মেজর নজরুল যাঁর অনেক দীর্ঘ সহচার্য পেয়েছি অনেক বছর। এখন তিনি শুধুই স্মৃতি! তাঁর স্মরণে এইক কবিতা দিলাম কবি বন্ধুদের জন্য...
----------------------------------------------  


যখন কাছে ছিলে তখন একবারও একটি মুহুর্তের জন্যও
ভাবিনি কোন অবসরে একা বসে বসে,  
কি হবে আমার তুমি চলে গেলে না ফেরার দেশে।
ঘন সবুজ ঘাস অপার মমতায় তোমাকে ভালবেসে
জড়িয়ে আছে তোমার বুকের ‘পরে আলগা নতুন মাটি,
এখন মনে হয় চোখের জলে নিভৃতে যে কান্নাকাটি-
আর আকাশের শীতল তারার পানে চেয়ে থাকা,
শরতের বিষন্ন বৈরাগী বাতাস গায়ে মেখে একা একা
তোমাকে নিয়ে ভাবছি যে আকাশ সমান অজস্র কথা,
এ যেন এখন সবই মূল্যহীন প্রায় অযথা।


কি হবে ভেবে আর তোমার ভালো লাগত ডাহুকের ডাক,
আম গাছের বাঁকা ডালে ঝুলে থাকা মৌ-চাক,
ঘাসের মাথায় জমে থাকা শীতের সকালে শিশির জল,
শিউলী শেফালী শিমূল কৃষ্ণচূড়া করবী বকুল তল,
ভালবাসতে ভাপা পাটিসাপটা পাকান পুলি পিঠা,
রাতের গ্রাম্য চাঁদ মাথায় করে নির্জন কাঁচা সড়ক ধরে হাঁটা,
ভালবাসতে বিয়ে দেয়া বট-পাকুড় গাছের জড়াজড়ি বেঁচে থাকা,
এ সব গল্প এখন- সুখ দুঃখ বেদনার রঙ দিয়ে আঁকা।
উন্মুখতায় কখনও জিজ্ঞেস করি পাপড়ি নাচানো চোখের তারাকে,
উপেক্ষা করেছিল কিনা রুপের স্পন্দনে জাগা স্নিগ্ধ তোমার সাড়াকে।
জিজ্ঞেস করি ঠোঁটকে, জিহ্বাকে, জিজ্ঞেস করি শব্দ কন্ঠকে,
কোন ভাষা, ভালবাসা, স্বাদ,স্পর্শ কি ছিল অবহেলা কন্টকে!
জিজ্ঞেস করি হাত, পা, শরীর অথবা ফেলে আসা সকল পথকে,
স্মৃতির ঝুল ঝেড়ে সম্মুখে টেনে আনি আমাদের অনেক মত-অমতকে।
সুখ নয়, কেবল জানতে চাই তোমাকে কতটুকু দিয়েছি ব্যথা,
বরষার চোখ গলে কান্না উত্তর হেমন্তের আকাশ জানে কি সে কথা?
জানে কি ক্লান্ত রাত, নিঃশব্দে ঝরা শিশির, হামাগুঁড়ি দেয়া হুতম পেঁচা,
জানে কি সেই অচিন পাখি, যে উড়ে গেল শূন্য করে এ খাঁচা।


তাই মাঝে মাঝে এখন মনে হয়,
প্রতিদিন তোমাকে ছাড়া ভেতরে হচ্ছে তীব্র ক্ষয়।
এর চেয়ে অনেক অনেক করে ভালো হত,
লক্ষ লক্ষ হাজার গুন শত শত,
হতাম যদি তোমার বুকের আলগা মাটিতে গজে উঠা সবুজ ঘাস,
তাহ’লে আগামী দিনগুলিতেও আজীবন তোমার সঙ্গেই হত বসবাস।