আমার প্রতিদিনের জানালার ওপারের প্রকৃতিটুকু আর
কতই বা বড়! একটা মহা সড়ক উত্তর থেকে দক্ষিনে
চলে গেছে। ওটার সাথে একই ভাবে উঁচু উঁচু ইলেকট্রিক
তারের খুঁটি। প্রতিদিন দেখি ঐ তারে কিছু ফিঙ্গে পাখি
ফড়িং শিকারের আশায় লুটোপুটি খায়। নীচেই রবি শস্যের
বিস্তৃত ক্ষেত। তার পর ক্লান্ত নদীর পাড়, কোন এক কালে
গানে গানে গুন টনা নৌকা চলাচল করত, এখন আর নেই।
ঐ নদীর ওপারে দূরে ছবির মত গ্রাম ধরা পড়ে। ঠাঁয় দাঁড়িয়ে
লম্বা দু’একটা তাল গাছ, দীগন্তের গায়ে হেলান দেয়া প্রকৃতি,
ঝুলে থাকা সুর্য ইত্যাদি ইত্যাদি।


কিন্তু আমার মনের মধ্যে যে প্রকৃতি বিরাজ করে তার বিস্তৃতি
এই প্রকৃতির চেয়েও বিশাল। যার সীমান্ত কোন বদ্ধ প্রাচিরে
ঘেরা নয়। সকাল, দুপুর সন্ধ্যা আর রাত্রির মৌসুমী রঙ একই
রকম নয়। সেখানে ভিন্ন ভিন্ন আকাশ, ভিন্ন ভিন্ন সুর্য, ভিন্ন ভিন্ন
দিন, ভিন্ন ভিন্ন  সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা, রাত্রি বিরাজ করে। আর
সেই রাতের আকাশে অসংখ্য চাঁদ গড়াগড়ি খায়। কত বিচিত্র
তাদের স্বাদ, গন্ধ আর রঙ। তবুও ফিরে ফিরে একটি চাঁদের
কাছেই এ হৃদয় খুন হয়ে যায় সে তোমার চাঁদমুখ।


আমার প্রতিদিনের শহরের রাস্তাটুকু আর কতই বা দীর্ঘ হবে!
কয়েকটা মূল সড়কের সাথে শিরা উপশিরার মত কিছু অলি
গলি আর কোথাও কানা গলি। এর মধ্যেই আবাসিক এলাকা,
স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, কাঁচা বাজার, শপিং  মল, থিয়েটার
হল্‌, লাইব্রেরী, খেলার মাঠ আর ওয়াসার অভার হেড ওয়াটার
ট্যাংক- শহুরে চিহ্ন বহন করে দিন রাত দাঁড়িয়ে থাকে। তোমাদের
আবাসিক এলাকায় এখন মাল্টি স্টোরেড বিল্ডিংয়ের ছড়া ছড়ি।
কোথায় হারিয়ে গেলে তোমরা দেশ থেকে দেশান্তর কে জানে।


কিন্তু আমার মনের মধ্যে যে শহর বিরাজ করে তার সড়ক,
মহা সড়ক, রাস্তা, ঘাট, অলিগলি, কানাগলির শেষ নেই। সেই
সড়কের জাল ধরে আমি প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন  প্রেম ভালবাসা,
হাসি কান্না, মান অভিমান, বিরহ অভিসার নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন
কবিতার শব্দে হারিয়ে যাই। আমি ভিন্ন ভিন্ন জনপদে গিয়ে
অনায়াসে দাঁড়াই তাদের জীবন আর সংস্কৃতিকে নিগুঢ় ভাবে
পর্যবেক্ষন করার জন্য। কত বিচিত্র তাদের জীবন, কত আবেগে
জড়াতে চায় আমাকে। এত অসংখ্য সড়ক অথচ আমি বার বার
তবুও পথ হারা হয়ে যাই তোমার মনের চোরা গলিতে।