্রেমে রাত জাগে কিনা,
না কি তারা আজ মননহীন প্রযুক্তি অবরুদ্ধ!
            

এখন বাবার মত বাড়িও কেমন হারিয়ে যাচ্ছে, বাবা নেই
যেন তাই বাড়িও নেই, বাবা নেই যেন তাই নাড়িও নেই।
বাপের ভিটেয় পোতা নাড়ি যেন শিশু গাছ হয়ে বেড়ে উঠতে
উঠতে বড় হয়ে বুড়ো হতে বসেছে। পুরো কাঁচের চশমার
ফাঁক গলে কান্নার ঘন জল গলে মায়ের জোড়া চোখ আজও
পথ চেয়ে থাকে তার বুড়ো খোকার জন্য। ভিটে মাটি বিগত
স্মৃতির স্বাক্ষী হয়ে আজও এত গভীর ভাবে ভেতরে টানে যেন
তারা মায়ের সতীন। কাউকেই উপেক্ষা করতে পারি না, আসলে
উপেক্ষা করা যায় না। তাইত ঈদ-পার্বন নয়, নবান্ন নয়, ছুঁতো  
পেলেই শহুরে হাজার টানের বলয়  উপেক্ষা করে বার বার ছুটে
যেতে ইচ্ছে করে, বরং ছুটে যাই কলিজা ছেঁড়া ভালোবাসা আর
মায়ের আদর ভরা গ্রামের বাড়ি।