শহুরে ফ্ল্যাট বাড়ি, একেবারে বর্গ ফুটে মাপা।
গ্রামের বাড়ির মত তো আর নয় যে ঢাউস আঙ্গিনা,
বারান্দা, জানালাময় ঘর, ঘরের মধ্যে ঢাউস সাইজের
আলমারি খাট চেয়ার টেবিল কেমন আয়েসে পড়ে
থাকে নির্ভার ঐতিহ্যের চিহ্ন বহন করে।


ফ্ল্যাট বাড়ির ফলস্‌ সিলিংয়েও তাই শহুরে জীবনের
প্রান আটকে থাকে। মেপে মেপে হাত, পা, শরীর,
শখ বর্গ ফুটের পরিমাপ খুঁজে।  ন্যাপথালিনের পোষাক
নিভৃতে বন্ধ  হয় ট্রাংকের ভেতর।, ভুলেও যাই স্যুট টাই
প্যান্ট পরা বিগত জীবনের গল্প।


নিজের কূলে, বন্ধু কূলে, লায়েক ছেলে মেয়েও নেই
যে কোন বিয়ের দাওয়াত পাব। ফ্ল্যাটে হাত পা ছুঁড়ার
জায়গাও নেই বলে গিন্নীও আগ্রহ দেখায় না ট্রাংকের
পোষাক হোক অগুছালো। আবার আইরণ, আবার
ন্যাপথালিন, আবার ফলস্‌ সিলিং এ সব নিয়ে হোক
বাড়াবাড়ি সাংসারিক কলহ।


গ্রামীণ ঢাউস আঙ্গিনায় ঢাউস চাঁদের মাখমাখি,
খোলা আকাশ, খোলা বাতাস, খোলা মাঠ আর প্রকৃতি।
কেবল জীবন নয়, পোষাক পরিচ্ছদ, আসবাবপত্রই
কেমন হাত পা ছুঁড়ে আয়েস করে। আবার কবে হবে
ফেরা, ভাবি আবার কবে হবে দেখা সেই মুক্ত আঙ্গিনা?
যেমন দেখা হয় না ফলস্‌ সিলিং, দেখা হয় না ট্রাংক
খুলে ন্যাপথালিনের পোষাক পরিচ্ছদ।


সামনেই বিবাহ বার্ষিকী, বউকে পটাতে তাই ধরনা দিই,
এমন সহজ টোটকা বিদ্যুতের মত কাজেও লাগে।  
অতিথি বলতে শ্যালক, শ্যালিকা, কিছু নিকট বন্ধু
এবং বন্ধু পত্নি। অনেক শখ করে গায়ে চাপাই বিগত
স্যুট টাই প্যান্ট। দেখি ফ্ল্যাট বাড়ির বর্গ ফুটের সাথে
তাল মিলিয়ে তার সাইজও হয়ে গেছে ছোট, নাকি  
আমিই বেড়েছি সাইজে- কি জানি!


তবুও নিজেকে ভিন্ন সাজে দেখতে আয়নার সামনে
এসে দাঁড়াই। বুকের গভীরে অচেনা ব্যাথা চিনচিন
করে উঠে। নিজেকে নিজেরই চিনতে কষ্ট হয়। ভাবি
সেই আমি বদলালেও বাড়ির বর্গ ফুটের মাপ বদলায়নি,
পোষাকের মাপ বদলালেও ট্রাংকের মাপ বদলায়নি।
ন্যাপথালিনের গন্ধ কি বদলিয়েছে!  তা না ভেবেই
ন্যাপথালিনের প্যাকেট গন্ধে এখনও খুঁজি শহুরে জীবন।