কে জানে, হয়ত দূরের কুমারী প্রকৃতিই ডাকছিল
আমাকে এই নাগরিক বেহুদা রোদ, বৃষ্টি, বাতাস,
যান্ত্রিক শব্দ আর শব মিছিলের অসহ্য কান্না থেকে
কিছুটা সময় মুক্তি পেতে। মনে হয় সে আমাকে
অনেকদিন ধরেই ডাকছিল আত্মিয় ইশারায়। সে
কোন সময়-অসময়ের ধার না ধেরে কেবল আমাকে
ডাকছিল আর ডাকছিল তার তলানী ইশারায় যৌবনা
পাহাড়ের গায়ে হেলান দিতে, ডাকছিল তার রমন
জলের শীতলতায় প্রেমের উষ্ণতা খুঁজে নিতে।


যে মাটির বুকে গৌর গবিন্দ, সূফি শাহজালাল (রহঃ),
হাসন রাজা, রাধা রমন, শাহ্‌  আব্দুল করিম ঘুমিয়ে সে
মাটি আমায় কাছে ডাকতে পর্যটন সময় নিয়ে একটুও    
ভাবেনি। এ নিয়ে কোন উতকন্ঠায় ভাবতেও চায়নি
তখন পুণ্যবতী অঞ্চলে কাঁপানি শীতের পথিক কুয়াশায়
শুভ্রতার মাখামাখি, নাকি বরষায় পিয়ান, সুরমা, কুশিয়ারা,
সারি নদীতে ঝর্ণা জলের গড়াগড়ি, নাকি গ্রীষ্মের দাবদাহে
পাহাড়ি শুকনো পাতায় পোড়া গন্ধের মাখামাখি, নাকি
যুবতী বসন্তের সদ্য ঋতুস্রাব উত্তেজনায় অস্থির।  এত সব
কিছু না ভেবেই নির্মল প্রকৃতি আমায় ডাকছিল তার সূর্য চন্দ্র
ঝুলানো তের পাবনের সৌহার্দ্য আঙ্গিনায়।


পাহাড় পাথর আর কুমারী প্রকৃতির পান্থ কোল আমায়
রোম্য ভালবাসায় জড়াতে চেয়েছিলো, তবুও আমি ফিরে
এসেছি। পাহাড়ি ঝর্ণা পুষ্ট নদীর আয়না জলে আমার
নাগরিক শরীর দরদী স্নিগ্ধতায় জড়িয়ে ধরে আমায় বার বার
ডুবিয়েছিল তবুও আমি ফিরে এসেছি। সবুজ গালিচার পরিপাটি
চা বাগানের মাহালী লছমীরা দু’টি পাতা একটি কুঁড়িদের মত
আমাকেও তুলতে চেয়েছিল তার রোজগেরে ঝুড়ির ভেতর
কোমল কোমল হাতে, সে হাতের ছোঁয়া উপেক্ষা করে
তবুও আমি ফিরে এসেছি।


দরগাহের টান, পাহাড়ের হাতছানি, সবুজ রমনীর স্পর্শ,
শীতল জলের শিহরণ, ক্যান ব্রীজ আর আমযাদ ঘড়ির
ঐতিহ্য ছোঁয়া আবেগ সব কিছু ছেড়ে আমি ফিরে এসেছি,
অথবা বলতে পারি আমার ভেতরে অনুক্ষন গুমরে গুমরে
থাকা শ্লোক রসনার কষ্ট দেখে পবিত্র ভূমিই আমায় ফিরিয়ে
দিয়েছে ঘড়ির সময়ের হাত থেকে জীবনের কিছুটা সময়  
কাব্যের রসায়ন মাঠে কবিতার শব্দ শস্য নিয়ে বীজ তলা
গড়তে, আবাদ করতে এবং সে ফসলে গোলা ভরতে যাতে
কবিতা প্রেমীর ক্ষুধা আধপেটা হলেও মেটে প্রতিদিন।
................................................................................................
বি দ্র : কবি বন্ধু শ্রীস্বপন চক্রবর্ত্তী'র দাবীটা আমাকে খুব নাড়া দিয়েছে আজ। আসলে ওর মত করে আমিও ভাবছিলাম। সিলেট বেড়িয়ে এলাম কিন্তু সিলেটের কবিতা লেখা হল না। চেষ্টা ও ভাবনা যে এগুচ্ছিল না, তা নয়। আসলে সময় করে মন ভরছিল না। আজকে বন্ধুর আকুতিতে এবং সকল কবি বন্ধুদের জন্য সে রকম ভাবনার একটা কবিতা দিলাম গত ফিরে আসার সাথে মিল রেখে ফিরে এলাম-২। যদিও এ কবিতা শেষ করতে না করতে ইতি মধ্যে কয়েকটা নতুন কবিতা পাতায় দিয়েছি। আসলে কবি এবং কবিতার ধর্মই বোধ করি এমন। পরিকল্পনায় কবিতা হয় না বরং প্রেরণা এবং প্রণোদনাই কবিতার লেখ চিত্র ধারণ করে। যা হোক কবিতা একটু বড় হলেও পড়ে  কেমন লাগল জানাবে...